এশিয়ান কাপ ফুটবলের সেমিফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়লো বাহরাইন,আর রীতিমতো স্বপ্নিল ফুটবল খেলে অস্ট্রেলিয়ার নিশ্চিত জয় কেড়ে নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়াও সেমিফাইনালে উঠে গেলো।কাতারে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাপ ফুটবলের দুটো কোয়ার্টার ফাইনাল বিশেষ করে দ্বিতীয় খেলায় মুখোমুখি হওয়া অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার খেলা দর্শকদের স্নায়ুর চরম পরীক্ষা নিয়েছে। ২ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে পাঁচটায় আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়ামে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে বাহরাইনের মুখোমুখি হয়ে আগেই ইতিহাস হয়ে যাওয়া তাজিকিস্তান অদৃশ্য কোন জাদুবলে সেই ইতিহাসকে রুপকথায় পরিণত করতে চলেছিলো যেনো। নইলে তেইশ ধাপ পিছিয়ে থাকা দলটি কেনো খেলার শুরু থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিবে? তাজিকিস্তান একের পর এক আক্রমণে উঠছিলো আর তা দক্ষতার সঙ্গে সামলে নিচ্ছিলো বাহরাইনের রক্ষন।
এটাই ছিলো প্রথমার্ধের ছবি। গোলশূন্য দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেশ কয়েকবার বাহরাইন তাজিকিস্তানের সীমানায় আক্রমণে ওঠে।৬৬ মিনিটের সময় তেমনই এক আক্রমণ থেকে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে জড়িয়ে দেন তাজিক ডিফেন্ডার খানোবভ।ধারার বিপরীতে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় বাহরাইন।খেলার বাকি সময়ের গল্প তাজিকদের আক্রমণ আর বাহরাইনের সূদৃঢ় রক্ষন।শেষ পর্যন্ত ঐ লীড ধরে রাখতে সমর্থ হয়ে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথম বারের মতো সেমিফাইনালে ওঠার বুনো আনন্দে মেতে ওঠেন বাহরাইনের খেলোয়াড় ও সমর্থকরা। আর হেরে গিয়েও দর্শকদের মন জয় করে টূর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় প্রথমবার এশিয়ান কাপ ফুটবলের চুড়ান্ত পর্বে খেলা তাজিকিস্তান। রাত সাড়ে নয়টায় আল জানিউব স্টেডিয়ামে আসরের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হওয়া দুই দলই শিরোপা জেতার মিশন নিয়ে এসেছিলো।যেকোন এক দলকে বিদায় নিতেই হবে।এটা যে অনেক উত্তেজনায় ভরপুর একটি ম্যাচ হবে তা অনুমিতই ছিলো। কিন্তু না।আসলে তেমন কিছু হয়নি মাঠের লড়াইয়ে।শুরু থেকেই দারুণ ফুটবলের প্রদর্শনী মেলে ধরেছিলো ক্লিন্সম্যানের শিষ্যরা।একচেটিয়া ফুটবল খেলছিলো দক্ষিণ কোরিয়া।কিন্তু গোল পাচ্ছিলোনা তাঁরা।উল্টো ৪২ মিনিটের সময় কাউন্টার এ্যাটাক থেকে গুডউইন গোল করে বসলে অপ্রত্যাশীত ভাবে ০-১ গোলে পিছিয়ে পড়ে দক্ষিণ কোরিয়া।ঐ স্কোরেই বিরতিতে যাওয়া দুই দল দ্বিতীয়ার্ধে নেমে বিপরীত কৌশলে খেলতে থাকে। অসিদের লক্ষ্য ছিলো যেভাবেই হোক লীডটা ধরে রেখে খেলা শেষ করা,আর দক্ষিণ কোরিয়ার লক্ষ্য যেকোনো মূল্যে সমতায় ফেরা। নব্বই মিনিট শেষে অসিরা সফল।যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে বদলে যায় ম্যাচের রং।অস্ট্রেলিয়ার বক্সের বাইরে ফ্রি কিক পায় দক্ষিণ কোরিয়া।কিক নেন ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হিউ মিন সন।অস্ট্রেলিয়ার রায়ান ডাইভ দিয়ে ক্লিয়ার করতে গেলে বল তার ডান হাতে লাগে।পেনাল্টি পায় দক্ষিণ কোরিয়া।হিউ হোয়াং ঠান্ডা মাথায় গোল করে সমতায় ফেরায় দলকে। সমতায় ফিরে যেনো আরও তেঁতে ওঠেন দক্ষিণ কোরিয়ান ফুটবলাররা।অস্ট্রেলিয়ার উপর দিয়ে যেনো আক্রমণের সাইক্লোন বয়ে যাচ্ছিলো।অতিরিক্ত সময়ের ১৪ মিনিটের সময় হিউ মিন সন অবিশ্বাস্য একটা গোল করে ম্যাচের ষোলআনা পূর্ণতা এনে দেন।
পুরো ১২০ মিনিটে ২৭% বলের দখল রাখা দলের জয়টা হতো খেলার অন্যায়্য ফলাফল।পুরো খেলায় দারুণ নৈপুণ্য দেখানো হিউ মিন সনের গোল না পাওয়াটা হতো দূর্ভাগ্যজনক।শেষ পর্যন্ত কোনটিই হয়নি।গোল হজমের পরের মিনিটে লাল কার্ড পেয়ে আন্দ্রে ও নেইল বেড়িয়ে গেলে দশজনের অসিদের পক্ষে আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি সমতায় ফেরা।যোগ্য দল হিসেবে সেমিফাইনালে উঠে ক্লিন্সম্যান শিষ্যরা।