প্রবাদ আছে,মাঘের শীত বাঘের গায়েও লাগে।মূলতঃ মাঘ মাসের শীতের তীব্রতা বোঝাতেই আমাদের লোক সমাজে কথাটির প্রচলন হয়েছিলো।এবার মাঘ মাসের শীত যেনো পুরনো প্রবাদকে মনে করিয়ে দিচ্ছে।শীতের তীব্রতায় দেশের উত্তরান্চল সহ দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের জীবন যাপন রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। হিমেল হাওয়া,কুয়াশা এবং বায়ু প্রবাহ মিলে শীতের অনুভূতি প্রবলতর করেছে।কোথাও কোথাও আছে শৈতপ্রবাহ। রাজশাহী ও উত্তরান্চলের কয়েক জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে এই অবস্থা আরো কয়েকদিন চলবে।
ছয় জেলায় শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস:- আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে ২১ জানুয়ারী রবিবার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে,কিশোরগঞ্জ,রাজশাহী,পাবনা,নওগাঁ,পঞ্চগড় ও কুঁড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।বুলেটিনে আরো বলা হয়েছে,মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।দেশের উত্তর-উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাতের তাপমাত্রা আরো হ্রাস পেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। রবিবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় রাজশাহী, পাবনার ঈশ্বরদী ও নওগাঁর বদলগাছীতে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা:- তীব্র শীতের কারণে ২১ জানুয়ারী রবিবার ও ২২ জানুয়ারী সোমবার রাজশাহীর মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।এছাড়া, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
২০ জানুয়ারি শনিবার রাতে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী। আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে,মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর হতে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক,রাজশাহী জেলার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকবে।ফলে রাজশাহী জেলার সব মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হলো। রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইদুল ইসলাম জানান,রবিবার একদিনের জন্য পাঠদান বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে।আবহাওয়া পরিস্থিতি দেখে নতুন সিদ্ধান্ত হবে। অপর দিকে জয়পুরহাটে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় জেলার সকল মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রবিবার ও সোমবার দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।জয়পুরহাট জেলায় আবহাওয়া অফিস নেই।তবে পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলার বদলগাছি আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুসারে, জয়পুরহাটের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়।এ কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, জয়পুরহাট জেলার সকল মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে রবিবার ভোর থেকে জয়পুরহাট জেলায় ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডার পাশাপাশি তাপমাত্র নেমে যাওয়ায় জেলার ১ হাজার ২৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৮৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২২২টি মাদরাসাসহ মোট ১ হাজার ৮৪৮টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ সময় শিক্ষার্থীদের বাসায় বসে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ। জেলায় রবিবার তাপমাত্রা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দুপুর পর্যন্ত বেশ ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে জেলা জুড়ে।দিনের অধিকাংশ সময় সূর্যের দেখা মিলছে না।বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্য কিছুটা উত্তাপ ছড়ালেও বিকাল হতেই তাপমাত্রা আবারও নিম্নগামী হচ্ছে। কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান,এরকম তাপমাত্রা আরো দু-একদিন অব্যাহত থাকতে পারে।v