গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত। রেজি নং – ১৬৯

বঙ্গবন্ধু: আদর্শকে মূল্যায়ন আবশ্যিক দায়িত্ব

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সময়ের গর্ভ থেকে ওঠে আসা এক সৃজন-মননের ভিত্তি। সম্ভ্রান্ত উচ্চবংশীয় ঐতিহ্যের ধারক ছিলেন। আলোচনার অন্তর্গত অনেক বিষয়ের মধ্যে কৌতূহলোদ্দীপক কয়েকটি ব্যতিক্রম বিশিষ্টতা ভিন্ন মর্যাদা লাভ করতে সমর্থ হয়েছেন। তিনি ‘শেখ’ বংশীয় উত্তরাধিকার বহন করে আছেন। আভিজাত্য, শক্তিমত্তা আর বিপুল ক্ষমতাধর অর্থ বোঝাতে আরবি শব্দের সাধারণ অর্থ ‘শেখ’ ব্যবহার করা হয়। স্বতন্ত্র ব্যক্তিসত্তার শতধারায় উৎসারিত এই শেখ সম্মানসূচক এক আরবি অভিধান বা পদবি। সৌদিআরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাবান শাসকদের চেতনাবিস্তৃত পদবি ‘শেখ’ ব্যবহার করে থাকে। সাধারণভাবে গোটা বিশে^ ছড়িয়ে থাকা মুসলমানদের লোকায়িত বিশেষ অনুভূতি হিসাবে পদবির বেলায় ‘শেখ’ শব্দ ব্যবহার হয়ে আসছে। আরব সভ্যতার সাংস্কৃতিক বিকাশ ও প্রভাবে ধর্মীয় ও সম্মানসূচক অর্থ প্রসার ও সম্প্রসারণের ফলে মুসলিম সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে শেখ। ল্যাটিন, বাংলা, আরবি প্রতিশব্দ যাই হোক এই পদবির পেছনে রয়েছে অনবদ্য তাৎপর্যময় সমৃদ্ধ ইতিহাস। মানবতার পরম বন্ধু, ইসলামের মহান পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক যারা সরাসরি মুসলিম হয়েছে, ইতিহাসে তারাই শেখ আভিধায় ভূষিত।
আমাদের এই প্রাচীন বঙ্গীয় জনপদে ইসলামের শাশ^ত বাণী নিয়ে সাহাবি, তাবেয়ি তৎপরবর্তীকালে সুফি, দরবেশ, গাউস, কুতুব, অলি, বুজুর্গ হিসাবে-অনেকেই এসেছেন। তাঁদের অধিকাংশই এসেছিলেন আরব আর পারস্য থেকে। মহামতি শেখ আউয়াল নামের এক দরবেশের আগমন ঘটেছিল অত্র এলাকায়। আমাদের পরম সৌভাগ্য বঙ্গবন্ধু সেই দরবেশের সপ্তম অধস্তন বংশধর। খ্রিষ্টিয় পঞ্চদশ শতকে বিশ^খ্যাত অলিয়ে কামেল সুলতান আরেফিন হযরত বায়েজিদ বোস্তামি (রহ:) এর সফরসঙ্গী হয়ে ব্যবিলনীয় সভ্যতার লীলাভূমি ইরাক থেকে সমুদ্রপথে প্রথমে চট্টগ্রাম আসেন। অলিকুল শিরোমণি বায়েজিদ বোস্তামী (রহ:) এর নির্দেশে শেখ আউয়াল বঙ্গদেশের অনেক জায়গায় ইসলাম প্রচার করতে থাকেন। বংশ পরম্পরায় চতুর্থ বংশের প্রতিনিধি হিসাবে শেখ বোরহান উদ্দিন মধুমতি ও বাইগার নদীর মাঝখানে মনোরম টুঙ্গিপাড়ায় আসেন। টুঙ্গিপাড়া তখন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের শ্যামলছায়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মায়াবি-পরিবেশের বধিষ্ণু গ্রাম।
শে^ত-শুভ্র পোশাক ও শশ্রুম-িত বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মা সায়েরা খাতুনের ঘর আলোকিত করে বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ মঙ্গলবার রাত ৮ ঘটিকায়। দরবেশী এই দম্পতির চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। নিজেকে প্রকাশের তীব্রতা নিয়ে দুরন্তপনায় ডানপিটে শৈশব শুরু হয়। মধুমতির ঘোলাজলে গ্রামের ছেলেদের সাথে সাতাঁরকাটা, হা-ডু-ডু, ফুটবল, ভলিবল খেলে দিগন্তব্যাপী এক বিপুল জলজীবন ভোগ করতে থাকেন। ঢোলকলমি, রামশালিক, ডোমচিল দেখাদেখির সীমাহীন তৃষ্ণা নিয়ে সকল দস্যি বালকদের নেতা বনে যান। বন্ধুদের গালে গাল ঠেকিয়ে মিশে যেতে থাকেন পাখি, কুকুর, বেড়াল, মানুষ সবলাইনে। দস্যি বালকদের নেতাই একদিন বিশ^নেতা, বাঙালি জাতির পিতা হওয়ার বায়বীয় ভাবনা নিয়ে ১৯২৭ সালে ৭ বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। অনির্বাণ অগ্নির মতো সৃজনশীল বৈশিষ্ট্য নিয়ে ১৯২৯ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা করেন। তখন চোখের জটিল রোগ গ্লুকোমা আক্রান্ত হন। চিকিৎসা-সুস্থ্যতা-শক্তিধর লেন্সের চশমা ব্যবহার অভ্যস্থ হয়ে ১৯৩৭ সালে একই সপ্তম শ্রেণিতে গোপালগঞ্জ মথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে ভর্তি হন। ওখান থেকেই তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর সরল বক্তব্য উপস্থাপনে জানা যায় বঙ্গবন্ধুর ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করা ছিল সুচিন্তিত ও সমাজসেবামূলক। প্রত্যাশার দিগন্ত এখানেই হয়েছিল সুবিস্তিত। আত্মপ্রকাশের তীব্রতা এখানে জোনাকির মতো টিমটিমে ছিল না, ছিল না গ্রাম্যতাদোষে দুষ্ট। সরল মনোগ্রাহী বর্ণনাতেই দেখা যায় স্কুলের ছাত্রত্বকালীন সময়েই তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। দিনান্তে সৌখিন আলস্য তাঁকে পেয়ে বসেনি। মুষ্টি ভিক্ষার চাল উঠিয়ে গরীব ছেলেমেয়েদের বই ও পরীক্ষার খরচ বহন করা, বস্ত্রহীন পথচারী শিশুকে নিজের নতুন জামা পরিয়ে দিতেও কার্পণ্য করেননি। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের দায়িত্ব নেওয়ার দৃঢ় সঞ্চারী ভূমিকা তিনি সানন্দে গ্রহণ করতেন। মানুষের কল্যাণকামী মহৎ গুণ শতধারায় উৎসারিত হয়েছিল সেই শৈশবেই। ১৯৪২ সালে কলকাতা ইসলামিক কলেজে মানবিক বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে ভর্তি হন। এখানেই বঙ্গবন্ধুর জীবনের সামগ্রিক পরিবর্তন ঘটে। বেকার হোস্টেলে থাকার সময় পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন। তখন চেতনাগত ঐক্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রাপ্তির আকাক্সক্ষা অভিন্ন বিন্দুতে এসে মিলিত হয়। জীবনসমগ্রতার অঙ্গীকার বিচিত্রভাবে প্রকাশ হতে থাকে। অস্তিত্বময় পটভূমি প্রস্তুতে মুসলিম লীগে যোগদান করে কাউন্সিল নির্বাচিত হন। তখন নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ, কলকাতাস্থ ফরিদপুর ডিসট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশনে বিভিন্ন পদধারী হয়ে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টিতে সমর্থ হন। তখন ইতিহাস ঐতিহ্য মন্থনে নতুনমাত্রা পেয়েছে। ইসলামিক কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিক কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।
শুরু হয় সীমাতিরিক্ত প্রত্যাশা পূরণের ধারাবাহিক আন্দোলন। সময়ের নখরবিক্ষত করে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ গঠনের মাধ্যমে আলাদা আবেগজীবন শুরু করেন। ইতিহাসের প্রতিটি গতিশীল ধারায় নবমাত্রা সঞ্চার করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, আটান্নর সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, পরবর্তীতে ১১ দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে দীর্ঘ রক্তাক্ত সংগ্রামের অভিজ্ঞতায় চেতনাকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। অপরিমেয় সম্ভাবনাময় উজ্জীবিত হয়ে গণতান্ত্রিক স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিটি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে নবব্যাঞ্জনায় সমৃদ্ধ হন। শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের চেতনা প্রখর হতে থাকে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক জীবনে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটতে থাকে। বিভ্রান্তিপ্রবণ সমাজ মানসের প্রেক্ষাপটের পরাজয় ক্লিষ্টতার স্পর্শ অনুভব করেন নাই। স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে আবারো কারাগারে অন্তরীণ করে। আন্দোলনের অনি:শেষ চেতনার তীব্রতার মুখে ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে কারামুক্তি পান তিনি। ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের বিশাল সমাবেশ হয়। এই জনসভাতেই তৎকালীন ছাত্রনেতা রেজাউল হক চৌধুরী মোশতাকের তাত্বিকতায় ডাকসু ভিপি তখোর ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমদ বাংলাদেশের স্বরূপ অন্বেষার আন্দোলনের প্রধান পুরোহিত হিসাবে শেখ মুজিব তথা মুজিব ভাইকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
বঙ্গবন্ধু সারাজীবন আন্দোলনের রাজনীতি করেছেন। সম্ভাবনার তাৎপর্য নিয়ে দল গঠন করেছেন। তিনি গণমানুষের মুক্তির কথা বলতেন, বক্তৃতার মোহন বাঁশি শুনে লাখ লাখ মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে যেতো। বাঙালি জাতিসত্তা যে বিভ্রান্তি ও সংকটের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল, সাধারণ মানুষকে তা বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল অহিংস এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। গণতান্ত্রিকপন্থার মধ্য দিয়ে অধিকার আদায় করে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন কামনা করতেন। জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা, সমাজতন্ত্র এসব নানা রকমের আদর্শের কথা তিনি হৃদয়ে লালন করতেন। সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রাম নিয়ে দুঃখবোধ করতেন। মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার কথা গভীর মনোযোগে শুনেছেন। ভাবনায় প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। জনতার নেতা হিসাবে সব বিষয়ের শেষ ভরসা করতেন মানুষের ওপরে। স্বাধীনতা যুদ্ধের গণজাগরণ ও বৈপ্লবিক চেতনার স্পর্শেই তিনি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বলতে পেরেছিলেন ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না’। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সুসংহত করেছিলেন। তিনি কখনো কোন গোষ্ঠী, জাতি, সম্প্রদায়, দেশের প্রতি ঘৃণা করতেন না। সবাইকে আধুনিকতার জিজ্ঞাসায় বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা বিষয়বৈচিত্র, বৈচিত্রপূর্ণ জীবনাচার, নান্দনিক ভূবৈচিত্র্য সমন্ধে জনগণের সামনে তুলে ধরতেন। উপলব্ধির দায়বোধ-পাকাপোক্ত করতে ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। শুরু হয় ভিন্ন ধাঁচের ভিন্ন ধারার তুমোল আন্দোলন। উত্তাল হয়ে ওঠে সারা বাংলা।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর হয় পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন। দীর্ঘ আন্দোলন পরিক্রমার ফলাফল দেখতে পায় বিশ^বাসী। জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের আইনসভায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিলেও আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন ঠেকাতে শুরু করে নানা টালবাহানা। পূর্ব বাংলার মানুষের ভবিষ্যৎ আত্মমুক্তির অজ্ঞেয়বাণী দাঁড়িপাল্লার মতো প্রতীকায়িত হতে থাকে। অন্বয়-অনন্বয়ের যুগপৎ প্রেষণা নিয়ে ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ মধ্যরাতে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আগেই বলে রেখেছিলেন ‘যার যা কিছু আছে তা নিয়েই শত্রুর মোকাবিলা কর’। জনগণকে সর্বাত্মক সংগ্রামে সামিল হতে আহ্বান জানান।
