গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত। রেজি নং – ১৬৯

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী আজ

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন আজ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার লেখনী ধূমকেতুর মতো আঘাত হেনে ভারতবাসীকে জাগিয়ে দিয়েছিল। তিনি পরিণত হন বিদ্রোহী কবিতে। সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ, নিপীড়ন, অনাচার, বৈষম্য, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে অগ্নিকণ্ঠে সোচ্চার হয়ে কবি লিখে গেছেন অসংখ্য কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গান।
নজরুল ইসলাম ২৫ মে, ১৮৯৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতা কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।
কি প্রেম, কি দ্রোহ—তাঁর মতো কেউ বলেনি এতটা দরদ দিয়ে। তাঁর গান, কবিতা শুধু বাঙালিকে আনন্দই দেয়নি, লড়াই-সংগ্রামে জুগিয়েছে অনুপ্রেরণা। যেখানেই অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, অসাম্য—সেখানে উচ্চারিত হয় কাজী নজরুল ইসলামের নাম।
দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। বাবার অকালমৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম, মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। তবে নিজের দুঃখ নিয়ে নয়, তিনি জাতির দুঃখ-ক্লেশ, দৈন্য-লজ্জা ঘোচানোর জন্য ভাবতেন সব সময়।

কাজী নজরুল ইসলাম বিশ শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকে উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যর্থ অনুকরণ ও অনুসরণের কৃত্রিমতা থেকে আধুনিক বাংলা কবিতাকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে সফল। তিনিই রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার পথিকৃৎ।
তিনি ছিলেন চির প্রেমের কবি। প্রেম নিয়েছিলেন এবং দিয়েছিলেন। তিনি বিদ্রোহী কবি হলেও তার প্রেমিক রূপ ছিল প্রবাদপ্রতিম। এ কারণেই অনায়াসে এ কবি বলে গেছেন, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন, খুঁজি তারে আমি আপনায়।’ এছাড়াও একাধারে তিনি কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, শিশু সাহিত্যিক, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক, সাংবাদিক, গীতিকার, সুরকার, স্বরলিপিকার, গীতিনাট্যকার, গীতালেখ্য রচয়িতা, চলচ্চিত্র কাহিনিকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, সংগীত পরিচালক, গায়ক, বাদক, সঙ্গীতজ্ঞ ও অভিনেতা ছিলেন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখে গেছেন ২২টি কাব্যগ্রন্থ, সাড়ে ৩ হাজার মতান্তরে ৭ হাজার গানসংবলিত ১৪টি সংগীত গ্রন্থ, ৩টি কাব্যানুবাদ ও ৩টি উপন্যাস গ্রন্থ, ৩টি নাটক, ৩টি গল্পগ্রন্থ, ৫টি প্রবন্ধ, ২টি কিশোর নাটিকা, ২টি কিশোর কাব্য, ৭টি চলচ্চিত্র কাহিনিসহ অসংখ্য কালজয়ী রচনা।
জানা গেছে, কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৪১ সালের শেষ দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসা চলে লুম্বিনী পার্ক ও রাচি মেন্টাল হাসপাতালে। পরে ১৯৫৩ সালে ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে পাঠানো হয় তাকে। এই সময়ে একেবারেই বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। ফলে ১৯৫৩ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় নীরবে-নিভৃতেই কাটে তার জীবন।
তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থটি ১৯২২ সালে “অগ্নিবীণা “, যা অসামান্য সাফল্য লাভ করে। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘বিদ্রোহি’ প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি তাঁর ছোটগল্পের প্রথম খণ্ড, “বাইদার ড্যান” এবং “ইউগবানী” প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি তাঁর বিপ্লবী লেখার জন্য ‘বিদ্রোহী কাবি’ উপাধি পেয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন যে আগুন তার লেখার মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল: “আমিই চির বিদ্রোহী / আমি পৃথিবী ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করি / উচ্চ চিরকাল খাড়া এবং একা”।
সংসারের অভাব অনটনের জন্য অর্থ রোজগার করতে হলেও নজরুলের পড়ার আগ্রহ কমেনি। তার খুব ইচ্ছা স্কুলে পড়ার।
১৯১০ সালে নজরুল লেটোর দল ছেড়ে স্কুলে ভর্তি হলেন। রানিগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে পড়লেন কিছুদিন। তারপর ভর্তি হলেন মাথরুন হায়ার ইংলিশ স্কুলে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকরা তাকে বেশ পছন্দ করতেন। স্কুলে তিনি ছিলেন বেশ চটপটে স্বভাবের। লেখাপড়াতেও ভালো করার আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। কিন্তু নজরুলের দুঃখের শেষ নেই। লেখাপড়া করার মতো টাকা কোথায় তার। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর তাকে আবার রোজগারের জন্য কাজে নামতে হল।
এবার যোগ দিলেন বাসুদেবের কবিগানের দলে। কবিগানের দলে মুখে মুখে কবিতা বানিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের শোনাতে হয়। দুই দলের মধ্যে কবির লড়াইও চলে। কবিগানের দলে নজরুল বেশ নাম করলেন। কবিতা বানাতে আর গান গাইতে তো তার জুড়ি নেই।
কিন্তু হলে কী হবে। এই কাজে তেমন রোজগার নেই। নিজের পেট চালাতে হবে, সংসারেও টাকা পাঠাতে হবে। এরপর রেলওয়ের একজন গার্ডের খানসামা বা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করলেন কিছুদিন।
এরপর সেই কাজ ছেড়ে আরেকটু বেশি বেতনের আশায় আসানসোলে চা-রুটির দোকানে রুটি বানানোর কাজ নিলেন। এত কষ্টেও ভেঙে পড়েননি নজরুল। রুটির দোকানে কাজ করতেন আর ছড়া কবিতা লিখতেন।
১৯১৪ সালে এই দোকানে কাজ করার সময় আসানসোলের দারোগা রফিকউল্লাহ তাকে দেখলেন। নজরুলের সঙ্গে আলাপ করে, তার ছড়া কবিতা শুনে রফিকউল্লাহ বুঝতে পারলেন ছেলেটি প্রতিভাবান। তিনি নজরুলকে নিয়ে এলেন ময়মনসিংহের ত্রিশালে। এখানে দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করে দিলেন তাকে।
নিজের গ্রাম ছেড়ে এতদূরে ত্রিশালে তার মন ভালো লাগত না। একা একা গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। দেখতেন প্রকৃতির সৌন্দর্য।
১৯১৫ সালে তিনি ফিরে এলেন রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে। ভর্তি হলেন অষ্টম শ্রেণিতে।
১৯১৭ সাল পর্যন্ত এখানেই লেখাপড়া করলেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে এল। প্রিটেস্ট পরীক্ষা দিতে হবে। তার আগেই সুযোগ পেলেন সেনাবাহিনীতে। রোজগারের ভাবনা ঘুচল। তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়ে যুদ্ধে চলে গেলেন নজরুল।
নজরুল তার পুরো শৈশব-কৈশোর এভাবেই দুঃখের সঙ্গে লড়াই করেছেন। তবে হাল ছাড়েননি। আর কবিতা লেখাও কখনও ছাড়েননি। পরবর্তী জীবনেও তাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। আর্থিক কষ্ট ছিল। ছিল অনেকের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য।
তবে সেসবে দমে না গিয়ে তিনি সামনে এগিয়ে গেছেন। লিখে গেছেন অবিশ্রান্ত। শিশু কিশোরদের জন্যও অনেক কবিতা লিখেছেন তিনি।
জীবনে অনেক দুঃখ কষ্ট পেলেও তিনি কিন্তু মোটেই গোমড়ামুখো ছিলেন না। বরং ছিলেন দারুণ হাসিখুশি, চঞ্চল, ছটফটে একজন মানুষ। যখন হাহা করে হাসতেন তখন আশপাশের মানুষের মনেও ছড়িয়ে যেত আনন্দের রেশ।
কাজী নজরুল ইসলামের লেখা “চল চল চল” কবিতাটি বাংলাদেশের রণসঙ্গীত হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়। কবি নজরুলকে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় এনে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন। ১৯৭৪ সালের ৯ই ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে কবি নজরুলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রি “ডিলিট” প্রদান করা হয়। ১৯৭৫ সালে ২২শে জুলাই কবি অসুস্থ হলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চিকিৎসকের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানের জন্য পিজি হাসপাতালে (১১৭ নং কেবিন) স্থানান্তর করা হয়। অসুস্থ কবি ১৯৭৬ সালের ২৯শে আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে কবর দেওয়া হয়।

এই বিভাগের সব খবর

ফটিকছড়িতে বন কলা বিতরণ করে জেল হাজতে গেল এক ব্যক্তি

ফটিকছড়িতে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গের অপরাধে প্রদীপ কুমার নাথ প্রকাশ লক্ষণ বাবু নামে এক ব্যক্তিকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। সে উপজেলার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের হাজারীখিলের...

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় হেলিপকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার স্থান থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্যদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (২০ মে) কয়েক ঘণ্টা ধরে...

ইরানের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: অনুসন্ধান চলছে

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী একটি হেলিকপ্টার খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে রোববার ‘দুর্ঘটনার’ কবলে পড়েছে বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে। তারা আরো জানায়, অনুসন্ধান...

সর্বশেষ

ফটিকছড়িতে বন কলা বিতরণ করে জেল হাজতে গেল এক ব্যক্তি

ফটিকছড়িতে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গের অপরাধে প্রদীপ কুমার নাথ...

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় হেলিপকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার স্থান থেকে...

ইরানের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: অনুসন্ধান চলছে

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী একটি হেলিকপ্টার খারাপ আবহাওয়ার...

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে মিয়ানমারের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সাথে মিয়ানমারের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত অং...

বিএনপি নেতারা মানসিক ট্রমায় ভুগছেন : ওবায়দুল কাদের

বিএনপি নেতারা মানসিক ট্রমায় ভুগছে, সে কারণে আবোল তাবল...

অক্টোবরে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন

চট্টগ্রাম মহানগরে আওয়ামী লীগের ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটির...