কোনটা রেখে কোনটা দিয়ে শুরু করি? এমন বিড়ম্বনায় নিশ্চিত ভাবেই পড়েছেন আমার মতো বিশ্বের বহু স্পোর্টস রিপোর্টার আজকের কেপটাউন টেস্টের প্রথম দিনের রিপোর্ট করতে গিয়ে।সত্যি এক অদ্ভুত দিন ছিলো আজ ৩ জানুয়ারী ক্রিকেটের জন্য। বিরল রেকর্ড সমৃদ্ধ দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ভারতের মধ্য অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম দিনের গল্পটা চলুন শুরু থেকেই শুনি। সেঞ্চুরিয়নে হওয়া দুই দলের প্রথম টেস্টে বাজে ভাবে ইনিংস ও ৩২ রানের ব্যবধানে হেরে যাওয়া ভারতের কাছে আজ থেকে শুরু হওয়া কেপটাউন টেস্ট ছিলো সিরিজ বাঁচানোর লড়াই।
সেই লড়াইয়ে সূচনায় টসে জিতেন দক্ষিণ আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ও ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নামা ডিন এলগার।আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।যা হয়তো আজীবন ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে থেকে যাবে তাঁর হৃদয়ে। মোহাম্মদ সিরাজের বিধ্বংসী এক স্পেল ও বুমরাহ আর মনিশের যোগ্য সংগতে প্রথম দিনের প্রথম সেশনেই মাত্র ৫৫ রানে অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিকরা।যা কিনা ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ইতিহাসে প্রোটিয়াদের সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ড। ৯-৩-১৫-৬ ছিলো মোহাম্মদ সিরাজের বোলিং ফিগার! বুমরাহ ও মুকেশ বাকি চার উইকেট সমান ভাগ করে নেন। সিরিজে ফেরার এমন রিরল সুযোগ পেয়ে ভালোই তা কাজে লাগাচ্ছিলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা।১১১/৪ অবস্থায় চা বিরতিতে যাওয়া ভারত বিরতি শেষে ফিরে ১৫৩/৪ করার পরই কেপটাউনে যেনো সওয়ার হলো কোন অদৃশ্য জ্বীন। ভারতের ইনিংসের ৩৩.১ ওভার থেকে ৩৪.৫ ওভারের ১১ টি বল দেখুন। W 0 W 0 W 0 0 W 0 W ! হ্যাঁ,চার উইকেটে ১৫৩ থেকে ভারত অলআউট ঐ ১৫৩ রানেই।১৮৭৭ সাল থেকে শুরু হওয়া টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এমনটি আজই প্রথমবার ঘটলো!একই স্কোরে ছয় উইকেটের পতন!একই স্কোরে পাঁচ উইকেট হারানোর ঘটনা ইতিহাসে চারবার ঘটেছে।যাঁর সর্বশেষটি আবার বাংলাদেশের ঘাড়েই লেপ্টে ছিলো। হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৩৪/৫ থেকে ১৩৪ রানে অলআউট হওয়ার সেই ঘটনা ২০০২ সালের।কিন্তু একই স্কোরে ছয় উইকেটের পতন ইতিহাসে আজই প্রথম।সুনীল গাভাষ্কারের ভাষায়,বাংলাদেশকে লজ্জার হাত থেকে মুক্তি দিলো আজ ভারত! ৯৮ রানের লীড এই উইকেটে বেশ ভালোই মনে হচ্ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা তিন উইকেটে ৬২ রান করে যদিও তা কমিয়ে ৩৬ রানে নিয়ে এসেছে।প্রথম দিনের খেলা শেষে হিসেব করে দেখা গেলো দুই দল মিলিয়ে একদিনেই মোট ২৩ উইকেটের পতন দেখেছে আজ বিশ্ব ক্রিকেট! যদিও টেস্ট ইতিহাসে একদিনে ২৫ উইকেট হারানোর রেকর্ড আছে।
১৯০২ সালে অষ্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্টে ঐ উইকেটবৃষ্টি হয়েছিল। তবে একদিনে ২৩ উইকেট হারানোর এটি টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয়বার।আর কেপটাউনে দ্বিতীয়বার। হ্যাঁ,এই নিউল্যান্ডসেই দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার এক টেস্টে একদিনেই ২৩ উইকেট হারানোর ঘটনা ঘটেছিলো। ৩৬ রানে পিছিয়ে থাকা প্রোটিয়ারা শেষ পর্যন্ত কতদূর যাবে,এই টেস্ট কতো সময় স্থায়ী হবে ও আর কি কি রোমাঞ্চ অপেক্ষা করছে ক্রিকেটের জন্য,তা জানতে আপনাকে চোখ রাখতে হবে আগামীকাল টেস্টের দ্বিতীয় দিনে। সংক্ষিপ্ত স্কোর:-দক্ষিণ আফ্রিকা ৫৫ ও ৬২/৩(২য় ইনিংস)। ভারত ১৫৩/১০(৩৪.৫) বিঢ়াট কোহলি ৪৬,রোহিত ৩৯, রাবাদা,এনগিডি ও বার্গার তিনটি করে উইকেট।