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ টানা ২৪ বছরের সংগ্রামের শেষ মহাকাব্য লেখা শুরু হয়। গভীর অন্ধকার ও অনিশ্চয়তার গহ্বর থেকে বাঙালি জীবনের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট রচনা লেখা হতে থাকে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসের এই রেনেসাঁসীয় গতি ও শক্তির পেছনে সীমাতিরিক্ত প্রত্যাশা সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সমগ্র জাতি এক অভিন্ন বিন্দুতে মিলিত হয়েছিল। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও নানা কূটকৌশল মোকাবিলা করে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষের জীবনদান ও ৩ লক্ষ মা- বোনের সম্ভ্রমহানীর পর স্বাধীনতা করতলগত হয়। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪:৩১ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি সসস্ত্রবাহিনীর ৯১,৬৩৪ নিয়মিত সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।
সুদীর্ঘকালের ঔপনিবেশিক শাসন- শোষণ ও নিপীড়নের গঠনমূলক দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে পৃথিবীর বুকে ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। রক্তিম জীবনাবেগ ভবিষ্যৎস্পর্শী উন্নয়ন কল্পনার ভাবাবেগ নিয়ে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। নারকীয়তার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের জৌলুসে শুরু করেন দ্বিতীয় বিপ্লব। সোনার বাংলা গড়ার পদক্ষেপ হিসাবে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলেন উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর। মূল লক্ষ্য খাদ্যেৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের পদক্ষেপ নিতে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাঁচটি খাতের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন। শিল্পে অধিক উৎপাদন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি নির্মূল।
বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংকল্প ব্যক্ত করেছিলেন। ব্রিটিশ-পাকিস্তান আমলের মহকুমা ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে ৬১টি জেলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। দেশ গঠনে ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সবার সহযোগীতা চেয়ে জেলা কাউন্সিল, থানা কাউন্সিল ও থানা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে উন্নয়ন কর্ম-পরিচালনার নির্দেশ দেন। সর্বসাধারণকে উদ্যোগী হয়ে স্থানীয়ভাবে রাস্তাঘাট নির্মাণে উৎসাহী হওয়ার আহ্বান করেন।
সাধারণের অলক্ষ্যে প্রতিক্রিয়াশীলচক্রের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সঠিক পথেই এগুচ্ছিল সোনার বাংলা। স্বাধীন বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা হিসাবে ইতিহাস সমৃদ্ধ গৌরবময় উন্নয়নে তিনি সময় পেয়েছিলেন মাত্র ১৩১৪ দিন। এমন সময়ে নেমে আসে ১৫ আগস্টের অমানিশা। দেশি-বিদেশী শত্রুদের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে মাতাল হয়ে সেনাবাহিনীর একটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র সপরিবারে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুকে। ক্ষতবিক্ষত হয় তার দেহ। বাধাপ্রাপ্ত হয় সার্বিক উন্নয়ন। গণতন্ত্র তখন সমরাস্ত্র শাসিত হতে থাকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হত্যা করা যায়নি। শোকে স্তব্ধ করি লিখেছেন এসব কথা শুনে আমি/হারিয়ে ফেলি হুঁশ/যারা আমার মারল পিতা/তারা কি সত্যি মানুষ?
দেশের প্রগতিমনা মানুষের চোখমুখে উৎকণ্ঠা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রজ্ঞা, মেধার উৎকর্ষতা, সময়োপযোগী-গতিশীল উন্নয়ন বাতাসের গায়ে আছড়ে পড়ে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ভঙ্গুর অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর দক্ষতা সারা বিশে^র জন্য অনুকরণীয় ছিল। খাঁটি, নির্ভেজাল, নিরঙ্কুশ ও আপসহীন এমন দেশপ্রেমিকের মৃত্যু হয়না। তাইতো অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছেনÑ
‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান,
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’
শেখ মুজিব, শেখ সাহেব, মুজিব ভাই, বঙ্গবন্ধু যেভাবেই ভাবি না কেন, বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ ২টি নাম একটি ইতিহাস। জমজ শব্দ ২টির একটি আরেকটির পরিপূরক। বাংলার আকাশ-বাতাস-প্রকৃতি অশ্রুসিক্ত হওয়ার এই দিনে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শোকার্ত-শ্রদ্ধা।

