গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত। রেজি নং – ১৬৯

তরুণরাই বাংলাদেশের কারিগর

‘দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ/ ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল/আছে কার হিম্মৎ?/ কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।’ -কাজী নজরুল ইসলাম এই লাইনগুলো দিয়ে সেই কা-ারিদের আহ্বান করেছেন যাদের ওপর নির্ভর করে আছে জাতির ভাগ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ভিশন হবে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশ বিনির্মাণ। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতির ভাগ্য নির্ধারক এ দেশের তরুণরা। তরুণদের সামাজিক এবং ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন দিকে সমস্যার সমাধানে উন্নয়নশীল হওয়া এবং নতুন কিছু উদ্ভাবন করার জন্য প্রবৃত্তি প্রদর্শন করতে হবে।
একটি উন্নয়নশীল মানসিকতাসম্পন্ন তরুণদের সাধারণত একটি বিষয়ে চিন্তা করতে বিলম্ব হয় না। তারা পরিবার বা মানুষের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করতে বদ্ধপরিকর। তারা নতুন বিষয়গুলো শিখতে এবং সমস্যার সমাধানে সৃজনশীল। এ ছাড়াও তারা সহজে কথা বলতে পারে এবং সমাজে সামাজিক মানসিকতার উন্নয়নে সক্ষম হয়। তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং এটি বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার। স্মার্ট বাংলাদেশ হলো এমন একটি প্রকল্প যাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের মাধ্যম হবে প্রযুক্তি। স্মার্ট বাংলাদেশের সব কাজ হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। নাগরিকরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবেন। প্রযুক্তির মাধ্যমে এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা হবে যা হবে ক্যাশলেস।
মোটকথা, সরকার ও সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তোলা হবে। সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে। এগুলো হচ্ছেÑ স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। এ উদ্দেশ্যে দেশের প্রথম স্মার্ট গ্রাম ঝিনাইদহের হিজলীকে, দেশের প্রথম স্মার্ট উপজেলা মাদারীপুরের শিবচরকে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের প্রথম স্মার্ট জেলা চট্টগ্রামকে প্রস্তাবনা করা হয়েছে।

স্মার্ট সিটিজেন
স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি ভিত্তির মধ্যে একটি হলো স্মার্ট সিটিজেন। অর্থাৎ একজন নাগরিক প্রযুক্তিগত জ্ঞানে পারদর্শী হবেন। স্মার্টি সিটিজেন হতে হলে তরুণদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানে দক্ষ হতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন-
১। স্মার্ট উদ্ভাবনী শিক্ষা : তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ইনোভেটিভ এডুকেশন ইকোসিস্টেম (আইইই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সরকার ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ফর স্কিলস, এডুকেশন, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড অনট্রাপ্রেনারশিপ চালু করেছে, প্রয়োজনভিত্তিক পাঠ্যক্রম, ফলাফলভিত্তিক শিক্ষা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, বিভিন্ন ইন্টার্নশিপ এবং প্লেসমেন্ট প্রোগ্রাম ইত্যাদির ওপর জোর দিয়েছে।
ব্লেন্ডেড শিক্ষা মহাপরিকল্পনা (২০২২-২০৪১) বাস্তবায়নে ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন অব বাংলাদেশ ২৭/২/২০২২ তারিখের ১৬১তম পূর্ণ কমিশন সভায় বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য ব্লেন্ডেড লার্নিং বা মিশ্র শিক্ষার নীতিমালা অনুমোদন করে। এ ছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম রয়েছে যেখানে তরুণদের বিভিন্ন কোর্স পরে তাদের দক্ষতা উন্নয়ন করতে পারে একটি দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো তার শিক্ষা ব্যবস্থা। একটি উচ্চ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী যারা জ্ঞান, বুদ্ধি ও চিন্তায় অগ্রসর হওয়ার পাশাপাশি চিন্তা ও চেতনায় অগ্রসর, একটি জাতিকে উন্নয়নের উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। আধুনিক যুগে প্রযুক্তির গুরুত্ব বেড়েছে।
শিক্ষার মৌলিক উপাদান হিসেবে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এখন ব্যাপক। জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০, জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতি ২০০৯ এবং ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারকে উচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। ন্যাশনাল কারিকুলাম অ্যান্ড টেক্সটবুক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রাথমিক পাঠ্যক্রম অনুসারে, এই প্রোগ্রামের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ এবং বিশ্ব পরিচয়। পাঠ্যপুস্তকের ধারণাগুলোকে আরও আকর্ষণীয় এবং সহজবোধ্য করার জন্য বিভিন্ন চিত্র, গ্রাফ, চার্ট, ডায়াগ্রাম, অডিও, ভিডিও এবং মাল্টিমিডিয়া উপকরণ অ্যানিমেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় এবং বাংলাদেশকে প্রাসঙ্গিকভাবে উপস্থাপন করা হয়।
বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয় শিক্ষক, প্রশিক্ষক, শিক্ষাবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ, শিক্ষা খাতের বিশেষজ্ঞ, শিশু মনোবিজ্ঞানী, রং, প্রোগ্রামিং এবং অ্যানিমেশন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন এবং প্রতিটি অধ্যায়ের পছন্দসই শিক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এই ডিজিটাল শিক্ষার উপকরণ তৈরির বিষয়ে মতামত দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য এআই, ডিজিটাল সিকিউরিটি, ফোর আইআর, বিগ ডাটা, ব্লক চেইন, রোবটিক্স ও টট ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২। অনলাইন সেবা উন্নয়ন : জনগণ ও তরুণদের কর্ম দক্ষতা উন্নয়নে অনলাইন সেবার সুযোগ সৃষ্টি করেছে সরকার। সরকার ও সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এসব সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য তরুণদের দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
৩। ই-কমার্স ও অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম পরিচালনা : ২০২১ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১ নামক তিন অধ্যায়ের নীতিমালা প্রকাশ করে। ২০২৩ সালের মধ্যে দেশে ই-কমার্স বাজারের আকার বেড়ে দাঁড়াবে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী স্থানীয় মুদ্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো হবে ।
৪। সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও টেকসই সম্পদ ব্যবহার সম্পর্কিত শিক্ষাদান : ২০২০ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। কয়েকটি লক্ষ্যমাত্রার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয়নি। ১৭টি এসডিজি হলো : ১. দারিদ্র্য বিলোপ; ২. ক্ষুধা মুক্তি; ৩. সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ; ৪. মানসম্মত শিক্ষা; ৫. লিঙ্গ সমতা; ৬. নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন; ৭. সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত জ্বালানি; ৮. শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি; ৯. শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো; ১০. অসমতার হ্রাস; ১১. টেকসই নগর ও জনপদ; ১২. পরিমিত ভোগ ও উৎপাদন; ১৩. জলবায়ু কার্যক্রম; ১৪. জলজ জীবন; ১৫. স্থলজ জীবন; ১৬. শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান; ১৭. অভীষ্ট অর্জনে অংশীদারিত্ব?
৫। স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান সেবা সম্পর্কিত তথ্য প্রদান : বর্তমান সরকারের সময় সারা দেশে হাসপাতালগুলোর শয্যা বৃদ্ধিসহ চিকিৎসক, নার্স, সাপোর্টিং স্টাফের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মেডিক্যাল শিক্ষার প্রসারে নতুন নতুন মেডিক্যাল কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। চিকিৎসা বিষয়ে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা ও প্রয়োজনীয় গবেষণা কর্মকা- পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাঁচটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে এবং প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রাম পর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ফ্রি স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ ও পুষ্টিসেবা প্রদান করা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোন ও অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তা ও ন্যায় বিষয়ক অ্যাপ বা ওয়েবসাইট উন্নয়ন, পরিবহন সেবা সম্পর্কিত সহজ তথ্য প্রদান, নিরাপদ গ্রাহকতাবলি প্রদান, উন্নয়নশীল পরিবেশ সংরক্ষণ ও গবেষণা প্রচালনা করা, তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমাজসেবা পরিচালনা করা।

স্মার্ট ইকোনমি
স্মার্ট ইকোনমির মূল কনসেপ্টই হলো ক্যাশলেস ট্রানজিশন বা টাকাবিহীন অর্থনৈতিক লেনদেন। প্রযুক্তির মাধ্যমে এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা হবে যা হবে ক্যাশলেস। এ ব্যবস্থায় প্রান্তিক মানুষদের প্রযুক্তি ব্যবহারের উপযোগী শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
১। স্মার্ট হোম : প্রযুক্তিময় ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় নিদর্শন স্মার্ট হোম। সেই স্বপ্ন থেকে বাংলাদেশ দূরে নয়। স্মার্ট হোম বর্তমানে নিবেদিত শহরবাসীকে আকর্ষণ করছে। এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য আলো, গরম, শীতলকরণ, নিরাপত্তা এবং বিনোদন ব্যবস্থাসহ একটি বাড়ির বর্ণনা করে। আপনি ঘরে বা বাইরে যে কোনো জায়গা থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে গৃহস্থালির যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনার স্মার্ট ডিভাইসগুলো মাঝে মাঝে তাদের নিজস্ব কাজ করার ক্ষমতা রাখে।
২। স্মার্ট এগ্রিকালচার : চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অ২ও-এর সহায়তায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজের অংশ হিসেবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সকল বিভাগ বা সংস্থা থেকে তিনটি বিভাগে প্রস্তাবিত কার্যক্রম পরীক্ষা করা হচ্ছে। ২০৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৯.৭ বিলিয়ন হবে, যেখানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ২২ বিলিয়ন হবে। ফলে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসডিজিকে এগিয়ে নিয়ে দেশের শিল্পের জন্য কর্মপরিকল্পনা চার পয়েন্ট জিরো তৈরি করতে হবে। এটা প্রত্যাশিত যে বাংলাদেশের কৃষি শিল্প চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভালোভাবে প্রস্তুত হবে।
৩। স্মার্ট ফ্যাক্টরি : সারা বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি লিড (এলইইডি) সার্টিফায়েড গ্রিন ফ্যাক্টরি বা সবুজ শিল্প ইউনিটের অর্ধেকই রয়েছে বাংলাদেশে। এর মূল কারণ হলো, সাম্প্রতিককালে স্থানীয় উদ্যোক্তারা পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) অনুসারে, দেশের এই শীর্ষস্থানীয় লিড সার্টিফায়েড কারখানাগুলোর মধ্যে ৪৯টি পোশাক খাতে এবং একটি মাত্র বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্পে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বহুমুখী কার্যক্ষমতা সম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করতে যাচ্ছে। কারণ, ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৩৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ক্ষমতা অর্জন করেছে ।
৪। স্মার্ট ব্যাংকিং : আইসিটি বিভাগ সর্বস্তরের মানুষের কাছে প্রযুক্তি উপলব্ধ করার জন্য কাজ করছে যাতে তারা নিরাপদ, সহজ, নগদহীন লেনদেন পরিচালনা করতে পারে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ একটি নগদবিহীন সমাজে রূপান্তরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলা ভাষায় সহজ মেনু এবং বিকল্প রাখা হয়েছে যাতে নিয়মিত যারা প্রযুক্তিতে আগ্রহী নন তারাও এই নতুন প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী হতে পারেন। খরচ সর্বোচ্চ সর্বনিম্ন করা হয়. ই.জি. Ñ‘এক্সচেঞ্জ’ ফি নগদ, বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ এবং ম্যাক্যাশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। যে কোনো পরিমাণ ব্যাংক থেকে ব্যাংক লেনদেনের জন্য এই প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ ছাড় মাত্র ১০ টাকা এবং গ্রাহক পর্যায়ে বিকাশ থেকে রকেট পর্যন্ত লেনদেনের জন্য প্রতি হাজারে মাত্র ৫ টাকা।
স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জন নিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, মাইক্রোচিপ ডিজাইনিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিংও সাইবার সিকিউরিটি এই চারটি প্রযুক্তিতে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।

স্মার্ট গভর্নেন্স
স্মার্ট গভর্নেন্স কর্মসূচিগুলো হলো সরকারের তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবা প্রদানের উন্নয়ন, প্রশাসনিক কাজগুলো সহজতর করার উপায় বিকাশ করা এবং জনগণের সঙ্গে সমন্বয় করে সেবা প্রদান করা। স্মার্ট গভর্নমেন্ট কর্মসূচিগুলো সম্পর্কিত কিছু উদাহরণ হতে পারে :
১। স্মার্ট সিটি পরিচালনা : শহর পরিচালনার জন্য আমার সমস্ত ডেটা কলেক্ট করা এবং পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা। এটি ট্রাফিক নির্দেশনা, পানির সরবরাহ মতো সেবা সরবরাহ করতে সাহায্য করে। স্মার্ট সিটি পরিচালনা বাস্তবায়ন লক্ষ্যে দেশের প্রথম ‘ডিজিটাল সিটি’ ও সাইবার সিটি সিলেট, দেশের প্রথম ডিজিটাল গ্রাম তুলাতুলী (কক্সবাজার), দেশের প্রথম ডিজিটাল জেলা যশোর, দেশের প্রথম ডিজিটাল দ্বীপ- মহেশখালী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
২। স্মার্ট বাণিজ্যিক পরিচালনা : বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংযোগ পরিচালনা এবং সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।
৩। ডিজিটাল সেবা প্রদান : স্মার্ট গভর্নমেন্ট এর একটি প্রধান লক্ষ্য হলো দেশের নাগরিকদের প্রতিদিনের জীবন সহজ ও সমৃদ্ধ করা। তাই স্মার্ট গভর্নমেন্ট কর্মসূচি ব্যবহার করে সরকারি সেবা এবং তথ্য সহজতর ও দ্রুততর করে দেওয়া হয়। এটি সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জনগণের জীবনে বিপর্যয় ও সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।
৪। ই-গভর্নেন্স : স্মার্ট গভর্নমেন্ট কর্মসূচির একটি উদাহরণ হলো ই-গভর্নেন্স। এর মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তারা নাগরিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে ও তাদের সমস্যার সমাধান করতে দ্রুততর এবং সহজতর করে দেওয়া হয়। এর ফলে সরকারি কর্মকর্তারা সরকারি সেবা প্রদানে দ্রুততর হয়ে যায় এবং জনগণের জীবনযাপন সুবিধাজনক হয়।

এ ছাড়া ব্যাপক ওয়েবসাইট এবং মোবাইল অ্যাপস উন্নয়ন করা, অনলাইন সেবা প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সরকারি সেবা প্রদানের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা, অনলাইন চাকরি প্রদান এবং সরকারি চাকরি আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সুবিধা, নিরাপত্তা ও যাতায়াত বন্ধ করার জন্য টেকনোলজি ব্যবহার করা, দুর্ঘটনা সংক্রান্ত সংগ্রহ ও তথ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহার করা, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা, বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ডিজিটাল প্লাটফর্ম উন্নয়ন করা, স্মার্ট শহর উন্নয়নে প্রযুক্তি ব্যবহার করা।

স্মার্ট সোসাইটি
স্মার্ট সোসাইটির ধারণাটি স্মার্ট সিটিজেনের ধারণার বৃহৎ পরিসর। যে সমাজ সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল তাকে স্মার্ট সোসাইটি বলা হয়। ‘স্মার্ট সোসাইটি’ এর লক্ষ্য হলো সরকারি পরিষেবা এবং নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। ছোট-বড় থেকে বড় আকারে প্রযুক্তি ব্যবহার করে, এটি বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করবে। সেন্সর, ইন্টারনেট অফ থিংস (ওড়ঞ), ব্রডব্যান্ড মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং মানুষের ইন্টারফেসের মাধ্যমে সংযোগসহ অনেক প্রযুক্তি একটি স্মার্ট সমাজ তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সমাজ একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল পরিবেশ তৈরি করতে সমস্ত উপলব্ধি সংস্থান ব্যবহার করে যা পাবলিক পরিষেবাগুলোকে প্রবাহিত করবে। একটি স্বচ্ছ এবং আনন্দদায়ক স্মার্ট সমাজ কেমন হবে?
১। স্বচ্ছ পানীয় সরবরাহ : স্মার্ট সোসাইটি একটি বিশ্বস্ত ও স্বচ্ছ পানীয় সরবরাহ প্রণালী প্রদান করে।
২। নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ : স্মার্ট সোসাইটি নিরাপদ ও স্বচ্ছ খাদ্য সরবরাহ প্রণালী প্রদান করে।
৩। কম খরচে সোসাইটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম : এই কর্মসূচিতে স্মার্ট সোসাইটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে কম খরচে সোসাইটি ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করে।
৪। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ : স্মার্ট সোসাইটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রিক একটি কর্মসূচি প্রদান করে।
৫। কর্মসংস্থান প্রণোদনা : স্মার্ট সোসাইটি কর্মসংস্থান প্রণোদনা করে এবং নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য সুবিধা প্রদান করে।
২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের সৈনিক হিসেবে তরুণদের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে প্রস্তুত হতে হবে। এই কর্মযজ্ঞকে সফল করতে তরুণদের করণীয় হলো তাদের উদ্ভাবনী মানসিকতা এবং আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে ইচ্ছুক হওয়া। তারা এই দুটি গুণের সাহায্যে একটি সম্পূর্ণ কার্যকরী স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করতে পারে। তরুণরা দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে প্রযুক্তি প্রকল্পগুলো পরিচালনা করতে পারে, প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর জন্য কাজ করতে পারে এবং পরিষেবাগুলো গ্রহণ করতে পারে। আমরা যদি তরুণদের অভিনব, সমন্বিত প্রযুক্তি, সাশ্রয়ী মূল্যের সরঞ্জাম এবং সফ্টওয়্যার তৈরির উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে পারি তাহলে তা স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে অবদান রাখবে।

স্মার্ট বাংলাদেশ তখনই হবে যখন দেশের প্রতিটি নাগরিক ফেস টু ফেস যোগাযোগ ছাড়াই প্রয়োজনীয় সকল সেবা প্রদান ও গ্রহণ করতে পারবে। এজন্য আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে স্মার্ট এডুকেশন সিস্টেম আর স্মার্ট এগ্রো ইকোনমিতে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রতিটি ক্ষেত্রে গবেষণা ও প্রশিক্ষণকে প্রাধান্য দিতে হবে।

লেখক : সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি); পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)

এই বিভাগের সব খবর

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে মিয়ানমারের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সাথে মিয়ানমারের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত অং কিও মো আজ সাক্ষাত করেছেন। আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই সাক্ষাত অনুষ্ঠিত হয়। রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকারসহ...

বিএনপি নেতারা মানসিক ট্রমায় ভুগছেন : ওবায়দুল কাদের

বিএনপি নেতারা মানসিক ট্রমায় ভুগছে, সে কারণে আবোল তাবল বলছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল...

অক্টোবরে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন

চট্টগ্রাম মহানগরে আওয়ামী লীগের ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটির সম্মেলন আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। যা শুরু হবে চলতি সপ্তাহ...

সর্বশেষ

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে মিয়ানমারের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সাথে মিয়ানমারের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত অং...

বিএনপি নেতারা মানসিক ট্রমায় ভুগছেন : ওবায়দুল কাদের

বিএনপি নেতারা মানসিক ট্রমায় ভুগছে, সে কারণে আবোল তাবল...

অক্টোবরে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন

চট্টগ্রাম মহানগরে আওয়ামী লীগের ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটির...

চুয়েটের সাথে তিনটি সংস্থার সমঝোতা স্মারক

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)- এর সাথে সিগনাল...

প্রবাসীর স্বর্ণ ছিনতাই, পুলিশের এসআইকে হাতেনাতে ধরল জনতা

চট্টগ্রামে পাঁচলাইশ থানাধীন টাইগার পাস এলাকায় স্বর্ণ ছিনিয়ে নিয়ে...