গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত। রেজি নং – ১৬৯

বঙ্গমাতা: সংশয়-সংগ্রামের নির্মোহ প্রতিভা

  ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জন্মদিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর কর্মের মাধ্যমে তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন একটি সংগ্রামমুখর জীবনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলার কোটি জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের সাথে দ্বিধাহীনভাবে মুক্ত হয়েছিলেন।
 ত্যাগ ও নিপীড়ন মোকাবিলা করার দৃপ্ত প্রতিজ্ঞায় ছিলেন অন্যোন্যনির্ভর অনড়। সরাসরি রাজনীতির সাথে যুক্ত না থেকেও বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎস ছিলেন বেগম মুজিব।
কখনো সমবেত, জমায়েতাবিষ্ট কখনো বা একলা প্রশ্নহীনভাবে বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন দিয়েছেন। মনোবল ও সাহস যুগিয়েছেন; অপরিসীম প্রেরণা যুগিয়েছেন একান্তে নিভৃতে। মনটাকে নিঙড়ে মুজিবের আদর্শ, সাহস ও আত্মবিশ্বাসী সত্তার সহযাত্রী হয়েছিলেন। বহুতর ছদ্মবেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সস্তা স্তুতি স্বাধীনবোধের এষণায় মোকাবিলা করেছেন। কখনো কারো সাথে অপরিচয়ের ধাঁধায় পড়েননি। প্রকৃতির স্বপ্ন পুরুষ বঙ্গবন্ধুকে আচরণগত সতত চলার মসৃণ গলিপথ ধরিয়ে দিয়েছেন। এই একজন নারীর ভেতরে কত মানুষের প্রতিকৃতি যে লুকিয়ে ছিল তার ইয়ত্তা নেই। জাতীয় কবি কাজী নজরুলের নারী কবিতার বহুলশ্রুত লাইন দু’টিকে যথার্থ প্রমাণ করেছেন-
‘কোনোকালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি-
  প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয় লক্ষ্ণী নারী।’
বাংলার এই ভূখণ্ড উন্নয়নে লীলাবতী থেকে ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী, ফয়জুন্নেসা থেকে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, বেগম রোকেয়া থেকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চিন্তা মনন, মেধা, শক্তি, আর ইচ্ছায় আকৈশোরী গৃহিণী থেকে নির্মোহ চিত্তের-আত্মনিবেদনের তারকায় পরিণত হয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু একটি সাক্ষাতকারে বেগম মুজিব সম্পর্কে বলেছেন- ‘আমার স্ত্রীর মতো সাহসী মেয়ে খুব কমই দেখা যায়, আমাকে যখন পিণ্ডির ফৌজ বা পুলিশ এসে জেলে নিয়ে যায়, আমার উপর নানা অত্যাচার করে, আমি কবে ছাড়া পাব বা কবে ফিরে আসব ঠিক থাকে না, তখন কিন্তু সে কখনো ভেঙ্গে পড়েনি। আমার জীবনের দুটি বৃহৎ অবলম্বন। প্রথমটি হলো আত্মবিশ্বাস, দ্বিতীয়টি হলো আমার আকৈশোর গৃহিণী।’
শত প্রতিকূলতার মধ্যে নিজের আন্তরিকতা, প্রচেষ্টা ও মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া শেখ ফজিলাতুন্নেছা রেণু ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার ঐতিহাসিক গ্রামে শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শেখ মোহাম্মদ জহুরুল হক এবং হোসনে আরা বেগমের কোল আলো করে শ্রাবণের দুপুরে জন্ম নেয়া এই মহীয়সী নারী মাত্র তিন বছর বয়সে পিতাকে হারান। বড় বোন ছিলেন জিনাতুন নেছা জিন্নি। এক বৃষ্টিসিক্ত বিকেলে অনাথ এই দুই শিশুর দায়িত্ব নেন দাদা শেখ মো. আবুল কাসেম। দাদার ঝোঁক ছিল দুই নাতনিকে পড়ালেখা করিয়ে স্বাবলম্বি করবেন। দিকনির্দেশনাহীন যেন না থাকে, কখনো বিরহ দহন যেন না হয় সেই দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন। দাদার বিশেষ আগ্রহ ও ইচ্ছায় বৃত্তাবদ্ধ পরিবার গড়তে তিন বছরের ফজিলাতুন্নেছার সঙ্গে দশ বছর বয়সী শেখ মুজিবুর রহমানের রেজিষ্ট্রিমূলে বিয়ে দেন।
