আপনি যদি আজ ক্রিকেট বিষয়ক পৃথিবীর কোন না কোন মাধ্যমে উঁকি দিয়ে থাকেন,তাহলে নিউজিল্যান্ডের তরুণ বিষ্ময় রাচিন রবীন্দ্রকে নিয়ে স্তুতি দেখে থাকবেন নিশ্চয়ই।কেননা রাচিনের কীর্তি এটাই গণমাধ্যমের নিকট” ডিজার্ভ “করে। সাদাচোখে দেখলে রাচিন রবীন্দ্র ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত হওয়া সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে।টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি আহামরি পারফরম্যান্স হিসেবে এখন আর দেখা হয়না,আর প্রায়শঃই এটা হয়ে থাকে।দুইদিন আগে ভারতের তরুণ জশওয়ালও ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন।সেই টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসটি জশওয়াল শো হবার পরেও দুই ইনিংসে ৯ উইকেট নিয়ে টেস্ট সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন বুমরাহ।জশওয়াল নন।
এসব সাদাচোখে দেখা কথামালা।কিন্তু বিশ্বের সকল স্পোর্টস মিডিয়ায় তবুও রাচিন স্তুতি করেছেন বিভিন্ন ভাবে সাবেক গ্রেট ক্রিকেটার ও নামকরা ক্রীড়া সাংবাদিকগণ।আগেই বলেছি রাচিনের কীর্তি মিডিয়ার কাছে এটাই ” ডিজার্ভ” করে।কেনো,তা জানতে পরিসংখ্যান,উইকেট,ম্যাচ পরিস্থিতি সর্বোপরি পারফরম্যান্সের ধরণ সম্পর্কে জানতে হবে। কিউই এই তরুণের ওয়ানডে ক্রিকেটে তাঁর যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন গত ওডিআই বিশ্বকাপে।তাঁর টেস্ট অভিষেক হয় মূলতঃ টুকটাক ব্যাটিং জানা একজন কোয়ালিটি স্পিনার হিসেবে।এই টেস্টের আগে রাচিন কখনোই টপ সিক্স ব্যাটারের একজন হয়ে নামার সুযোগ পাননি।তাঁর টেস্ট ব্যাটিং ক্যারিয়ার মাউন্ট মঙ্গুইনের আগে ছিলো ছয় ইনিংসে ১৪.৬০ গড়ে মোট ৭৩ রান! এই টেস্টে রাচিনকে চার নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হয়, এমনই এক পরিস্থিতিতে,যখন উইকেট ও কন্ডিশনকে ব্যবহার করে দক্ষিণ আফ্রিকার অনভিজ্ঞ কিন্তু দারুণ সম্ভাবনাময় পেসারদের বল খেলতে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন ডেভন কনওয়ে ও টম ল্যাথাম।আর সময়ের সেরা তিন টেস্ট ব্যাটারের একজন কেন উইলিয়ামসন উইকেটে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
রাচিন উইকেটে এসে মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলটিকে ছক্কায় পাঠিয়ে রীতিমতো পরিস্থিতি বিরুদ্ধ আচরণ করে বসেন।তারপর গতকালের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে শতক তুলে নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার গল্প সবাই জানেন। দ্বিতীয় দিনে কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে রাচিন রবীন্দ্র গতকালের দুই উইকেটে ২৫৮ আর জুটির ২১৯ থেকে শুরু করে বেশিদূর যেতে পারেননি।দলীয় ২৭১ রানে আগের দিনের রানের সাথে ৬ রান যোগ করে ব্যক্তিগত ১১৮ রানে কিউইদের তৃতীয় উইকেট হয়ে আউট হন কেন উইলিয়ামসন।অনন্তকাল ধরে প্যাড পড়ে থাকা ড্যারিল মিচেল অবশেষে নামার সুযোগ পান। সকালের শুরু থেকে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ক্রিকেট খেলছিলেন রাচিন,যা তাঁর প্রতিটি শটে যেনো ঠিকরে পড়ছিলো।টানা দুটো ষ্ট্রেইট ড্রাইভে মারা বাউন্ডারীতে ব্যক্তিগত ১৫০ পূর্ণ করেন।দলীয় ৩৭৪ রানে ব্যক্তিগত ৩৪ রানে মিচেল আউট হলে চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে কিউইদের।ততক্ষণে দুজনের জুটিতে ১০৩ রান উঠেছে। রাচিনের ইনিংসে কোন সময়েই নার্ভাসনেস ছিলোনা। মিচেল আউট হবার সময় থেকে অদ্ভুত এক পরিস্থিতি পার করতে হয় রাচিন ও খেলা দেখা দর্শকদের। মিচেল আউট হবার সময় রাচিন অপরাজিত ১৯৯ রানে।অভিষেক সেন্চুরিকে ডাবলে পরিণত করা চতুর্থ নিউজিল্যান্ড ব্যাটার হিসেবে নিজের নাম তুলতে এক রান দরকার।টম ব্লান্ডেল উইকেটে আসেন।১৪ বল উইকেটে থাকেন,একটি বাউন্ডারি মারেন,ডাবলস নেন, ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেলস নেন তারপর ব্যক্তিগত ১১ রানে আউট হয়ে ফিরেও যান।সবই করেন কিন্তু রাচিনকে ষ্ট্রাইক দিয়ে তাঁকে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ন করার সুযোগটা দেওয়া বাদে।ব্লান্ডেল আউট হবার পরই বেরসিক আম্পায়ার ড্রিংকস ব্রেক দেন! ড্রিংকস শেষে স্ট্রাইকে গ্লেন ফিলিপস সিঙ্গেলস নিতে দেরি করেননি।অস্বস্তিকর ২৩ মিনিটের অপেক্ষা শেষে সিঙ্গেলস নিয়ে হেলমেট খুলে দর্শকদের দিকে উদযাপন করছিলেন রাচিন,ততক্ষণে মাউন্ট মঙ্গুইনের সকলেই দাঁড়িয়ে দীর্ঘ করতালিতে রাচিনকে তাঁর কীর্তির যোগ্য সম্মান জানান।বাদ যাননি প্রতিপক্ষের ক্রিকেটাররাও।
ফিলিপসকে নিয়ে দ্রুত ৮২ রানের জুটি গড়ে দলের ষষ্ঠ উইকেট হয়ে রাচিন রবীন্দ্র যখন ফিরছিলেন,দলের রান তখন ৪৭৩।আর রাচিনের নামের পাশে ২৪০ রান,৩৬৬ বলে ২৬ টি চার ও তিনটি ছক্কায় গড়া ইনিংসটি সেই চার কিউই ব্যাটারের তালিকার এক নম্বরে জ্বলজ্বল করছিল,যাঁরা তাঁদের অভিষেক সেন্চুরীকে ডাবলে পরিণত করেছেন।এতোদিন একে থাকা ২১৪ রান করা ম্যাথু সিনক্লেয়ার দুই নম্বরে নেমে আসেন।দক্ষিণ আফ্রিকার একইসাথে টেস্ট ও অধিনায়কের অভিষেক হওয়া নিল ব্র্যান্ড ১১৯ রানে ছয় উইকেট নেন। ৫১১ রানে অলআউট হওয়ার পর বোলিংয়ে নেমে বিশেষ করে কাইল জেমিসনের দারুণ বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার খেলা ২৮ ওভারে ৮০ রানে চার উইকেট তুলে নিয়ে দিনশেষে চালকের আসনে বসে পড়ে নিউজিল্যান্ড। সংক্ষিপ্ত স্কোর:- নিউজিল্যান্ড (১ম ইনিংস) ৫১১/১০ রাচিন রবীন্দ্র ২৪০,কেন উইলিয়ামসন ১১৮। নিল ব্র্যান্ড ৬/১১৯। দক্ষিণ আফ্রিকা(১ম ইনিংস) ৮০/৪(২৮.০) কাইল জেমিসন ২/২১। (দ্বিতীয় দিন শেষে)