গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত। রেজি নং – ১৬৯

ইমরান খাঁনের ৫ বছরের কারাদণ্ড,গ্রেফতার ও পাকিস্তানের ইতিহাসের বেদনাদায়ক কিছু সত্য

আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আজকের প্রধান শিরোনাম ছিলো পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী,তেহরিক-ই- ইনসাফ দলীয় প্রধান ও সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খাঁনকে আজ ৫ ই আগষ্ট নিম্ন আদালত কর্তৃক তোশাখানা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান।পরপরই তাঁকে আটক করে জেলে প্রেরণের খবর। গত মে মাস থেকেই এমন কিছু একটা ঘটার আশংকা করে আসছিলেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকগণ।পাকিস্তানী ইতিহাসের ধারা এমন কিছু ঘটবার ইঙ্গিতই দিচ্ছিলো।

দেশ ও বিদেশে তুমুল জনপ্রিয় এই নেতাকে নিজের পূর্বসূরীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশত্যাগের জন্য অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী পরামর্শ দিলেও ইমরান খাঁন তা করতে সরাসরি অস্বীকার করেছেন।এমন পরিণতির কথা জেনেও তিনি দেশে থেকেই নিজের বিরুদ্ধে দায়ের করা শতাধিক মামলা আইনগত ভাবেই মোকাবেলা করার কথা বলেছিলেন।তাঁকে দেশত্যাগের জন্য বাধ্য করতে চিত্রনাট্যও সাঁজানো হয়।একের পর এক শীর্ষ নেতাকে দলত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়,দেশজুড়ে তাঁর অনুসারীদের উপর নিপীড়ন সত্বেও ইমরান খাঁন দেশ ছেড়ে যাননি।তাঁর এই অনমনীয় অবস্থান অদূর ভবিষ্যতে তাঁকে কোথায় নিয়ে যাবে তা সময়ই বলে দিবে।রাজনৈতিক দৃষ্টিতে নিঃসন্দেহে তিনি বীরোচিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আজকের বেদনাদায়ক পরিনতি বরণ করলেন। ইমরান খানের আজকের পরিণতি নিশ্চয়ই শেষ কথা নয়।কিন্তু এক বিপরীতমূখী ইতিহাসের ধারাবাহিক শিকার পাকিস্তানের এই রাজনৈতিক নেতা।আন্তর্জাতিক ভাবে যতোই ধিকৃত হোকনা কেন পাকিস্তানের বাস্তবতা হলো দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা।কখনো অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরাসরি, কখনও নেপথ্যে থেকে অঙ্গুলি নির্দেশনার মাধ্যমে।কথা মতো কাজ করলে ক্ষমতার মসনদে টিকে থাকা আর ব্যতয় ঘটলে ইমরান খানের পরিণতি বরণ করা।

আজ আপনাদের সামনে দেশটির ইতিহাস থেকে তুলে আনা কিছু বেদনাদায়ক সত্য উপস্থাপন করতেই এই লেখার অবতারণা।বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দীকে দিয়ে সূচিত পাকিস্তানের ইতিহাসের কালো অধ্যায়টির সবশেষ শিকার ইমরান খাঁন।দেশটির নির্মম ইতিহাসে নির্বাচিত নেতাদের সাথে এহেন করুণ আচরণের অসংখ্য অপ্রীতিকর উদাহরণ রয়েছে। তালিকার প্রথমটি হলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ যিনি পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।১৯৬২ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের ভুয়া অভিযোগে কারাগারে রাখা হয়।তাঁর আসল অপরাধ ছিল সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খানকে সমর্থন করতে অস্বীকার করা। তারপরের শিকার জুলফিকার আলী ভুট্টো।যিনি দেশটির নবম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।১৯৭৪ সালে একজন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।সামরিক আদালতে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।এবং ৪ এপ্রিল ১৯৭৯-এ জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। তারপর এই খড়গ নেমে আসে ভূট্টোর কন্যা ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান বেনজির ভুট্টোর উপর।বেনজির ভুট্টো ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ এবং আবার ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত দুবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।দেশের একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রীকে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।প্রথম ১৯৮৫ সালে এবং ৯০ দিনের জন্য গৃহবন্দী করা হয়েছিল।এরপর আগস্ট ১৯৮৬।করাচিতে এক সমাবেশে সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউল হকের নিন্দা করার জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।এপ্রিল ১৯৯৯ সালে তাঁকে দুর্নীতির জন্য পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি রুপি জরিমানা করা হয়েছিল।তিনি স্ব-নির্বাসনে থাকায় গ্রেফতার এড়িয়ে যান। এরপর তালিকায় যুক্ত হন পাকিস্তানের আরেক বৃহৎ রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের নওয়াজ শরিফ। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতা গ্রহণের পর নওয়াজ শরিফকে ১৯৯৯ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং পরে ১০ বছরের জন্য নির্বাসিত হয়েছিলেন তিনি। এরপর জুলাই ২০১৮ সালে তাঁকে দুর্নীতির মামলায় তার মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ সহ ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।একই বছরের ডিসেম্বরে তাঁকে আল- আজিজিয়া স্টিল মিলস দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।তিনি ২০১৯ সালে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন এবং অদ্যাবধি আর ফিরে আসেননি।যদিও সামরিক বাহিনীর বদান্যতায় তাঁর ভাই শাহবাজ শরিফ এখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী! তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) দুর্নীতির মামলায় ২০১৯ সালের জুলাই মাসে আরেক নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।কিন্তু পরে তিনি জামিন পেয়েছিলেন।

ইমরান খানকেও ৯ মে ২০২৩ এ অন্য একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের কয়েক দিন পরে মুক্তি পান।যা এই লেখনীর শুরুতে উল্লেখ করেছিলাম। তাঁর দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং গ্রেপ্তারের বিষয়ে মন্তব্য করে,বিখ্যাত সাংবাদিক এবং জিও নিউজের উপস্থাপক হামিদ মীর বলেছেন যে তিনি কারাগারে পাঠানো প্রথম পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নন এবং শেষও হতে পারেন না। প্রথমে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তারপর জুলফিকার আলী ভুট্টো, তারপর বেনজির ভুট্টো, তারপর নওয়াজ শরিফ এবং এখন ইমরান খান। প্রধানমন্ত্রী এবং রাজনীতিবিদদের সবসময় শাস্তি দেওয়া হয়।তিনি আজ তাৎক্ষণিক এক টুইটে এই মন্তব্য করেছেন।তিনি আরও বলেন,পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রী এখনও তাদের পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেননি।সম্পূর্ণ বিপরীতে চার সামরিক স্বৈরশাসক যথাক্রমে আইয়ুব খাঁন, ইয়াহিয়া খাঁন, জিয়াউল হক এবং পারভেজ মোশাররফ কেউই নির্বাচিত সরকারকে পতন এবং সংবিধানকে বিপর্যস্ত করার জন্য বিচারের সম্মুখীন হননি। এটাই পাকিস্তানের ইতিহাসের বেদনাদায়ক বৈপরীত্যের চিত্র।

লেখক:-সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

এই বিভাগের সব খবর

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে মিয়ানমারের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সাথে মিয়ানমারের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত অং কিও মো আজ সাক্ষাত করেছেন। আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই সাক্ষাত অনুষ্ঠিত হয়। রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকারসহ...

বিএনপি নেতারা মানসিক ট্রমায় ভুগছেন : ওবায়দুল কাদের

বিএনপি নেতারা মানসিক ট্রমায় ভুগছে, সে কারণে আবোল তাবল বলছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল...

অক্টোবরে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন

চট্টগ্রাম মহানগরে আওয়ামী লীগের ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটির সম্মেলন আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। যা শুরু হবে চলতি সপ্তাহ...

সর্বশেষ

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে মিয়ানমারের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সাথে মিয়ানমারের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত অং...

বিএনপি নেতারা মানসিক ট্রমায় ভুগছেন : ওবায়দুল কাদের

বিএনপি নেতারা মানসিক ট্রমায় ভুগছে, সে কারণে আবোল তাবল...

অক্টোবরে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন

চট্টগ্রাম মহানগরে আওয়ামী লীগের ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটির...

চুয়েটের সাথে তিনটি সংস্থার সমঝোতা স্মারক

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)- এর সাথে সিগনাল...

প্রবাসীর স্বর্ণ ছিনতাই, পুলিশের এসআইকে হাতেনাতে ধরল জনতা

চট্টগ্রামে পাঁচলাইশ থানাধীন টাইগার পাস এলাকায় স্বর্ণ ছিনিয়ে নিয়ে...