চট্টগ্রামের রাউজানে সন্দেহের বর্শবর্তী হয়ে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন হয়েছে। গত ১৫ মে (বুধবার) রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়ন ৭নম্বর ওয়ার্ডের খানপাড়া গ্রামের মমতাজ মিয়া সওদাগর প্রকাশ নানা মমতাজের বাড়িতে এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম সোহাগ আলম (৪৬)। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন নিহতের বড় ভাই সোনা মিয়া (৪৮), তার স্ত্রী পারভিন আক্তার, তার দুই ছেলে মো. তারেক (২২), মো. আশিক (২০)। নিহত সোহাগ আলম ও সোনা মিয়া উভয়ও একই এলাকার মৃত মমতাজ মিয়া সওদাগর প্রকাশ নানা মমতাজের ছেলে। তাদের উভয়ের পেশা কসাই।
মমতাজ মিয়ার দুই পরিবারের ১৯ সন্তানের মধ্যে এরা বড় পরিবারের সন্তান। পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোনা মিয়া ও সোহাগ আলমের সৎভাই সাহাবুদ্দিনের সাথে বিগত ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ ও ১ মে সোনা মিয়াসহ দুই ছেলের মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় সাহাবুদ্দিন বাদী হয়ে বিগত ২০২৩ সালের ২ মে মো.তারেক(২২), সোনামিয়া(৪৮), ননা মিয়া(৪২), মো.আশিক(২০), পারভিন আকতার (৪৫) বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোহাগ আলমকে এই মামলার ইন্ধনদাতা সন্দেহ প্রায় সময় গালিগালাজ করতেন সোনা মিয়ার পরিবার। গত ১৫ মে (বুধবার) ছিল এই মামলার হাজিরার দিন। সোনা মিয়ার পরিবার গং বিকালে আদালতে হাজিরা দিয়ে সোহাগ আলম গালিগালাজ করতে থাকেন। এবং ঘরে থাকা সোহাগ আলমের স্ত্রীর সাথে বিবাদে জড়াতে চেষ্টা করেন। বাড়ির অদূরে আমগাছের ছায়ায় বসে থাকা সোহাগ আলম তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়ার আওয়াজ শুনে বাড়িতে ফিরলে সোনা মিয়া, তার ছেলে তারকে ও আশিক দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সোহাগ আলমের উপর হামলা চালান। সোহাগ আলম হামলা হতে বাঁচতে তার ছোট ভাইয়ের ঘরে আশ্রয় নিলে সেখানে তারা ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দ্বারা কসাইয়ের মত মারাত্মকভাবে সোহাগকে জখম করেন। ঘরে বাইরে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এতে সোহাগ আলম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই বুধবার রাত ১০ টার দিকে তিনি নিহত হন। এই ঘটনায় নিহত সোহাগ মিয়ার স্ত্রী গুলিয়ানার আক্তার ও তার সৎ ভাই শাহেদ ও তার স্ত্রী কোহিনুর আক্তার আহত হয়েছেন। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঘটনার পরপরই রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ন কবির, রাউজান থানার ওসি জাহিদ হোসেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন ও চুয়েট ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শেখ জাবেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পাহাড়তলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন বলেন, তুচ্ছ ঘটনায় বড় ভাইয়ের হতে ছোট ভাই খুন বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মামলা দায়ের করেছেন। রাউজান থানার পুলিশ সুকৌশলে আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন। সোহাগ আলমের পরিবার যাতে সুষ্ঠু বিচার পায় তার সকল প্রকারের সহযোগিতা করে যাব। রাউজান থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই অজয় দেব শীল এই ঘটনায় মামলা দায়ের ও আসামী গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহত সোহাগ মিয়ার স্ত্রী গুলিয়ানার আক্তার বলেন, আমার স্বামীকে সোনা মিয়া ও স্ত্রী ছেলেরা আমার চোখের সামনে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি তাদের ফাঁসি চায়। আমি আমার দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে কিভাবে থাকব। ১৬ মে সোমবার বেলা ৩ টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। এই তার স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। এইদিন বাদে আসর জানাজা শেষে ইমাম গাজ্জালী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। মা বাবার পরের স্থান বড় ভাইয়ের। সেখানে সন্দেহের বর্শবর্তী হয়ে স্ত্রীর ইন্ধনে ছোট ভাইয়ে খুন করা খুবই দুঃখজনক। এটা সমাজের কারো কাম্য নয়। ### ছবি ক্যাপশন : রাউজান(চট্টগ্রাম): বড় ভাইয়ের হাতে নিহত সোহাগ আলম (৪৬)। রাউজান (চট্টগ্রাম): ছোট ভাইকে খুনে অভিযুক্ত সোনা মিয়া, তার ছেলে মো তারেক, মো. আশিক ও স্ত্রী পারভিন আক্তার।