গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত। রেজি নং – ১৬৯

লাভের আশায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মাঠে ৩৯ হাজার লবণ চাষী 

দেশের একমাত্র লবন উৎপাদন কারী জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে এবার লবনের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া নানা সুযোগ সুবিধা ও সরকারী বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।
জানাযায় চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে লবন মৌসুমে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা এবং কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেষখালী, কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলার প্রায় সাড়ে ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিকটন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নামেন প্রায় ৩৯ হাজার ৪৮৭ জন লবণ চাষী। গত অর্থবছরের মতোই লাভের স্বপ্ন নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনায় চাষীরা এবারে ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে চাষ করছেন। ইতোমধ্যে চাষীরা নতুন মৌসুমের কয়েক চালান লবণ তুলেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে নির্ধারিত সময়েই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে,চাষীদের মাঝে ভয় ও কাজ করছে। মৌসুমের ফাঁকে যদি কোন কারণে লবণ আমদানী করা হয়- তখন উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার সম্ভাবনায় বেশী। এমনটি হয়ে থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের একমাত্র স্বয়ং সম্পূর্ণ খাত লবণ শিল্প।
লবন উৎপাদনে সংশ্লিষ্টদের দাবি, একটি মধ্যস্বত্বভোগী সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ভুল বুঝিয়ে লবণ আমদানীর পায়তারা করতে পারে। গত ৩০ অক্টোবর চলতি লবণ মৌসুম শুরুর পর হতে  চট্টগ্রামের দু’উপজেলায় ও কক্সবাজারের ৬ উপজেলায় লবণ চাষে পুরোদমে মাঠে নেমেছে প্রান্তিক চাষীরা। বর্তমানে জেলার বাঁশখালী ও কক্সবাজারের চকরিয়া, কুতুবদিয়া এবং অন্যান্য এলাকায় কয়েক হাজার মেট্টিনট্রন লবণ ইতোমধ্যে উৎপাদন হয়েছে। আগামী জুন মাস পর্যন্ত চলবে লবনের উৎপাদন।
জানা গেছে, ধানকাটা শেষ হওয়ার পর পরই লবণ চাষে নামার কার্যক্রম শুরু হয়। গত মৌসুমে লবণের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় এবারো আশা নিয়ে মাঠে নেমেছেন হাজারো চাষী। শ্রমিক ও প্রয়োজনীয় আনুষাঙ্গিক সামগ্রীসহ মাঠে গিয়ে ধর্মীয় নীতি মেনে লবণ চাষের কাজ উদ্বোধন করেন চাষীরা। মৌসুমের শুরুতে প্রথম লবণ উৎপাদন হয় বাঁশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলায়। পলিথিনে উৎপাদিত লবণ বিক্রি হয়েছে মন প্রতি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়।
কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী ও ঈদগাঁওর পোকখালী এবং গোমাতলীতে গিয়ে দেখা গেছে, চাষীরা মনোযোগী হয়ে মাঠে কাজ করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষীরা আনন্দে লবণ উৎপাদনে সময় ব্যয় করছেন।
অনেক চাষী ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশে লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্র চট্টগ্রামের বাশঁখালী ও কক্সবাজার জেলা।  এখানকার উৎপাদিত লবণ নিয়ে সারাদেশের মানুষ খাওয়ার পর বিদেশেও রপ্তানী করা যায়। কিন্তু সরকারকে একশ্রেনীর দালালচক্র ভুল বুঝিয়ে লবণ আমদানী করে দেশীয় লবণের ক্ষতি করছে।
 উজানটিয়ার লবনচাষী  জসিম উদ্দীন বলেন, পেকুয়ার রাজাখালী, মগনামা, উজানটিয়া,কক্সবাজারের খুরুশকুল, চৌফলদন্ডী, ঈদগাঁওর পোকখালী, গোমাতলী, মহেশখালীর প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন, চকরিয়া, টেকনাফসহ উপকূলীয় এলাকায় লবণ চাষীরা পুরোদমে মাঠে লবন উৎপাদন করছেন। যেকোন মূল্যে দেশের চাহিদা মতো লবণ উৎপাদনই আমাদের লক্ষ্য। তবে, সরকারের কাছে দাবি কোন চক্র যেন বিদেশী লবণ আমদানী করতে না পারে।
চৌফলদন্ডীর জিয়াবুল হক বলেন, একজন শ্রমিক এক একর জমি চাষ করতে পারে। চলতি মৌসুমে একর প্রতি জমি লীজ নিতে হয়েছে ৭৫ হাজার টাকায়। পুরো মৌসুমে একজন শ্রমিকের মূল্য এক লাখ ১০ হাজার টাকা। মৌসুম শেষ করা পর্যন্ত খাবার, পলিথিন মিলিয়ে খরচ হবে এক লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে একরে ৭৫০ মণ লবণ উৎপাদন সম্ভব। শুরু হতে মৌসুম শেষ পর্যন্ত গড়ে ৫০০ টাকায় লবণ বিক্রি সম্ভব হলে একরে উৎপাদিত লবণে আয় হবে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। আর কোন কারণে লবণ উৎপাদন হলে দেশি লবণের দাম পড়ে গেলে সকল লবণচাষীকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। লবণই একমাত্র পণ্য যা দেশে চাহিদা মেটানোর পরিমাণ উৎপাদন হয়। তাই কেউ মিথ্যে তথ্যে যেন বিদেশ থেকে লবণ আমদানীর সুযোগ না পায়, তা নিশ্চিত করতে বাণিজ্য ও প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি তৃণমূল চাষীরা।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ মৌসুমে দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে ২৫ দশমিক ২৮ লাখ মেট্রিক টন। ২০২৩-২০২৪ মৌসুম শুরুতে মাঠ পর্যায়ে লবণ মজুদ ছিল ১ দশমিক ৬০ লাখ মেট্রিক টন। ২০২২-২০২৩ মৌসুমে দেশে লবণের চাহিদা ছিল ২৩ দশমিক ৮৫ লাখ মেট্রিক টন। এ মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয় ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন। ২০২১-২০২২ মৌসুমেও উদ্ধৃত উৎপাদন ছিল। এ মৌসুম ও গত মৌসুমে জমির পরিমান ছিল ৬৩ হাজার ২৯১ একর। ২০২৩-২৪ মৌসুমে লবণের মূল্য নির্ধারণ হয়েছে মণ ৫২৬ টাকা। বিসিকের বৃহৎ লবণ কেন্দ্র রয়েছে-কুতুবদিয়ার লেমশি খালী, উত্তর নলবিলা, মহেশখালীর গোরকঘাটা, মাতারবাড়ি, ঈদগাঁওর গোমাতলী, সদরের চৌফলদন্ডী, পেকুয়ার দরবেশকাটা, চকরিয়ার ডুলাহাজারা ও ফুলছড়ি, টেকনাফ, বাঁশখালীর পুর্ব বড়ঘোনায়।
লবণচাষীরা জানান, দুই ধরনের পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে একটি হলো সনাতন পদ্ধতিতে কালো লবণ উৎপাদন, অপরটি হলো পলিথিনের মাধ্যমে সাদা লবণ উৎপাদন। চাষীরা জানান, পলিথিন পদ্ধতিতে লাভবান হওয়ায় এখন এ পদ্ধতির চাষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ছনুয়া এলাকার লবণচাষী জোবাইদ ও এহছান জানান, লবণের চাষ এবারো প্রতিবছরের ন্যায় খুব ভাল হয়েছে। প্রতি খানি জমিতে লবণ চাষে খরচ হয় প্রায় নব্বই হাজার থেকে একলক্ষ  টাকার ও অধিক। এতে দেখা যায় অনেক সময় লাভ এবং লোকসান হয়। সরকার যদি বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকায় উৎপাদিত এসব লবণ দেশের সর্বত্র রপ্তানিতে সহযোগিতা করেন তাহলে এখানকার লবণ চাষীরা আরো বেশী উপকৃত হবে।
এ ব্যাপারে ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বলেন, ছনুয়া এলাকার অধিকাংশ মানুষ লবন চাষ করে থাকে । যুগ যুগ ধরে এই ইউনিয়ের অধিকাংশ মানুষ কম খরচে লাভ বেশি তাই  লবন চাষ করে থাকেন। এই ইউনিয়ন টি লবণ শিল্প বল্লেই চলে।
এদিকে বাঁশখালী বিসিক ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্মকর্তা আনছারুল করিম বলেন, বাঁশখালী উপজেলায় চলতি মৌসুমে সাড়ে ৮ হাজার একর মাঠে লবণ উৎপাদন শুরু করেছেন প্রান্তিক চাষীরা। তার মধ্যে ছনুয়া, পুঁইছুড়ি, শেখেরখীল, গন্ডামারা, সরল, বাহারচড়া ও খানখানাবাদ ইউনিয়নের আংশিক এলাকার প্রায় ৫-৬ হাজার চাষী লবণ উৎপাদন শুরু করেছেন। চলতি মৌসুমে বৃষ্টি হয়েছে কিছু সময়ের জন্য। এ জন্য লবণ উৎপাদন ৩ থেকে ৪ দিন বন্ধ হতে পারে। এরপর পুরোদমে লবণ উৎপাদন করতে পারবেন লবণচাষিরা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিসিক) লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় কক্সবাজারের পরিদর্শক (উন্নয়ন) মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী জানান, নভেম্বর মাসের শুরুতে বর্ষার ধানের চাষ উঠে যায়। এরপর লবণের মাঠ তৈরিতে নামে লবণ চাষীরা। মৌসুম চলাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টি না হলে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লবণ চাষীরা বেশ উপকৃত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। গত বছর লবণের ন্যায্যমূল্য পেয়ে প্রান্তিক চাষিরা ফুরফুরে মেজাজে মাঠে নেমেছে। গত বছরের চেয়ে এবছর লবণের গড়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২৬ টাকা

এই বিভাগের সব খবর

ফটিকছড়িতে দায়ের কোপে ‘বৈদ্য’কে হত্যা,অভিযুক্ত হত্যাকারি গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে দায়ের কোপে নুর হোসেন (৮০) নামে এক 'বৈদ্য'কে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আবু তাহেরকে (৬০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দিনগত...

বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবায় থাই বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কের পাশাপাশি হাসপাতাল ও চিকিৎসা সেবা খাতে বিনিয়োগ অন্বেষণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশী স্বাস্থ্য...

ঢাকা-ব্যাংকক রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করবে

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ও থাই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক থেকে বেরিয়ে...

সর্বশেষ

ফটিকছড়িতে দায়ের কোপে ‘বৈদ্য’কে হত্যা,অভিযুক্ত হত্যাকারি গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে দায়ের কোপে নুর হোসেন (৮০) নামে এক...

বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবায় থাই বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক...

ঢাকা-ব্যাংকক রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করবে

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড রোহিঙ্গা...

ঢাকা ও ব্যাংকক পাঁচটি দ্বিপাক্ষিক নথি স্বাক্ষর করেছে

বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড আজ দুই দেশের মধ্যে ভিসা অব্যাহতি,...

বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বাণিজ্য...

ফটিকছড়িতে চলছে হক কমিটির শরবত বিতরণ কার্যক্রম

তীব্র তাপদাহের কারণে শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী...