বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
spot_img

সংস্কার নিয়ে সরকারের সাথে বিএনপির বিরোধ নেই : তারেক রহমান

অনলাইন ডেস্ক

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সংস্কার কর্যক্রম নিয়ে অন্তর্বতীকালীন সরকারের সাথে বিএনপির কোন মতবিরোধ নেই।

তিনি বলেন, ‘সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে অন্তর্বতীকালীন সরকারের সাথে বিএনপির কোন বিরোধ নেই। যারা নির্বাচন নাকি সংস্কার আগে দরকার তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন।’

তারেক রহমান আজ সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য এ কথা বলেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সংস্কার আগে, নাকি নির্বাচন? যারা সএমন প্রশ্ন তুলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চান তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। বিএনপি মনে করে, সংস্কার কার্যক্রম শেষ হওয়ার বিষয় নয়।’

তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে, সংস্কারের পাশাপাশি একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান অবশ্যই প্রয়োজন। কোনো সরকারই জনগণের ভোট ছাড়া ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।

তারেক রহমান বলেন, সংস্কার কার্যক্রম একজন শুরু করলে আরেকজন এগিয়ে নিয়ে যায়। কারণ সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। রাজনীতির গুণগত উত্তরণ ছাড়া প্রথাগত সংস্কার অর্থহীন।

তিনি বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে কমপক্ষে ছয়জন সাংবাদিক শহিদ হয়েছেন। পলাতক স্বৈরাচারের নির্দেশে কমপক্ষে দুই হাজারের বেশি ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের সংগঠনের প্রায় ৪০০ নেতাকর্মী এই লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একে অন্যের শত্রু। আমাদের চলমান গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করতে এই মুহূর্তে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। বিতাড়িত অপশক্তি আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না।

সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা একান্ত জরুরি মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরশাসকের সময় আমরা দেখেছি গণমাধ্যমের প্রতিটি শাখায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, লেখক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যেকোনো বিষয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে। এটি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু ভিন্নমতকে দমন ও দলাদলিতে পরিণত করলে কী হতে পারে তা গত দেড় দশকে দেশের জনগণ হাড়ে-হাড়ে টের পেয়েছে।

পালাতক স্বৈরাচারের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মন্ত্রী-এমপি কিংবা বায়তুল মোকাররমের খতিব, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের পলায়নের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে, অবৈধ রাষ্ট্রশক্তি নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণের রায়ই চূড়ান্ত।

তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষের সব শক্তি ও সাংবাদিকদের সতর্ক থাকা দরকার। চলমান গণতন্ত্রের যাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করতে নানা রকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।

বিতাড়িত স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা নানা কৌশলে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘অপশক্তি দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে গণতন্ত্রের স্বপক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির চেষ্টা করছে। তবে আমরা সবাই সতর্ক থাকলে দেশের স্বপক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না বলে আমি বিশ্বাস করি।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, পলাতক মাফিয়া সরকার বিগত দিনে বিএনপিসহ বিরোধী দলের হাজার-হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। শত-শত নেতাকর্মীকে গুম করেছে। গণঅভ্যুত্থানের সময় হাজার-হাজার ছাত্রকে হত্যা করেছে। কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। এই আন্দোলনে শুধু বিএনপির অঙ্গসংগঠনের ৪ শতাধিক নেতাকর্মী শহিদ হয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগকে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি জনগণের ভোটের রায়ের মধ্যদিয়ে বিদায় করতে হবে। ভোটের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেলেই জনগণ গণহত্যাকারী, খুনি, লুটেরা এবং তাদের দোসরদেরকে রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় করে দিতে পারবে।

তিনি বলেন, পলাতক স্বৈরাচার ও তার দোসররা যাতে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত না হতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করাও আমাদের কর্তব্য। সেজন্য আইনগত এবং রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তাদেরকে আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের রাজনৈতিক অধিকার চর্চার সুযোগ পায়। ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের মালিকানার সম্পর্ক তৈরি হয়।

গণতন্ত্রের পক্ষের সকল শক্তিকে সতর্ক থাকতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আর স্বাধীনতা একসঙ্গে যায় না। আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একে অপরের শত্রু। অপরদিকে বিএনপির কাছে গণতন্ত্র, বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিরাপদ।

তিনি বলেন, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী কিংবা সাধারণ মানুষের মধ্যেই যে কোনও বিষয়, ইস্যুতে দ্বিমত ভিন্নমত থাকতেই পারে। এটিই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সৌন্দর্য। ভিন্নমতকে শত্রুতা কিংবা নির্লজ্জ দলাদলিতে করলে কী পরিণতি হতে পারে তা গত দেড় দশকে জনগণ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে চলমান যাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে কিন্তু এরই মধ্যে নানারকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিতাড়িত স্বৈরাচার ও তাদের দোসর চক্র দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টির পায়তারা করছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতির বিদ্যমান অবস্থা-ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২২ সালে বিএনপি প্রথম ২৭ দফা সংস্কার উপস্থাপন করেছিল। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিকগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ২০২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করে বিএনপি।

তিনি বলেন, ‘বিএনপির উপস্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবে গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি অভিজ্ঞ মিডিয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটি মিডিয়া কমিশনের কথা বলা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করেছে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছি, সেখানে সাগর-রুনির বিচারের বিষয়ে রাষ্ট্র উদাসীন থাকবে না, নিশ্চিত থাকবে মানুষের বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা। এ লক্ষ্যে অর্জনে আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ‘স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশে’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যের শুরুতে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

একই সাথে তিনি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত সাংবাদিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

এ সময়ে ফ্যাসিবাদী আমলে চাকুরিচ্যুত সাংবাদিকদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন সংবাদপত্রের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমীর নরুল ইসলাম বুলবুল, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম এবং সাংবাদিক নেতা, কবি আবদুল হাই সিকদার ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ডিইউজে যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাঈদ খান।

এই বিভাগের সব খবর

পাহাড়তলী থানা লুটের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ২

৫ আগস্ট পাহাড়তলী থানায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় অস্ত্রসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পাহাড়তলী থানাধীন নয়াপাড়ার রেল বিটের পশ্চিম পাশ এলাকা...

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে

মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা চালিত পাওয়ার প্ল্যান্ট শুক্রবার থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা আমদানি করা হয়েছে। প্রক্রিয়াটির সাথে...

বাংলাদেশে নতুন গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ পরিকল্পনা শেভরনের

জ্বালানি খাতের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান শেভরন জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার করার প্রয়াসে বাংলাদেশে নতুন গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কোম্পানিটির...

সর্বশেষ

পাহাড়তলী থানা লুটের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ২

৫ আগস্ট পাহাড়তলী থানায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় অস্ত্রসহ...

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে

মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা চালিত পাওয়ার প্ল্যান্ট শুক্রবার...

বাংলাদেশে নতুন গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ পরিকল্পনা শেভরনের

জ্বালানি খাতের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান শেভরন জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার...

পানি, ভূমি, খাদ্য ও পরিবেশের আইনী স্বীকৃতি দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশের আহ্বান

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা...

চট্টগ্রামে হাসনাত-সারজিসের গাড়িবহরে ধাক্কা দেয়া ট্রাকের চালক ও হেলপার রিমান্ডে

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জুলাই...

চট্টগ্রাম নগরে বিএনপির সব থানা-ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত

চট্টগ্রাম নগরীর ১৫টি থানা ও ৪৩টি ওয়ার্ডের বিএনপির কমিটি...