গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত। রেজি নং – ১৬৯

স্বাধীনতার ১ম ঘোষণা পাঠকারী এম.এ হান্নান স্মরণে

১৯৭৪ সালের ১২ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের কাছে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এম.এ হান্নান। জন্ম ১৯৩০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী পশ্চিমবঙ্গের তেহট থানার ঘাসপুর গ্রামে। তাঁর পিতা মাওলানা মোহাম্মদ মুহিবুর রহমান বিট্রিশ-ভারত কংগ্রেসে ও পরে মুসলিমলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।

১৯৪৮ সালে তিনি স্বপরিবারে মেহেরপুর জেলার আমঝুপিতে এসে বসতি স্থাপন করেন। ১৯৪৯ সালে মেহেরপুরের দরিয়াপুর হাইস্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং ১৯৫১ সালে কুষ্টিয়া কলেজ থেকে আই.এ পাশ করেন। ঢাকায় জগন্নাথ কলেজে বি.এ অধ্যায়নকালে তিনি ’৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। পরে চট্টগ্রামে এসে সিটি কলেজে নৈশ বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সম্মেলনে (আই.এল.ও কনভেনশনে) যোগ দেন তিনি।

জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-সভাপতি বাংলাদেশ রেল শ্রমিকলীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বিশাল রাজনৈতিক বর্ণ্যাঢ্য জীবনের কথা এ প্রজন্ম আদৌ জানে কিনা আমার সন্দেহ ? ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। ‘৬২ এর কুখ্যাত হামিদুর রহমানের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ‘৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে আন্দোলন ‘৬৮ ও ‘৬৯ এর গণআন্দোলন, ’৭০ এর নির্বাচন ’৭১ এর মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ২৬ মার্চ বিকাল বেলায় প্রথম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণার কথা প্রচারকারী এই মহান নেতা বহু আন্দোলন সংগ্রামে প্রতিকৃত ও দলের কান্ডারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত প্রিয়জন ও আস্থাভাজন ছিলেন। চট্টল সার্দুল মরহুম এম.এ আজিজের সাথে মূলত তিনি রাজনীতি করতেন। মরহুম এম.এ হান্নান আমার পরম আত্মীয়। তাঁর ৪র্থ ছেলে মাহফুজ ছিলেন আমার ছোট বেলার বন্ধু। আন্দরকিল্লা এম.ই.এস স্কুলে আমরা একসাথে লেখাপড়া করতাম। ১৯৮২ সালে স্বৈরাশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে একসাথে দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলাম।

বছর সাতেক পরে আমার ছোট বোন শাহানার সাথে তার বিয়ে হয়ে। কাতালগঞ্জ বৌদ্ধ মন্দিরের পার্শ্বে বঙ্গবন্ধুর দেয়া একটি বাড়ীতে এম.এ হান্নান স্বপরিবারে থাকতেন। তাঁর বড় ছেলে মারুফ ভাই, ফারুক, মাসুদ, মাহফুজ, মাসুম ও মামুন, বড় মেয়ে রোজী আপা, ডেজী, মুক্তি, লাকী আমরা সবাই একসাথে আড্ডা দিতাম। ডেজীর স্বামী এফ.আই কামাল বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন। এছাড়া ফারুক ভাই রাশিয়ান একটি মেয়েকে বিয়ে করে দেশে এনেছিলেন, অত্যন্ত মিশুক ছিলেন ভাবী। খালাম্মা আমাকে খুব ¯েœহ করতেন। তিনি আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তাঁর জন্মও ছিল মাদারবাড়ীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। আমার বোন শাহানাও ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল মস্তিকে রক্তক্ষরণে মৃত্যুবরণ করে। নিউ মার্কেটের নিচ তলায় বিকিকিনি নামে তাদের একটি কাপড়ের দোকান ছিল। মাঝে মধ্যে গিয়ে আমি সেখানেও আড্ডা দিতাম। কিছুদিন পর উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ফারুক ভাই রাশিয়া চলে যান। মাসুদ ভাই কানাডায়। তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বর্তমানে সামাজিক ও ব্যবসায়িকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত। মেয়েরা সবাই দেশের বাইরে কানাডা, আমেরিকাতে সবাই সপরিবারে ব্যবসায়িক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।
আমার ছোট বোন শাহানাকে খালাম্মা অত্যন্ত স্নেহ করতেন ছেলের বউ হিসেবে নয় যেন নিজের গর্ভে ধারণ করেছেন। এম.এ হান্নানের স্ত্রী হিসেবে তাঁর মাঝে কোন অহংকার ছিল না। তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও একই রকম। এম.এ হান্নান বেঁচে থাকলে হয়তো বা এমপি হয়ে মন্ত্রী হতেন। বেঁচে থাকা অবস্থায় কোন দিন তাঁর মাঝে কোন উচ্চ বিলাসী চিন্তা ভাবনা ছিল না। ৭০ ও ৭৩ এর নির্বাচনে তিনি ব্যতিত সকলেই দলীয় মনোনয়ন নিয়েছিলেন। দলের প্রতি সদা আনুগত্য ছিল তাঁর। এটি রাজনৈতিক জীবনের একটি বড় বৈশিষ্ট যা এখনকার নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে আশা করা যায়না।
তিনি যে গাড়ীতে সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন সেই ‘ভক্সেল ভিভা’ গাড়ীটি তাঁর কাতালগঞ্জ বাড়ীতে দীর্ঘদিন পড়েছিল। আমি সব সময় সে গাড়ীর আশে পাশে ঘোরা ফেরা করতাম। কারণ, তাঁর মুত্যুটি আমার কাছে স্বাভাবিক ছিল না।
১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের নামকরণ করেন মরহুম এম.এ হান্নানের নামে। কিন্তু, অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বসবতী হয়ে পাঁচ বছর পর খালেদা জিয়া সরকার গঠন করে এম. এ হান্নানের নাম পরিবর্তন করে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নাম করণ করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন, তিনি যেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম এম.এ হান্নানের নামে একটি বড় ধরনের স্থাপনা তৈরী করেন। যাতে এ প্রজন্ম জানতে পারে এ মহান নেতার সম্পর্কে। পরিশেষে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে ফরিয়াদ করি তিনি যেন তাঁকে জান্নাতবাসী করেন।

লেখক :শ্রম বিষয়ক সম্পাদক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ

 

এই বিভাগের সব খবর

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে মিয়ানমারের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সাথে মিয়ানমারের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত অং কিও মো আজ সাক্ষাত করেছেন। আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই সাক্ষাত অনুষ্ঠিত হয়। রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকারসহ...

বিএনপি নেতারা মানসিক ট্রমায় ভুগছেন : ওবায়দুল কাদের

বিএনপি নেতারা মানসিক ট্রমায় ভুগছে, সে কারণে আবোল তাবল বলছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল...

অক্টোবরে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন

চট্টগ্রাম মহানগরে আওয়ামী লীগের ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটির সম্মেলন আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। যা শুরু হবে চলতি সপ্তাহ...

সর্বশেষ

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে মিয়ানমারের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সাথে মিয়ানমারের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত অং...

বিএনপি নেতারা মানসিক ট্রমায় ভুগছেন : ওবায়দুল কাদের

বিএনপি নেতারা মানসিক ট্রমায় ভুগছে, সে কারণে আবোল তাবল...

অক্টোবরে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন

চট্টগ্রাম মহানগরে আওয়ামী লীগের ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটির...

চুয়েটের সাথে তিনটি সংস্থার সমঝোতা স্মারক

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)- এর সাথে সিগনাল...

প্রবাসীর স্বর্ণ ছিনতাই, পুলিশের এসআইকে হাতেনাতে ধরল জনতা

চট্টগ্রামে পাঁচলাইশ থানাধীন টাইগার পাস এলাকায় স্বর্ণ ছিনিয়ে নিয়ে...