শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ, বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেছেন, সমাজের প্রতি মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট বা আনন্দ না থাকলে লেখক হওয়া যায় না। লেখালেখিকে চাকরি হিসেবে নিতে হবে। লেখকদের রাজনীতি সচেতন হতে হয়। লেখালেখিকে পেশাদারত্ব হিসেবে নিতে হবে। লেখা একটা আশ্চর্য জিনিস। সবাই চায় লেখালেখি করতে, পরিচিতি পেতে। লেখা সমাজকে-সংস্কৃতিকে প্রাণ দিয়েছে। কেননা এটি সভ্যতার অংশ, জীবনের অংশ। বর্তমান সমাজে লেখক হওয়া অনেক সম্মানের, নিরাপদও। লেখকরা সমাজের সর্বশ্রেষ্ঠ কাতারের মানুষ। যশের জন্য বা খ্যাতির জন্য নয়, পাঠককে জয়ের জন্য লিখতে হয়। পাঠকের কাছে পৌঁছাতে হলে ভালো মানের লেখা চাই। তার জন্য নিয়মিত চর্চার বিকল্প নেই। চর্চা চর্চা চর্চা একমাত্র চর্চাই পারে লেখককে লক্ষ্যে পৌঁছাতে।
চট্টগ্রাম একাডেমি প্রবর্তিত অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০২০-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক আমিনুর রশীদ কাদেরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কবি-শিশুসাহিত্যিক সুজন বড়–য়া। অনুভূতি ব্যক্ত করেন পুরস্কারপ্রাপ্ত ২০২০ সালের লেখক অঞ্জন নন্দী (উপন্যাস-সেইসব দিন) ও সারওয়ার-উল-ইসলাম (ছড়াগ্রন্থ-কাকের পায়ে খুকুর জুতা), ২০২১ সালের লেখক ওমর কায়সার (গল্পগ্রন্থ- সে এক আশ্চর্য বাতি) ও সনজীব বড়–য়া (কিশোরকবিতাগ্রন্থ-পাহাড় বন নদী পেরিয়ে)। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক কবি শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ। সঞ্চালক ছিলেন আয়েশা হক শিমু। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কবি আসাদ মান্নান। এ সময় মঞ্চে ছিলেন একাডেমি পরিচালক প্রাবন্ধিক নেছার আহমদ, কথাসাহিত্যিক বিপুল বড়–য়া, কবি অরুণ শীল, কবি জিন্নাহ চৌধুরী, স্লোগান সম্পাদক মোহাম্মদ জহির, একাডেমির পরিচালক কবি রমজান মাহমুদ, পরিচালক জাহাঙ্গীর মিঞা, শারুদ নিজাম, এসএম মোখলেসুর রহমান, গোফরান উদ্দীন টিটু, খালেদপুত্র মোহাম্মদ জোবায়ের, সাইফুল হাসান।
প্রধান অতিথি ড. মুনতাসীর আরও বলেন, আমি চট্টগ্রামে ছিলাম। চট্টগ্রাম সাথে সংশ্লিষ্ট আছি, আমৃত্যু থাকব। আমার পড়ালেখাও চট্টগ্রামে। আমি আজাদী সাথে বেড়ে উঠেছি। অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। সংবিধান রচনা সাথে থাকতে পারা গৌরবের। এমন সুযোগ মানুষের জীবনে একবারই আসে। আজাদী একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ এবং আজাদী অবিচ্ছেদ্য অংশ। আজাদী বঙ্গবন্ধুর নামে নামে একটি পুরস্কার চালু করতে পারে। যার মূল্য জাতীয় পুরস্কারের অংকের চেয়ে বেশি হবে। বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ। না পারার কোন কারণ নেই।
তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম লেখকদের জন্য একটি লেখক সংগঠন গড়ে তুলতে। কিন্তু নানা কারণে তা করতে পারিনি। এখন আপনারা যারা এ মাধ্যমে কাজ করছেন সে দায়িত্ব নিতে পারেন। আমাদের সমর্থন সহযোগিতা থাকবে। কেননা লেখকরা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত। লেখার জন্য তারা কোন সম্মানী পান না। বড় সংগঠন থাকলে লেখকদের অধিকার নিশ্চিত করা যেতো।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ড. মুনতাসীর মামুন পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও নগদ অর্থ তুলে দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কবি সুজন বড়–য়া বলেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার অত্যন্ত পয়োমন্ত পুরস্কার। যাঁরা এ পুরস্কার লাভ করেছেন তারা চারজনই বিখ্যাত লেখক। তাদের সাহিত্যে উঠে এসেছে বাস্তবজীবনের সব বিষয় আশয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসও প্রতিফলিত হয়েছে সহজ সরল ও ছন্দোবদ্ধ ভাষায়।
আবৃত্তিতে অংশ নেন আবৃত্তিশিল্পী যারীন সুবাহ, আয়মান রউফ, জেবা সামিহা।
এর আগে প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. উদিতি দাশের সভাপতিত্বে লেখাপাঠ ও নতুন বইয়ের পাঠ উন্মোচন। এতে অংশ নেন শিশুসাহিত্যিক আনজীর লিটন, সেলিম সোলায়মান, মাজহারুল হক, মহসীন চৌধুরী, আজিজ রাহমান, আবুল কালাম বেলাল, প্রীতিশ কুমার বল, অমিত বড়ুয়া, জাকির হোসেন কামাল, ইফতেখার মারুফ, শিবু কান্তি দাশ, রশীদ এনাম, শিমুল বড়–য়া, অমিত কুমার কুণ্ডু, ইমরান পরশ, রুনা তাসমিনা, চন্দ্রশীলা ছন্দা, মোমিন উদ্দিন খালেদ, মইনুল হক চৌধুরী জোসেফ, পারভিন আক্তার, নিশাত হাসিনা শিরিন, সুপ্রতিম বড়ুয়া, মাহবুবা চৌধুরী, সনজিত দে, অপু বড়ুয়া, লিপি বড়ুয়া, সৈয়দা সেলিমা আক্তার, সালাম সৌরভ, তানভীর হাসান বিপ্লব, রুকুন উদ দৌলা, সুরভী কান্তা, রাসু বড়ুয়া, সারওয়ান আরমান, সাইফুল্লাহ কায়সার, নান্টু বড়ুয়া, তসলিম খাঁ, সেলিম আক্তার আকাশ, এম. কামাল উদ্দিন, শিপ্রা দাশ, রূপক কুমার রক্ষিত, তুতুল বাহার, নাসরিন আক্তার, খালেদা খানম প্রমুখ।