খাগড়াছড়ির রামগড়ে জাল দলিল তৈরি করে ভূমি আত্মসাতের অভিযোগে ৩৮ জন কে আসামী করে ৬টি মামলা করেছে রামগড় উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারি কবির আহাম্মদ। খাগড়াছড়ির রামগড়ে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু নির্মাণ পরবর্তী স্থলবন্দরের জন্য সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প বারৈয়ারহাট-হেয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ শীর্ষক প্রকল্পে” ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের শতকোটি টাকা আত্মসাতের লক্ষে ভুয়া দলিল বানানোর সাথে জড়িত ভূমি দস্যুদের শাস্তি ও ভুয়া দলিল বাতিলের দাবি ইতিপূর্বে জানানো হয়। এ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে তদন্ত চালায় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন।এই প্রকল্পে খাগড়াছড়ির সোনাইপুল থেকে রামগড় বাজার পর্যন্ত অধিগ্রহনকৃত ১৭ একরের মধ্যে ১৩একরই জাল দলিল তৈরী করে আত্মসাতের চেষ্টার প্রমাণ পায় প্রশাসন।সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং জনসাধারণের এসব অধিগ্রহণকৃত ভূমি আত্মসাতের চেষ্টা চালায় সেভেন স্টারের নামের এই চক্রটি। অভিযোগ পত্রগুলোতে বলা হয়, স্থলবন্দরের জন্য সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প বারৈয়ারহাট-হেয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ শীর্ষক প্রকল্পে”অধিগ্রহণের সরকারি কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের লক্ষে বিবাদীগণ রামগড় ভূমি কার্যালয়ের অসাধু কর্মচারী,জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের মহাফেজখানা শাখার অসাধু কর্মচারীদের এবং ২২৯নং মৌজার হেডম্যানের যোগসাজশে ২২৯নং রামগড় মৌজায় সরকারি ১নং খাস খতিয়ান ভুক্ত জায়গায় দুর্নীতি ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া হোল্ডিং নং ৮৮৫,৮৮৭,৭৮৬,১১০৩,৭৯৫(ক),৭৭১ সৃজন করে। চক্রটি ২০২১সালের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এই জালিয়াতি করে।ভূমি অফিসের জমাবন্দিতে কবুলিয়তবহিতে ও নামজারি মামলা রেজিস্ট্রারে হেডম্যানের জমাবন্দিতে ও জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের মহাফেজ খানা শাখার বালাম বইতে কাটাকাটি ও ওভাররাইটিং করে বিবাদীগণের নামে যাহাদের অনেকের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি তারা ভুয়া বন্দোবস্ত মামলা করে।
এলাকায় জনসাধারণের ব্যপক অভিযোগ এবং সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর জেলা প্রশাসনের নজরে আসলে তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং তদন্তে এই জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়। আসামীরা হলেন,ভূমি জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা রামগড় পৌরসভার রোলার চালক নুরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা ভুবন মোহন ত্রিপুরা,খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও উপজেলা সভাপতি হাফেজ আহমেদ ভূইয়া,তার ভাই আহাম্মদ করিম,ভাতিজা বিএনপি নেতা ও দলিল লেখক মোস্তফা ভূইয়া,রামগড় পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান কাজী রিপন,তার ছয় ভাই ও এক বোন। কাজী রফিকুল ইসলাম মিন্টু, কাজী জিয়াউল হক শিপন,কাজী হারুন অর রশিদ,ফাতেমা বেগম,কাজী সেলিম,কাজী সাইফুল ইসলাম,কাজী শাহরিয়ার ইসলাম এছাড়াও রফিকুল আলম,শফিকুল আলম,মমিনুল আলম,মনিরুল আলম,বিএনপি নেতা নুরের নবী চৌধুরী,কামিনী রঞ্জন ত্রিপুরা,ছবুরা খাতুন,মোহাম্মদ আব্দুল জলিল,ফেরদৌস ইসলাম,পারভীন আক্তার,সাজেদা খাতুন,দিলীপ চন্দ্র রক্ষিত,স্নেহ কান্তি চাকমা,অবনী লাল ত্রিপুরা,হাসিনা আক্তার,নুরজাহান বেগম,রোকেয়া বেগম,মো.নুরুন্নবী,জাহানার বেগম,নাজমা বেগম,রাশেদা বেগম,আছমা বেগম,মামুন হোসেন ও জোবেদা আক্তার মুন্নী।এদের মাঝে মূল হোতা নুরুল ইসলাম ,দলিল লেখক মোস্তফা ভূইয়াও ছবুরা খাতুন ৩টি এবং ফেরদৌস ইসলাম এবং নুরের নবী চৌধুরী ২টি মামলার আসামী।
ভুক্তভোগী অধ্যক্ষ ফারুকুর রহমান জানান,জালিয়াতি চক্রের অনেকেই ১৯৮০ সালের পর শরণার্থী হিসাবে বিভিন্ন এলাকা থেকে রামগড়ে আসেন। তাদের কারও কোনো দলিলপত্র রেকর্ডে নেই। এমনকি তাদের পূর্বপুরুষদেরও ওই এলাকায় বা আশপাশে জমির মালিকনা নেই। সর্বশেষ ২০২১ সাল পর্যন্ত সৃজিত কোনো দলিলে এসব ভূমিদস্যুর মালিকানার কোনো অস্তিত্ব নেই। তবু ভূমি অধিগ্রহণ টাকা লোপাট করতে ভূমি অফিসের কানুনগো দেলোয়ার, সার্ভেয়ার জাহাঙ্গীর ও দলিল লেখক মোস্তফা,পৌরসভার রোলার চালক নুরুল ইসলামের সহায়তায় ভুয়া দাগ ও পর্চায় অন্তর্ভুক্ত করে দলিল বানিয়ে সরকারি সিএনবি জায়গা ও ভুয়া জমির মালিকানা সেজে অর্থ লোপাটের চেষ্টা করে।তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন,ভূমিদস্যু চক্র তাদের হীনচরিত্র জায়েজ করতে উচ্চ আদালতে রিট করেছে।তিনি জেলা প্রশাসনের নিকট আহ্বান জানান অবিলম্বে পুরো চক্রকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে ভূমির মালিকদের তাদের প্রকৃত জায়গা বুঝিয়ে দিতে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা এবং তদন্ত কমিটির প্রধান মনজুরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, রামগড় মৌজার ১নং সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত ভূমিতে অসংখ্য ভুয়া হোল্ডিং সৃষ্টি ও অধিগ্রহণভুক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটি মাসব্যাপী শুনানি শেষে ছয়টি ভুয়া হোল্ডিং যথাক্রমে ৭৭১, ৮৮৭, ৭৯৫(ক), ১১০৩, ৭৮৬ ও ৮৮৫ বাতিল করার সুপারিশ করে। এ সুপারিশের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গত ১৪ সেপ্টেম্বর রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর মনজুরুল আলম তাঁর দপ্তরের স্মারক নং ১৩১২ মূলে সহকারী কমিশনার ভূমিকে তাঁর কার্যালয় এবং ২২৯ নং রামগড় মৌজার হেডম্যানের কার্যালয়ে রক্ষিত জমাবন্ধি বহিতে ছয়টি ভুয়া নোটিং হোল্ডিংস এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রাদি জরুরি ভিত্তিতে বাতিল করে তাঁর কার্যালয়ে জানানোর নির্দেশ দেন।
জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, রামগড় ভূমি অফিস, রেকর্ড শাখা ও জেলা কানুগোসহ ছয় সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। এর মধ্যে জেলা প্রশাসকের আওতাধীন তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অপর তিনজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভাগীয় কমিশনার ও ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মৌজাপ্রধানকে অপসারণ ও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পার্বত্য শাসনবিধি অনুযায়ী মং সার্কেল চিফকে (রাজা) চিঠি দেওয়া হয়েছে।