করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা কিছুটা পেরিয়ে পুরনো রঙে ফিরল বাজেট উপস্থাপনা। গত দুই বছরের অনাড়ম্বর আয়োজনের পর এবার সংসদ ভবনে বাজেট পেশের দিন ছিল চেনা পরিবেশ। তবে সর্বত্র ছিল স্বাস্থ্যবিধি মানার বাধ্যবাধকতা। মহামারীর পর যুদ্ধের বাস্তবতায় দাঁড়িয়েও উন্নয়নের হারানো গতি ফেরার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারে বাজেটের শিরোনাম, ‘কভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। এটি বাংলাদেশের ৫১তম এবং মুস্তফা কামালের চতুর্থ বাজেট। বৃহস্পতিবার বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
এর আগে সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার বিশেষ সভায় বাজেট অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। দুপুরেই রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবন থেকে আসেন সংসদ ভবনে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংসদ কক্ষে একসঙ্গে হেঁটে ঢোকেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রীর হাতে ছিল মেরুন রঙের একটি ব্রিফকেস। নানামুখী চাপের মধ্যেও দেশকে মহামারীপূর্ব উন্নয়নের ধারায় ফিরিয়ে নিতে এবারের বাজেট পরিকল্পনা সাজিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
সাধারণত বাজেট পেশের দিনটি সংসদ ভবন জুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ। কিন্তু গত দুই বছরের চিত্র ছিল ভিন্ন। সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশে ছিল কড়াকড়ি। আর মূল ভবনে স্বল্প সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধিবেশনেও চিরচেনা সেই উৎসবের আমেজ দেখা যায়নি দুই বছর। সর্বত্র ছিলো কঠোর সতর্কতা। সংক্রমণ এড়াতে জনসমাগম ছিল নিয়ন্ত্রিত।
এমনিতে বাজেট উপস্থাপনের সময় সংসদ অধিবেশন কক্ষ পূর্ণ থাকে। তবে গত বছর সংসদে ছিলেন ১৭০ জনের মতো আইনপ্রণেতা। তার আগের বছর উপস্থিতি ছিল আরো কম, ৭৮ জন। এবার করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নেগেটিভ সনদ পাওয়া সব সংসদ সদস্যই অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। সব মিলিয়ে সংসদ কক্ষে ছিলেন ২৬০ জন আইনপ্রণেতা। সংসদ সদস্যদের মুখ ছিল মাস্ক ঢাকা। সংসদ ভবনে প্রবেশ থেকে শুরু করে এমপি লবিসহ সব প্রবেশ মুখে ছিল স্যানিটাইজার। যারাই সংসদে ঢুকেছেন প্রত্যেকের তাপমাত্রা মেপে দেখা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার জন্য নির্ধারিত গ্যালারিতে বসে বাজেট উপস্থাপনা দেখেন। অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার রাষ্ট্রপতির উপস্থিতির কথা সংসদকে জানান।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০ সালে বাজেট বক্তৃতা দিতে সময় নিয়েছিলেন ৪৭ মিনিট। গত বছর এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বাজেট উপস্থাপন করা হলেও নিজে পাঠ করেছেন সব মিলিয়ে ১৫ মিনিটের মতো। বাকি সময় পাওয়ার পয়েন্ট এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনায় তার বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
এবারো তিনি স্পিকারের অনুমতি নিয়ে স্বাগত বক্তব্য রেখে অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনায় বাজেট পেশ করেন। শুরুতে পাঁচ মিনিটের মতো বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী এবং শেষে দুই মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে কথা বলেন। সবমিলিয়ে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের বাজেট উপস্থাপনায় মাত্র সাত মিনিট তিনি বক্তব্য দেন।
দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট উপস্থাপনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। পরে স্পিকার বলেন তিনি চাইলে বসে পড়তে পারেন। পরে অর্থমন্ত্রী বসে বাজেট উপস্থাপন করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি আমার বাজেট বক্তৃতাটি অডিও ভিজুয়াল পদ্ধতিতে উপস্থাপন করবো। বাজেটে বিস্তারিত তথ্যাদি টেবিলে উপস্থাপিত রয়েছে। পঠিত বলে গণ্য করার জন্য অনুরোধ করছি।
বাজেট উপস্থাপনা শেষে অর্থমন্ত্রী অর্থবিল-২০২২ সংসদে উত্থাপন করেন। এরপর স্পিকার ১২ জুন বিকাল ৫টা পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন মুলতুবি করেন।
সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাজেট পেশের পর ১২ জুন ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা হবে। ১৩ জুন পাস হবে সম্পূরক বাজেট। এরপর নতুন অর্থবছরের বাজেটের ওপর আলোচনা করবেন সংসদ সদস্যরা। ২৯ জুন নতুন অর্থবছরের অর্থবিল পাস হবে। ৩০ জুন পাস করা হবে বাজেট, তা কার্যকর হবে জুলাইয়ের প্রথম দিন।
বাজেট উপস্থাপনের পরের দিন শুক্রবার বেলা ৩টায় ওসমানী মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থমন্ত্রী।