ফজিলাতুন্নেছার ৭ বছর বয়সে একমাত্র অবলম্বন দাদা শেখ মো. আবুল কাসেমের মৃত্যু হয়। তখন শেখ মুজিবের পিতা শেখ লুৎফুর রহমান এবং মমতাময়ী মাতা সায়রা খাতুন দ্বিরুক্তিহীন নিশ্চুপ থাকেন নি। পরম মমতায় নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করতে থাকেন। বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৪২ সালে  পাস করেন তখন বয়স ১৯ আর ফজিলাতুন্নেছার বয়স ১০। মা-বাবার ইচ্ছায় তখন থেকে তাঁদের আনুষ্ঠানিক সংসারজীবন শুরু হয়।
বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন ‘আমার যখন বিবাহ হয় তখন আমার বয়স ১২-১৩ বছর হতে পারে। রেণুর বাবা মারা যাবার পর ওর দাদা শেখ কাসেম আমার আব্বাকে ডেকে বললেন- তোমার বড় ছেলের সাথে আমার এক নাতনীর বিয়ে দিতে হবে। কারণ, আমি সমস্ত সম্পত্তি ওদের দুই বোনকে লিখে দিয়ে যাব। রেণুর দাদা আমার আব্বার চাচা। মুরব্বির হুকুম মানার জন্যই রেণুর সাথে আমার বিবাহের রেজিষ্ট্রি করে ফেলা হল। আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে। তখন কিছুই বুঝতাম না, রেণুর বয়স তখন বোধ হয় তিন বছর হবে। বাচ্চাকালে আপনজন হারানোর ব্যথা- বেদনা নিয়ে ফজিলাতুন্নেছাকে জীবনধারণ করতে হয়েছে শেখ মুজিবের পরিবারের মাতা সায়রা খাতুনের নিবিড় তত্ত¡াবধানে। একারণেই বঙ্গবন্ধুর পরিবারের আর নেতা শেখ মুজিবের সাথে একনিষ্ঠ-নিবিষ্ট-একাকার ছিলেন বেগম মুজিব। পড়াশোনার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল ফজিলাতুন্নেছার। ঐ সময়টাতে গ্রামে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া আসার পরিবেশ তৈরি হয়নি। বলা যায় নিষেধ ছিল। প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী শেখ পরিবার অকালে পিতৃহীন ফজিলাতুন্নেছাকে স্থানীয় মিশনারী স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভর্তি করিয়ে দেন। তিনি নিজস্ব চেতনায় ও তাগিদে সৃজনের স্বকীয় জায়গা করে নিতে স্বেচ্ছায় পড়ালেখা করতেন। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি ভাললাগায় রেণুর জন্য গৃহশিক্ষকও রাখা হয়েছিল। আরবি শেখানোর জন্য আরবি শিক্ষক আর বাংলা-ইংরেজি-অংশ শিক্ষার জন্য আলাদা গৃহশিক্ষক ছিল। উচ্চ শিক্ষার প্রতি প্রবল আগ্রহী রেণু ছোটবেলা থেকেই পাঠ্য বইয়ের বাইরে সৃজনশীল প্রচুর  বই পড়তেন। পারিপাশির্^কতার কারণে নিজের উচ্চশিক্ষা না হলেও সন্তানদের শিক্ষার ব্যাপারে তিনি বিন্দুমাত্র পিছপা হননি।
৭৫-এর পনের আগস্টের নির্মমতার আগ পর্যন্ত ৩৩ বছরের তাঁদের দাম্পত্য জীবনে বঙ্গবন্ধু ১৩ বছর ৬ মাস জেলে কাটিয়েছেন। শত বাধা-বিপত্তি, বিপদ-আপদের মধ্যেও তিনি ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার বিষয়টি আলাদা দৃষ্টিতে। দেখে বিবেকবান ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। খোকা থেকে শেখ মুজিব। শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হওয়ার পথটা যেমন মসৃণ ছিল না, ঠিক তেমনি রেণু থেকে বঙ্গমাতা হওয়ার দীর্ঘপথটি কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। বার বার হোঁচট খেতে খেতে এগিয়ে চলেছে। কখনো ভীতি কিংবা শঙ্কার দিকে ফিরেও তাকাননি। এই জন্যই মূল আগ্রহের জায়গা এখন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। চিরদিনের মতো এক সমৃদ্ধ-স্মৃতিনির্ভর-কাহিনি সৃষ্টি করে গেছেন। আমাদের কবিগুরু যথার্থই বলেছিলেন-
‘নাম মনে রাখা তো স্মৃতি নহে
প্রাণ ধরিয়া রাখাই স্মৃতি।’
বর্তমানে বাঁচি, ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করি, কল্পনা করি, আর পেছনে ফেলে আসা অতীতকে নিয়ে গর্ববোধ করি। আমাদের নৈতিক প্রকাশ এখানেই। রক্তে, মজ্জায়, শিরা-উপশিরায় প্রবহমান যাঁর ‘বাংলাদেশ’ তাকে নিয়ে আবেগে-উচ্ছ্বাসে, চিন্তায়-মননে, নীরবতার বলয় ভাঙ্গা নৈতিক দায়বোধের মধ্যে পড়ে। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ছিলেন একে অপরের পরিপূরক। নিজে আপাদমস্তক গৃহিণী হয়েও স্বামীর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাহসী বয়ান দিয়ে সহযোগিতা করে গেছেন। যে কোন বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেন অসীম ধৈর্য, সাহস ও দৃঢ়তা নিয়ে। বাল্যজীবনের ধূসরতার সাথে তার রয়েছে প্রাণের স্পন্দন। তিনি মনে-প্রাণে পূর্ণ আদর্শ বাঙালি নারী, বুদ্ধিদীপ্ত, শান্ত, আতিথেয়তাপরায়ণ ও দানশীল ব্যক্তিত্ব।
সময়ে সময়ে বঙ্গবন্ধুর কারাবন্দিত্বকালে রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতদ্বৈততার কঠিন সংকঠে তিনি অতুলনীয় বৌদ্ধিক পরিচয় দিয়ে সমাধান দিয়েছেন। বিচক্ষণ পরামর্শদাতার ভূমিকা অবতীর্ণ হতেন। পরিবার-পরিজনদের সংকটে পাশে দাঁড়ানোর রুটিন তো তার ছিলই। পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত বিষয়, রোগ-শোক, পরিবারের ব্যয়ভার নির্বাহ, কারান্তরীণ কর্মীদের খোঁজ নেওয়া, আর্থিক সংকট থেকে সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগীতা করা ছিল তার রক্তে মেশানো নেশা। সুখে-দুঃখে বঙ্গবন্ধু ও তার প্রিয় দল আওয়ামী লীগের সারথি হিসাবে তাঁর এই অবদান ইট-সুরকি-সড়ক-উপসড়ক-সেতু-কালভার্ট উন্নয়নের সাথে মিলিয়ে দেখলে হবে না। বিচার করতে হবে দুর্নিবার-দুরাবস্তার মধ্যে তাঁর ভাবনা- বেদনা-বক্তব্য।
বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের পুরোটা সময় ব্যয় করেছেন জনগণের সেবায়। দেশের মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য তিনি বারবার বেদনাদায়ক কারাভোগ করেছেন। সে সময়ে দক্ষ মাঝির মতো রাজনৈতিক, পারিবারিক হাল ধরেছেন বঙ্গমাতা বেগম মুজিব। ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক নেতা হয়ে ওঠার পেছনে তিনি সর্বত্যাগী ভূমিকা রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে পাওয়া যায়-
‘রেণু আমাকে যখন একাকী পেল, বলল, জেলে থাকো আপত্তি নাই, তবে স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখো। তোমাকে দেখে আমার খুব মন খারাপ হয়ে গেছে। তোমার বুঝা উচিত আমার দুনিয়ায় কেউ নাই। ছোটবেলায় বাবা-মা মারা গেছেন।’ তার অশ্রুভরা এই আকুতি বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের জন্য ত্যাগের পরিমাণ অনুধাবন করা যায়।
বাঙালির ভাগ্য যখন ৭ই মার্চে রেসকোর্স ময়দানের উপর নির্ভর করছে। দেশি-বিদেশী কঠিন ষড়যন্ত্রের মুখে বঙ্গবন্ধু দ্বিধাগ্রস্থ, তখন ত্রাণকর্ত্রী হয়ে আবির্ভূত হলেন বেগম মুজিব। শেখ হাসিনার ভাষায়- ‘আমি মাথার কাছে বসে, মা মোড়াটা টেনে নিয়ে আব্বার পায়ের কাছে বসলেন। মা বললেন, মনে রেখো তোমার সামনে লক্ষ মানুষের বাঁশের লাঠি। এই মানুষগুলোর নিরাপত্তা এবং তারা যেন হতাশ হয়ে ফিরে না যায় সেটা দেখা তোমার কাজ। কাজেই তোমার মনে যা আসবে তাই তুমি বলবা, আর কারও কোন পরামর্শ দরকার নাই। তুমি মানুষের জন্য সারাজীবন কাজ করেছে। কাজেই কী বলতে হবে তুমি জানো।’ এর পরের ইতিহাসের কথা মনে কর তো আর কোন উপলক্ষ্যের দরকার হয় না। কারো অগোচরে নেই। সেই দিনের মহাকাব্যিক শ্লোকের ভেতর মনের একান্ত গোপন কথা ছিল-
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’
৫ ফুট ১১ ইঞ্চি দীর্ঘদেহী তেজোদীপ্ত রাজনৈতিক শেখ মুজিব লেখক হয়ে ওঠার গল্পেও শেখ ফজিলাতুন্নেছার অপরিমেয় মৌল দর্শনের নির্ভরযোগ্য অবদান। অসমাপ্ত আত্মজীবনীর আড়ালে বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের জোরে দৌড় শুরু করার যে ইতিহাস তার পেছনে রয়েছে অনুপ্রেরণামূলক সরল উক্তি।
‘বসেই তো আছ, লেখো তোমার জীবনের কাহিনি’
বঙ্গবন্ধুর সকল কঠিন কাজের সুষ্ঠু পরিণতির প্রতিটি পর্যায়ে পর্দার আড়ালে আপোষহীন ভূমিকা রেখেছেন বঙ্গমাতা। আন্দোলন, সংগ্রাম, সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে আকঁড়ে থেকে পর্দার অন্তরাল থেকে দৃঢ়, কৌশলী এবং বলিষ্ঠ অবদান রেখে গেছেন। বেগম মুজিব জীবনে কখনো ছন্দছাড়া হননি। উত্তরাধিকার সূত্রে যতটুকু অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছিলেন তার পুরোটাই তিনি ব্যয় করেছেন নিঃস্বার্থভাবে সংসার আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক রাজনীতির পিছনে। বসতবাড়ি নির্মাণের ঋণ সুযোগ নিয়ে বঙ্গবন্ধু ভবন খ্যাত অচিন্তনীয় ধাত্রীভূমি ৩২ নম্বর সৃষ্টি করেছিলেন।
 বঙ্গবন্ধু সত্তারই একটি অংশ বঙ্গমাতার চরিত্রপ্রকৃতির বিচিত্র রূপ। বঙ্গবন্ধুর অভিব্যক্তিতেই বারবার ফুটে উঠেছে। একবার বলেছেন- ‘রেণু আমার পাশে না থাকলে এবং আমার সব দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন, বারবার কারাবরণ, ছেলেমেয়ে নিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন হাসিমুখে মেনে নিতে না পারলে আমি আজ বঙ্গবন্ধু হতে পারতাম না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রতিটি কাজে সবাইকে সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছে, আমি জেলে থাকলে নেপথ্যে থেকে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছে’।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণাদায়ী বঙ্গমাতা শুধু শেখ মুজিবের সহধর্মিণী নন, তিনি পরামর্শক, সমর্থক ও সহায়ক শক্তি। আজীবন বাংলার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণকারী সিদ্ধান্তের পিছনের অবিস্মরণীয় আলোকবর্তিকা বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী পালন শুরু হয় অনেক দেরীতে। ২০০৩ সালের আগে দলীয়ভাবে ঘরোয়া পরিবেশ সাদামাঠা করা হতো। ঐ বছরই দাবী ওঠে আনুষ্ঠানিকভাবে পালনের। স্বাধীনতা সংগ্রামের সাহসী এই মহীয়সী নারীর জন্মদিন জাতীয় দিবস ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পদক প্রদানের প্রস্তাব করা হয়। ২০১২ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৩ তম জন্মবার্ষিকী জাতীয় আবহে পালনের সময় ‘বঙ্গমাতা’ অভিধায় ভূষিত করেন।
বাঙালির স্বভাব কূটাভাস ভরা। পুরোভাগে ঢুকে গেছে দ্বিধা- দোমনা- রেষারেষি-লাগালাগি। মানুষের স্মৃতির ভেতর অতীত যেমন থাকে, তেমনি খানিকটা জুড়ে থাকে বর্তমানও। বর্তমান আত্মসমীক্ষার মধ্য দিয়ে ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সরকার ৮ আগস্টকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্তির জাতীয় দিবস ঘোষণা করে। বঙ্গমাতার আত্মনিবেদনের অবদান চিরস্মরণীয় করে রাখতে নারীদের জন্য চালু করা হয় বিশেষ সম্মাননা পদক। দেশ মাতৃকার প্রতি নির্মোহচিত্তের জাগ্রত তাড়নাকে স্বীকৃতি দিতে এই সম্মাননা পদককেও সর্বোচ্চ জাতীয় মর্যাদা ‘ক’ শ্রেণিভূক্ত করা হয়। ধীশক্তিসম্পন্ন তী² বুদ্ধিমত্তার অধিকারী দেশের প্রথম ফার্স্ট লেডি মহীয়সী এই জননীর জন্মদিনে কৃতজ্ঞ চিত্তে অশেষ শ্রদ্ধা।

