ভাঙ্গাঘর আর মেরামত করা হলো না মেরিনার আরিফের।‘আর ভাঙা ঘরে থাকতে হবে না’- সকালে ফোনে ছোটভাইকে বলছিলেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাদিস। বিকালে রাশিয়ার বোমা হামলায় নিহত হন ইউক্রেনের বন্দরে আটকে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধির থার্ড ইঞ্জিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফ।
বরগুনার বেতাগী উপজেলার বাসিন্দা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফ। মেধাবী ও একমাত্র উপার্জনকারী সদস্যের মৃত্যুতে শোকের মাতম চলছে পরিবারটিতে। বাবা বাকরুদ্ধ, মা দিশেহারা।
বুধবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেটে করে বোমা হামলা চালায় রাশিয়া। এতে জাহাজে থাকা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান আরিফ নিহত হন। জাহাজে হাদিসসহ বাংলাদেশের ২৯ জন নাবিক ছিলেন। বাকিরা সুস্থ আছেন।
হাদিস ওই জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর শোনার পর নিজ বাড়ি বেতাগীতে চলছে শোকের মাতম।
জানা যায়, ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন হাদিস। এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া আরিফ চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমির ৪৭তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। লেখাপড়া শেষ করে তিনি এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি নেন। সেখানে পাঁচ বছর ধরে চাকরি করছিলেন হাদিস।
নিহত হাদিসের ছোট ভাই মো. তারেক বলেন, ‘বুধবার সকালেও ভাই আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেই সময় ফোনে বলেন, ‘ভাই আমাদের আর ভাঙা ঘরে থাকতে হবে না। বাড়িতে এসেই যেভাবে হোক ঘরের কাজ ধরব।’
ফোনালাপে ইউক্রেনে বোমা, গুলির শব্দ ও যুদ্ধের অবস্থা নিয়েও কথা হয়। ভীতিকর পরিস্থিতি নিয়ে হাদিস শঙ্কিত ছিলেন বলেও জানান তিনি। বাড়ি ফেরার তাড়া অনুভব হয়েছিল হাদিসের কথায়। বাড়ি ফিরে কি কি কাজ করবে, ছোট ভাইয়ের সঙ্গে তার একটি আলোচনাও করেন।
তারেক আরও বলেন, ‘আমরা জাহাজে থাকা সহকর্মীদের কাছেই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছি। এরপর থেকেই আমার বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন, মা বেহুঁশ।’
‘সরকারের কাছে অনুরোধ, যাতে দ্রুত ভাইয়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এক নজর হলেও আমার ভাইয়ের লাশটা শুধু দেখতে চাই। ভাইকে হারিয়ে আমাদের পরিবারটি পথে বসে গেল।’ বলে কেঁদে ফেলেন ছোট ভাই তারেক।
উল্লেখ্য, সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়। তবে যুদ্ধাবস্থা এড়াতে জাহাজটিকে সেখানে পৌঁছানোর পরই পণ্য বোঝাই না করে দ্রুত ফেরত আসার জন্য নির্দেশ দেয় শিপিং করপোরেশন। শেষ মুহূর্তে বন্দরে স্থানীয় পাইলট না পাওয়ায় ইউক্রেনের জলসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশের এই জাহাজ।