এই বিভাগের সব খবর

অঞ্জলি লহ মোর হে প্রিয় কবিগুরু

২৫ শে বৈশাখ বাঙালি জাতির কাছে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতিক উৎসবের দিন। প্রতিবছর এদিনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাঙালি...

বিশ্বমানের পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলাই আমার প্রধান লক্ষ্য : সিডিএ’র চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ বলেছেন, চট্টগ্রামকে বাসোপযোগী এবং বিশ্বমানের পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলাই আমার প্রধান লক্ষ্য। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি...

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও বৈশ্বিক অভিবাসন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আইওএম’র কার্যকর ভূমিকা আশা করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২৪ প্রকাশ করেছে। ২০০০ সাল থেকে দ্বিবার্ষিকভাবে প্রকাশ হয়ে আসা এই আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন এবারই প্রথম তাদের সদর...

সর্বশেষ

অঞ্জলি লহ মোর হে প্রিয় কবিগুরু

২৫ শে বৈশাখ বাঙালি জাতির কাছে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ...

বিশ্বমানের পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলাই আমার প্রধান লক্ষ্য : সিডিএ’র চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ...

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও বৈশ্বিক অভিবাসন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আইওএম’র কার্যকর ভূমিকা আশা করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২৪ প্রকাশ...

মহামারী মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও সাড়াদানে উচ্চ-পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অপরিহার্য : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা স্থাপন, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা পদক্ষেপে...

উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিবেচনা করুন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে দেশের...

২ ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় বাংলাদেশের

দুই ম্যাচ হাতে রেখেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিত...