ওঁরা জর্জিয়ার আপন জমজ দুই বোন।জন্মের পরপরই বিক্রি হয়ে গিয়েছিলো হাসপাতাল থেকে।তারপর কেটে গেছে ১৯ টি বছর।দু’জন দুই জায়গায় দুই পরিবারে বেড়ে ওঠে।কেউ জানতোই না তাঁর যে আরেকটি জমজ বোন আছে।কিন্তু নিয়তি এই দুই বোনের চিত্রনাট্য এমন ভাবেই লিখেছিলো,ওঁদের পাশাপাশি পুরো দুনিয়াই চমকে যাবে দুই বোনের গল্প শুনে।চলুন আমরাও জেনে আসি “আ্যামি” এবং “এ্যানো” নামের দুই বোনের গল্প।
দু’জনকে দেখতে একেবারে একই রকম।চোখ, কান, নাক, মুখের আদলে দু’জনের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বের করা দুষ্কর।সম্পর্কে তাঁরা একে অপরের যমজ বোন। অথচ ১৯ বছর দু’জন একে অপরকে চিনতেনই না!তার পর এক দিন দেখা হল,একে অপরের পরিচয় জানতে পেরে অবাক হলেন দু’জনেই।শুনতে সিনেমার গল্পের মতো হলেও বাস্তবে এমনই ঘটনা ঘটেছে।
পূর্ব এশিয়ার দেশ জর্জিয়া।সেই দেশেরই এক শহরের হাসপাতালে ২০০২ সালে জন্ম নেয় দুই ফুটফুটে কন্যা সন্তান।মা আজ়া শোনির কোল আলো করে আসে অ্যামি এবং অ্যানো।যমজ সন্তান জন্ম দেওয়ার পর থেকেই জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে কোমায় চলে যান আজ়া।সেই থেকে তিনি শয্যাশায়ী।এহেন পরিস্থিতিতে তাঁর ‘অসহায়’ স্বামী এমন এক সিদ্ধান্ত নেন,যা অ্যামি এবং অ্যানোর জীবন পুরো অন্য খাতে বইয়ে দেয়।তিনি ঠিক করেন মেয়েদের আলাদা আলাদা পরিবারে বিক্রি করে দেবেন।ফলে জন্ম থেকেই আলাদা হয়ে যান অ্যামি এবং অ্যানো।
তারপর ১২ বছর কেটে গেছে।অ্যামি এবং অ্যানো একই শহরে কয়েক মাইলের মধ্যে থেকেও কেউ কাউকে চিনতেন না।দু’জনেই ১১ বছর বয়সে একই নাচের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন,তা সত্ত্বেও কেউ ধরতে পারেননি যে অ্যামি এবং অ্যানো যমজ।জন্মের ১২ বছর পর একটি টিভি শো’তে অ্যামি দেখেন,ঠিক অবিকল তাঁর মতোই দেখতে এক মেয়ে নাচছেন।
যা দেখে বিস্মিত হন অ্যামি।ওই মেয়েটি কে, তা জানতে কৌতূহল জাগে তাঁর।অন্য দিকে অ্যানোর নজরে আসে হঠাৎই একটি টিকটক ভিডিও।সেখানে তিনি তাঁরই মতো দেখতে একটি মেয়েকে দেখেন।তারপরই শুরু হয় একে অপরের খোঁজ।এমনি করে কেটে যায় ১৯ বছর।১৯ বছর পর ‘পুনর্মিলন’ ঘটে দু’জনের,জানতে পারেন তাঁদের আসল পরিচয়।
অ্যামি জ়ুগদিদি শহরের খিভিতা পরিবারে বড় হয়েছেন। আর অ্যানো বড় হয়েছেন সারটানিয়া পরিবারে।এতো বছর পর একে অপরের পরিচয় জানতে পেরে যেমন অবাক হয়েছেন,ঠিক ততটাই খুশি হয়েছেন।তাঁদের এই গল্পের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক বড় উদ্বেগের বিষয়ও। কয়েক দশক ধরে জর্জিয়ার হাসপাতালগুলি থেকে শিশু চুরি এবং বিক্রির ঘটনা ঘটছে।অ্যামি এবং অ্যানো তেমনই এক ঘটনার শিকার।
(আনন্দবাজার অবলম্বনে)