এই বিভাগের সব খবর

অঞ্জলি লহ মোর হে প্রিয় কবিগুরু

২৫ শে বৈশাখ বাঙালি জাতির কাছে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতিক উৎসবের দিন। প্রতিবছর এদিনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাঙালি...

বিশ্বমানের পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলাই আমার প্রধান লক্ষ্য : সিডিএ’র চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ বলেছেন, চট্টগ্রামকে বাসোপযোগী এবং বিশ্বমানের পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলাই আমার প্রধান লক্ষ্য। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি...

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও বৈশ্বিক অভিবাসন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আইওএম’র কার্যকর ভূমিকা আশা করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২৪ প্রকাশ করেছে। ২০০০ সাল থেকে দ্বিবার্ষিকভাবে প্রকাশ হয়ে আসা এই আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন এবারই প্রথম তাদের সদর...

সর্বশেষ

অঞ্জলি লহ মোর হে প্রিয় কবিগুরু

২৫ শে বৈশাখ বাঙালি জাতির কাছে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ...

বিশ্বমানের পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলাই আমার প্রধান লক্ষ্য : সিডিএ’র চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ...

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও বৈশ্বিক অভিবাসন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আইওএম’র কার্যকর ভূমিকা আশা করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২৪ প্রকাশ...

মহামারী মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও সাড়াদানে উচ্চ-পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অপরিহার্য : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা স্থাপন, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা পদক্ষেপে...

উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিবেচনা করুন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে দেশের...

২ ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় বাংলাদেশের

দুই ম্যাচ হাতে রেখেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিত...