পৃথিবীর মধুরতম শব্দটি “মা। ভালোবাসার অতল সমুদ্রের নাম “মা ” আমাদের জীবনে বিশাল একটি অধ্যায় হচ্ছে “মা “।নিজেকে প্রতিনিয়ত ধন্য মনে করি এক আদর্শ মায়ের সন্তান হিসাবে। আজ আমার ‘মা পৃথিবীতে নেই।
মায়ের সুমধুর স্মৃতিগুলো অন্তরে প্রশান্তির দীপ্তি ছড়ায়।
ধার্মিক, সত্যবাদী, মিষ্টভাষী, সদালাপী ও উদার মানসিকতার কারণে “মা আমাদের আদর্শ, মা আমাদের অহংকার। মিয়া বংশের সওদাগরের মেয়ে হলেও মায়ের সেরকম কোনোদিন অহংকার ছিল না। মা ‘ছিল মাটির মতো নরম সহজ সরল। আমার ‘মা জঠিলতা বিষয়গুলো কোনোদিন বুঝতো না। খুব সাদাসিধা কোনো জঠিল বিষয় নিয়ে কোনোদিন মায়ের সাথে কথা হয়নি আমাদের।
কারণ এসব বিষয় নিয়ে কথা বলা মা’র পছন্দ না।বাবার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মাত্র এগার বছর বয়সে। তখনকার দিনে খুব অল্প বয়সে বিয়ে দিতো মা, বাবারা, ছেলেমেয়েদের তাই আশর্য হবার কিছু নেই। তখন ‘মায়ের মুখ থেকে মায়ের ছোট, ছেট, স্বপ্ন, কৈশোরিকা জীবনভাবনা শুনতে আমার খুব ভালো লাগতো! এতো খানদানি পরিবার থেকে এসেও বাবার সংসারে তাঁর বড় ধরনের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা আবদার, চাওয়া-পাওয়া, বলতে গেলে মায়ের কোনো প্রকার শখ ছিলো না। অন্য মায়েরা কেমন হন জানি না। তবে আমার “মা ‘অন্যরকম। কোনোদিন দেখলাম না বাবাকে বলতে তাঁর কোনোকিছুর প্রয়োজন আছে। কিভাবে সন্তানদের ভালোরাখা যায় সেটাই দেখতেন।
মায়ের অনেকগুণ ছিল। আমার ‘মা ‘সেরা গুণবতী এবং সুন্দরী চরিত্রবান ছিলেন। সন্তান হিসাবে আমরা অবশ্যই গর্ববোধ করি। শাদা শাড়ি মায়ের খুব পছন্দ ছিলো তাই ‘মা ‘সবসময় শাদা শাড়ি পরতেন।
আত্মীয় স্বজনরা মায়ের সরলতা নিয়ে গর্ব করতেন এবং ভালোবাসতেন। মানুষের প্রতি মায়ের এমন মমত্ববোধ দেখে আমি অবাক হতাম।
এমন ‘মা ‘পাওয়া আমার জন্য সাত জন্মের ভাগ্য। আল্লাহর পক্ষ হতে অশেষ নেয়ামত ও বিশাল প্রাপ্তি।
মুগ্ধ হয়ে দেখতাম মায়ের অনন্যরূপ। ডাইনিং রুমে মা বসে থাকতেন সবাইকে নিয়ে একসাথে খাওয়ার জন্য। যত রাত হোক মা ‘ঘুমাতেন না। ভাইয়ারা না আসা পযর্ন্ত অপেক্ষা করতেন।
তখন খুব চঞ্চলা ছিলাম। খেলাধুলার পাশাপাশি অনেক দুষ্টমি করতাম, মা তেমন বকা দিতেন না।
ভাইয়েরা আমাকে শাষণে আদরে চোখে চোখে রাখতেন। পরিবারের ছোট মেয়ে বলে, ভুলের কারণে যাতে নষ্ট হয়ে না যাই।
তারপর আমি আমার মতো, আমি কাউকে অনুসরণ করতাম না। আমি আমার মতো জীবনকে গুছিয়ে নিতাম। এইভাবে কড়া নিয়মের মধ্য আমার জীবন কেটে যেতো! ‘মাকে সবাই আমার জন্য কত বকা দিয়ে বলতেন, তোমার রাজকন্যাকে মাথায় তুলে রাখো।
মা, সবসময় আমার ছোট ছোট, দোষগুলো আড়াল করতেন। মা বলতো আমার মেয়ের কোনো দোষ নেই, আমার মেয়ে কোনো অন্যায় করতে পারে না।তারপর ও মা মনে, মনে, আমাকে নিয়ে বড্ড দুঃচিন্তা করতেন। আমি কিভাবে সংসার জীবন করবো?
কিভাবে জীবনকে সাজাবো? তাঁর ভাবনার দেয়ালজুড়ে শুধু আমি।
যখন ভালোবাসা, আবেগ, সম্পর্কগুলো বুঝতে শিখি তখন ‘মা ‘অনেক দূরে,, হাত বাড়ালেও মাকে কাছে পাই না। সেসব কথা মনে হলে এখনো কেঁদে ফেলি।ভাবতে থাকি জীবনটা এতো ছোট কেন? আরো কিছুদিন মাকে কাছে পেতাম। অনেক কথা জমে অাছে মাকে বলার।
মা নেই ভাবতে নীল বেদনায় তখন আমার কুঁকড়ে ওঠে বুক। আর কাছে ডাকবে না মা বলে এমন কথা মনে হলে চোখ ঝরে পানি।
মায়ের মৃত্যুর পর সে সবুজ ছায়াঘেরা বিশাল তিনতলা বাড়িটি চোখের পলকে থমকে গেল।
ঝিমধরা প্রাণহীন একটি প্রাসাদ। জীবন আনন্দের সব কোলাহল ঝালাই করে নিতাম। আগের মতো আর আড্ডা জমে না।
“মা স্ট্রোক করার পরও বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে আমাদের সবার জন্য অপেক্ষা করতেন।
মায়ের কোলের মত নিরাপদ আশ্রয়স্থল কোথায় আছে?
আর কোনো স্নেহের গন্তব্য খোলা নেই।
মায়ের কথাগুলো বড্ড মনে পড়ে, মায়ের মতো দরদী আর কেই নেই। মায়ের সাথে সোনালি সময়গুলো ভেবে চোখ ভেজাই!
মায়ের সে চাঁদ মুখখানা আর দেখা হয় না।
মা-যে আকাশের তারা আমি হলাম সর্বহারা।
মাকে খুব বলতে ইচ্ছে করে, মা ও মা তুমি কি দ্যাখতে পাও, ওই দূর আকাশ থেকে, দ্যাখ, তোমার সে দূরন্ত কিশোরী মেয়েটি এখন আর ছুটে না, সবুজ মাঠে, উদাস দুপুরের দস্যিপনা, গল্পবলা, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টিতে ভিজে বৃষ্টির ছন্দে মনের আনন্দে নাচ, গান, বিকালের ছাদে, হাসনাহেনার মাতাল করা গন্ধ,, পেয়ারা, পেঁপের, আমলকি্ আমের মজাদার সব ভর্তা। উধাও হয়েছে মনের সকল ইচ্ছা। তোমার দস্যি মেয়েটা অাজ কতো নিরব, গুছিয়ে সংসার সাজিয়েছে, তুমি কি দেখতে পাও? তোমার মেয়ের সাজানো বাগানে সুন্দর, সুন্দর, ফুল ফুটেছে। তবুও তুমি ছাড়া আমি একা বড্ড একা।
তোমার আঁচলে মুখ লুকাতে পারি না, অামার কষ্ট কোথায় বলতে পারি না, কেন? মনে হয়্ আমি নিঃস্ব। চেয়ে দেখি অামার পাশে কোথাও কেউ নেই। তুমি শিখালে সৎপথে চলা, পরাজয় মেনে না নেয়া, অন্যায় সহ্য না করা,যাঁরা সৎপথে জীবিকা অর্জন করে তারাই আল্লাহর প্রিয়বন্ধু।
অসৎ আনন্দের চেয়ে পবিত্র বেদনা অনেক মহৎ।
পরমশান্তি লাভের পথ হচ্ছে ক্রমাগত সৎ জীবনযাপন করা।আঁধার কালো সরিয়ে জ্বালাতে আলোর শিখা।
ছোট্ট বুকটা কেন? এতো কষ্ট পায়। মনে হয় তুমি আছো আমার চৌপাশে আমাকে ডাকো, তখন্ আমার তোমার বোকা মেয়ে হয়ে আছি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে অামাকে ডাকছো তাই ভেবে বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে।
কিছুতেই চোখের পাতা এক করতে পারি না। বারবার তোমার নিস্পাপ চাঁদমুখটা সামনে। মনে হয় এই তো তুমি।
এক নিখাদ ভালোবাসা যেখানে যাই শুণ্যতা অনিঃশেষ অন্তর্দাহ হয়,
, দূর অাকাশে থেকে ও অামার বুকের ঘরে তোমার বাস।
মায়ের রুমে গেলে অবরুদ্ধ ক্রন্দন অার বুকের মাঝে শোক বিরাজ করে।মনে হয় বিছানায় শুয়ে অাছেন অামার ‘মা। মায়ের পুরানো শাড়িতে মুখ চেপে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠি। মায়ের দেহের মিষ্টি ঘ্রাণ কুঁড়ে,কুঁড়ে খাচ্ছে অামাকে। যেন বুকের ভিতর মাকে “খুঁজে পাই।
মায়ের সেসব কাপড়ের কাপড়ের গন্ধ শুঁকে শুঁকে কাটুক অামার বাকী জীবন। অামি জানি অামার মা অাছে বেহশতের ফুলবাগানে, ফেরেস্তারা পাহারা দেয় তাই অামার কাছে অাসে না। মা ‘তুমি পরী হতে পারো না,যখন মন চায় অামার কাছে উড়ে অাসতে, তুমি নীল অাকাশের তারা হলে কেন? চুপচাপ বসে কি সব দেখছো। রাত হলে অামি ওই অাকাশের তাঁরার মাঝে খুঁজি কোনটা অামরা “মা “