সন্দ্বীপের প্রতিটি হিন্দু পাড়ার দিন ও রাতকে মুখরিত করে তুলছে বাংলার প্রাচীন ধর্মীয় সংস্কৃতি সন্যাস বা চৈত্রের ঢাকির দল ও মুখোশ ঢাক।প্রতিদিন রাত্রে বিভিন্ন মুখোশ লাগিয়ে সঙ সেজে বিভিন্ন দেবদেবীর লীলা প্রদর্শন বা অশুভ শক্তিকে বিনাসের দৃশ্যকে মঞ্চায়ন বা উপস্থাপন করা হচ্ছে চমৎকার আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে । তার মধ্যে রয়েছে দিনের বেলা সন্যাস বা সাদা ঢাক এবং রাত্রী কালীন দেবী দুর্গার অসুর বধ,রাধা কৃষ্ণের লীলা, কালির ঢাক ও রাম রাবনের যুদ্ধের কাহিনী।এ সমস্ত কিছু দেখতে রাত বিরাতে শতশত নারী পুরুষ ও ছেলে মেয়েরা প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে জড়ো হয়।এবং রাত কাটিয়ে দেয় তাদের পিছু হেঁটে। দিনের বেলা সাদা ঢাক বা সন্যাসে প্রায় ১৫-১৬ জনের দল একই রকম পোষাকে নেচে নেচে বিভিন্ন ভক্তিমুলক গান পরিবেশন করেন ।
রাত্রী বেলায় একেকজন বাঘ,হনুমান,রাক্ষস,বৃদ্ধ,বৃদ্ধা,পাগলা, পাগলি সাজে। আবার কেউ কেউ কার্তিক,গনেশ,লক্ষি,স্বরস্বতি ,রাক্ষস,মহাদেব সহ বিভিন্ন দেব দেবীর রুপে বর্নাঢ্য সাজে সেজে দলবদ্ধ হয়। সে মুখোশ লাগিয়ে বিভিন্ন অশুভ শক্তিকে বিনাসের জন্য যুদ্ধ করার অভিনয়ের মাধ্যমে অসুর বা অশুভ শক্তিকে বধ করার দৃশ্য দেখানো হয়। এবং দুর্গতি নাশিনী দুর্গা ও কালি মায়ের স্তব স্তুতি ও প্রার্থনা করতে থাকেন। অনেকে মুখোশ লাগিয়ে বিভিন্ন পশুর রুপ ধরে এমন অভিনয় করেন যে ছোট ছোট বাচ্চা ছেলে মেয়েদের কাছে সেটা বাস্তব রুপে ধরা দেয়। তাই আনন্দের পাশাপাশি অনেকে ভয়ও পেতে থাকে। পরে অভিনয় শেষে তাদের মুখোশ খুলে বাচ্চাদের আদর করে প্রকৃত রুপটা দেখানোর পর বাচ্চাদের বোকামীর ভীতি কাটতে থাকে।
আর এ সমস্ত দৃশ্য দেখে সকলে ব্যতিক্রম আনন্দ উপভোগ করে টাকা ও চাল উপহার দেন প্রনামী হিসেবে। সন্দ্বীপ টাউন জগন্নাথ দেবালয় এলাকার ঢাকির দলের সদস্যদের সাথে আলাপ করে জানা যায় এ বছর ইয়াংদের মধ্য এ সমস্ত সন্যাস বা ঢাকি প্রদর্শনের প্রবনতা বেড়েছে তাই অনেক গুলো দল মাঠে নেমেছে এবার।ছোট ছোট বাচ্চারাও নেমে পড়ছে এই সন্যাস প্রদর্শনে। এতে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীন ঐতিহ্য পুনঃরুদ্ধার বা আগের জায়গায় ফিরে আসছে বলে অনেকে মনে করছেন। তাই এটিকে ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন তারা। অনেকে বলছেন এসব দলগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করে টিকিয়ে রাখার কথাও।চৈত্রের শেষ দিন মহাদেব পুজার মাধ্যমে সমাপ্ত হবে এটি। সে পর্যন্ত প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে প্রদর্শিত হবে এ সন্যাস।