দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারকালীন সময়েই বারবার নৌকা ও স্বতন্ত্র সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা,সংঘর্ষ নিয়ে মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছে মুন্সীগঞ্জ সদর তথা মুন্সীগন্জ -৩ আসন।সেখানে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে মৃনাল কান্তি দাস ও দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে কাঁচি প্রতিকে ভোটযুদ্ধে নামেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ছেলে,সদ্য সাবেক পৌর মেয়র ফয়সাল বিপ্লব।
৭ জানুয়ারীর ভোটে প্রায় সাত হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন বিপ্লব।তারপর থেকেই শুরু হয় নৌকা সমর্থক বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মি ও সমর্থকদের উপর বিপ্লব সমর্থকদের একের পর এক হামলা,ভাঙচুর,লুটপাট। ভোটের সাত দিন পেরিয়ে গেলেও থামেতো নাই উল্টো রোজই একের পর এক হামলা চালাচ্ছে বেপরোয়া বিপ্লব সমর্থকেরা।যাঁর সর্বশেষ ঘটনা ঘটে আজ ১৪ জানুয়ারী রবিবার সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের বকুলতলা ও সোলারচর গ্রামে।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন বাড়ি ঘর, দোকানপাটের অবস্থা দেখে মনে হয়েছে,সেখানে বুঝিবা যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিলো।স্থানীয় ভুক্তভোগী,নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের সদস্য ও আশেপাশের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়,আজ ভোর পাঁচটা থেকে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে দুই গ্রাম। ভুক্তভোগীরা বলছেন,নির্বাচনী বিরোধকে কেন্দ্রে করে বিজয়ী প্রার্থীর সমার্থক স্থানীয় উত্তর শোলারচর গ্রামের বোরহান মাস্টারের ছেলে আহাদুলের নির্দেশে চলে কয়েক দফা হামলার ঘটনা।পরে অন্তত শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে সংঘবদ্ধভাবে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নৌকার সমর্থকদের ঘরবাড়িতে চালানো হয় ভাঙচুর ও লুটপাট।
এ ঘটনায় তিনজন গুরুতর আহত হন।আহতরা হলেন- রেনু বেগম (৫০), মাহফুজ (৫০) ও শাহানাজ (৫০)। পরে স্থানীয়রা তাদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পাশের এলাকার কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,স্থানীয় আলী হোসেন ও সুরুজ মেম্বারের মধ্যে বিরোধ চলছিল দীর্ঘদিন ধরে।ভোটের উসিলায় সেই বিরোধের ফায়দা তুলে নিতেই আহাদুলের নেতৃত্বে এই হামলা, লুটপাট ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত নৌকার সমর্থক আঁখি বেগম এই প্রতিবেদককে বলেন,দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত নৌকা সমর্থকদের চিন্হিত করে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা এই হামলা চালিয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মাহাবুব ভূঁইয়ার স্ত্রী জাকিয়া বেগম জানান,তার বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে ৫টি গরু, ৮টি ছাগল ও ১০ ভরি স্বর্ণ লুট করে নেয় হামলাকারীরা। তাদের বাড়িতে সিসি ক্যামেরা থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এই হামলা চালানো হয়েছে।এছাড়াও দুটি সিসি ক্যামেরা নিয়ে যায় হামলাকারীরা। বকুলতলা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত আমিন উদ্দিন সরকারের মেয়ে পান্না বেগম বলেন, কাঁচি সমর্থক আহাদুলের নেতৃত্বে আমাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে নগদ ৫ লাখ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণ লুটে নিয়েছে।এ সময় তারা আমাদের বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে লুটপাট করে।
পরে অতিরিক্ত পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ যৌথভাবে নিয়ন্ত্রণে আনে পরিস্থিতি। সহিংসতা এড়াতে ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ।এরপর ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির খোসা ও ককটেল বিস্ফোরণের আলামত। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খায়রুল হাসান।তিনি বলেন,জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। লুট হওয়া ৪টি গরু উদ্ধার করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের। তবে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত জড়িতদের পরিচয় শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।এছাড়াও নির্বাচনের পর আরও বেশ কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মুন্সিগঞ্জে সদরে ফলে সব ঘটনাই গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এই ঘটনায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি অভিযুক্তরা।তাঁরা সাংবাদিক পরিচয় দিতেই মোবাইল সংযোগ কেটে দেন।
সদর এলাকায় এহেন হামলার ঘটনা নিয়ে আলাপকালে স্থানীয় সুধীজনেরা অতি দ্রুত কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন,যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা দলের পরীক্ষিত লোকজন।আর যাঁরা হামলা করছে,তাঁদেরও অনেকে দলেরই লোক।অথচ মুন্সীগন্জ সদরের বাস্তবতায় এই দুই পক্ষ যেনো চিরশত্রু।দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ভয়াবহ কিছু ঘটবার আশংকা স্থানীয় অনেকের।এমনকি প্রশাসনের পক্ষেও এখানে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে মনে করেন অনেকে।