সন্দ্বীপে পাবলিক লাইব্রেরী আছে, নেই কোন পাঠক।কারন সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থিত জেলা পরিষদের পাবলিক লাইব্রেরির জরাজীর্ণ অবস্থা। নামফলক ও রঙবিহীন ভবনের ভেতরে বইয়ের আলমারী গুলো অনেকটা বই শুন্য,কিছু পুরনো বাঁধাই করা বই থাকলেও সেগুলো পড়ার অযোগ্য হয়ে আছে বেশীরভাগ।অপরদিকে পাঠকের অভাবে কর্তৃপক্ষের অবহেলা বেড়ে যাচ্ছে দিনদিন। তাই পাঠকরা বসে বই পড়ার মতো পরিবেশ অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। পড়ার টেবিল ও পুরো লাইব্রেরী হয়ে গেছে অগোছালো।রিসিপশনের গ্লাসও ভঙ্গুর অবস্থা।
অপরদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা স্কুল,কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয় ভিত্তিক বইয়ের অনুপস্থিতি সাধারন ছাত্রদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছে।২০০৬ সালে এই পাবলিক লাইব্রেরীর কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হলে তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা প্রনব কুমার ঘোষ জটিলতা এড়াতে সেটি তখন থেকে জেলা পরিষদ পরিচালনা করবে বলে ঘোষণা দেয়। তখন থেকে এই লাইব্রেরী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই স্থানীয়, কবি, লেখক, সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিকরা।এরপর থেকে আর এই লাইব্রেরীতে পাঠকের উপস্থিতি নেই।এখন সরকারী কিছু কর্মকর্তা সেখানে সাময়িক সময়ে পত্রিকা পড়তে বসেন বা বই ঘাটাঘাটি করে দেখেন কিছুটা শখের বসে। বাইরে থেকে আসা পাঠকরা এই দুর্দশা দেখে আফসোস করতে করতে ফেরত যায়।
দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর এই জরাজীর্ন অবস্থার উত্তোরণ ঘটাতে ও মানুষজনকে লাইব্রেরিমুখী করতে গতকাল ২০ এপ্রিল ২০২৫ সাবেক ছাত্রদল ও বর্তমান যুবদল নেতা নিঝুম খাঁন এর নেতৃত্বে অনেক ছাত্রদল ও যুবদল নেতৃবৃন্দ আলোচনায় বসেছেন উক্ত পাবলিক লাইব্রেরীতে। সেখানে বসে তারা লাইব্রেরীর সংস্কার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে ও বইয়ের সংখ্যা এবং দৈনিক পত্রিকাগুলো সেখানে রাখা নিশ্চিত করতে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দ্বারস্থ হবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। পাশাপাশি পাঠক সংখ্যা বাড়াতে ছাত্রদল, যুবদল, স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী ও সংস্কৃতি কর্মীদের সেখানে এসে বই পড়তে উৎসাহিত করছেন এবং তার জন্য নানান প্রচারনা চালাবেন বলেও সিদ্ধান্ত নেন তারা। যুবদল নেতা নিঝুম খাঁন বলেন আমরা ছাত্রদল কর্মীরা নিজেরা লাইব্রেরীমুখী হলে দলীয় আদর্শ ও দলের ইতিহাস জানতে পারবো তাহলে সভা সেমিনারে বক্তব্য প্রদান ও দলীয় কর্মী সৃষ্টির জন্য অন্যদের প্রভাবিত করতে পারবো। এই ব্যাপারে কয়েকজন সংস্কৃতি কর্মী বলেন পাবলিক লাইব্রেরিতে যথেষ্ট বই না পাওয়া এবং আধুনিকায়ন না হওয়া নিয়ে পাঠকদেরও অভিযোগ আছে বিস্তর।কারন গণগ্রন্থাগারটির খোলা রিডিং রুমে অনেকে বই পড়তে ইতস্তত বোধ করেন। পার্টিশান দিয়ে ২/৩ টি রিডিং রুম করলে পাঠক-সংখ্যা বেড়ে যেতো। তাতে বয়স্ক পাঠক ও টিনএজারদের মধ্যে একটা দুরত্ব বজায় রেখে পড়ার সুযোগ তৈরি হবে। অন্যদিকে সেটি সংস্কৃতি কর্মীরা পরিচালনা করলে সেখানে নানান সাহিত্য আড্ডা ও পাঠচক্র চলতো। একমাত্র সংস্কৃতি কর্মীরা পাঠাগার বাঁচিয়ে রাখতে পারে। তাই আবার নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করে পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা এখন সময়ের দাবী।
ছাত্রদের অভিযোগের মধ্যে রয়েছে প্রয়োজন অনুযায়ী বই না পাওয়া, নতুন প্রকাশিত প্রয়োজনীয় গ্রন্থের অপ্রতুলতা এবং পুরনো পরিচালনা পদ্ধতির কারণে লাইব্রেরি আকর্ষণ হারাচ্ছে। তারা বলছে ধরুন যে বইটা খুঁজছি, সেটা পাওয়া গেলোনা। কিন্তু এখানে খোঁজার একটা ব্যাপার আছে।উন্নত পাবলিক লাইব্রেরিতে বই খোঁজার নিয়ম হচ্ছে সার্চ কম্পিউটারে বইয়ের তালিকা ধরে খুঁজে নেওয়া।কিন্তু এখানোতো সে ব্যবস্থা নেই, সারাদিন বন্ধ থাকার পর হয়তো নির্দিষ্ট একটা সময় খোলা হয়।খোলা থাকলেও লোক থাকে না। তাছাড়া আমাদের এখনো লাইব্রেরি কার্ড করা হয়নি, ফলে বই নিয়ে (বাড়ি নিয়ে) পড়তে পারি না। কর্তৃপক্ষ সেগুলো নিশ্চিত করলে পাঠক বাড়তে পারে। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষ বিমুখ পাঠকদের লাইব্রেরীতে ফেরাতে কী করছে? এখনো যেটুকু পড়ার অভ্যাস আছে মানুষের সেটি আরো কিভাবে বাড়ানো যায়, সে চেষ্টা করতে হবে তাদের।