আগামী ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে পুরানো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২ তম জাতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলন ঘিরে এখন সারাদেশে তুমুল আলোচনা। আর তা হচ্ছে কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রানিং মেট। আর কে কে হচ্ছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য কিংবা নির্বাহী কমিটির নানা পদে কারা আসছেন। সবার দৃষ্টি বর্তমান সাধারণ সম্পাদক পদের দিকে। ওবায়দুল কাদের স্ব পদে থাকছেন নাকি পরিবর্তন হয়ে নতুন কেউ আসছেন। নতুনদের মধ্যে কে আসতে পারেন তাও আলোচনায় বাদ নেই। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, কৃষি মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনির নাম আলোচনার শীর্ষ রেখেছে দলের নেতাকর্মীরা। তবে দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, এবারের সম্মেলনে চমক আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই চমক দেখাতে পারেন নেতৃত্ব র্নিবাচনে।
কয়েকদিন আগে দলের দুই সহযোগি সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে যাদেরকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করা হয়েছে তাদের নাম তেমন ভাবে আলোচনায় আসেনি। যাদের নাম বেশি আলোচনায় ছিল তাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও তেমন অঘটন ঘটতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বলেন, এবারে সম্মেলনে অনেক দিক বিবেচনা করেই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। সভাপতি পদে শেখ হাসিনাই থাকবেন। এ পদের জন্য কেউ দাবিদার থাকেন না। বঙ্গবন্ধু কন্যা বা তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য অলিখিত ভাবেই এ পদের প্রতি সম্মান রেখেই তা করা হয়। তবে একজন যোগ্য সুচতুর নেতাকে বেচে নেয়া হয়ে থাকে সাধারন পদের জন্য। এবারও তাই করা হবে বলে অনেকেই বলছেন। কারণ সামনের দিনগুলোতে বিএনপি বা বিরোধী অন্য দলগুলো আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় উঠবে। তখন সামাল দেয়ার মতো নেতা না থাকে দল বেকাদায় পড়তে হবে। সেক্ষেত্রে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তিনি এখন মোটামুটি সক্রিয় থাকলেও একজন সুস্থ সবল বুদ্ধিদীপ্ত নেতার খোঁজ করা করছেন শীর্ষ নেতারা। পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের শুভাংক্ষি শিক্ষাবিদ,সংস্কৃতিসেবি,শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্বিজীবিদের কাছে।
গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা এবং জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলকে চাঙা রাখতে সম্মেলন করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জেলা-উপজেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সম্মেলন হলেও নেতৃত্বে আসছে না তেমন কোনো পরিবর্তন। এতে সাময়িক পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দল। জট বাড়ছে পদপ্রত্যাশী নেতৃত্বের। ছাত্রলীগ করে আসা বিপুল সংখ্যক নেতা নিষ্ক্রিয় থাকছেন পদ না পেয়ে।তবে
খোঁজ নিয়ে যায় গেছে, সারাদেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা ৭৮টি। এরমধ্যে ৩৯টির সম্মেলন হয়েছে, সম্মেলন হয়নি বাকি ৩৯টির। সম্মেলন হওয়া ৩৯টির মধ্যে প্রায় সবকটিতেই সভাপতি-সম্পাদক নির্ভর কমিটি হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে মাত্র ৭টি জেলা। অন্যদিকে নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়নি ২৪টিতে এবং নেতৃত্বের আংশিক পরিবর্তন হয়েছে ৮টিতে। উপজেলা পর্যায়েও একই চিত্র। ১৫ থেকে ১৮/২০ বছর সম্মেলন হয়নি, এমন উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে। তবে সম্মেলনের পর আগের নেতৃত্ব বহাল রাখায় ক্ষোভ বাড়ছে তৃণমূলে।
একই অবস্থা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগেও। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে দলটি ৪ বার সম্মেলন করলেও নতুন নেতা তৈরি করেছে মাত্র ৭৭ জন। এরমধ্যে সভাপতি পদে পরিবর্তন না থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদে মাত্র দু’বার পরিবর্তন হয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটি ছিল ৭৫ সদস্যের, নতুন নেতা হয়েছেন ২০ জন। ২০১২ সালের সম্মেলনে ৭৫ সদস্যের কমিটিতে নতুন নেতা হয়েছেন ১২ জন। ২০১৬ সালের সম্মেলনে ৮১ সদস্যের কমিটিতে নতুন মুখ এসেছে ২৮। ২০১৯ সালের সম্মেলনেও ৮১ সদস্যের কমিটিতে নতুন মুখ ছিল ১৭ জন। আসন্ন ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আগে শোনা যাচ্ছে, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সিংহভাগ পদে থাকছে না পরিবর্তন। মৃত্যুজনিত কারণে শূন্য হওয়া পদ পূরণ করা বা দায়িত্ব পুনর্বণ্টন ছাড়া, নেতৃত্বে তেমন পরিবর্তন আসবে না বলেই শোনা যাচ্ছে। এর ফলে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র, সবখানেই বাড়ছে পদপ্রত্যাশী নেতৃত্বের জট। ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন করে আসা বিপুল সংখ্যক নেতা পদ না পেয়ে নিষ্ক্রিয় থাকছেন।
তবে বিষয়টিকে সহজভাবেই নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বে থাকা নেতারা। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সবাই বলছেন, দলে যেমন নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন আছে, তেমনি অভিজ্ঞদেরও প্রয়োজন। সামনে নির্বাচন, এসময় বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবিলায় দলের অভিজ্ঞ নেতৃত্ব সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, সম্মেলন করা মানেই বর্তমান নেতৃত্বকে উৎখাত করা নয়। একটি জেলা বা উপজেলায় যারা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তারা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠেন। তাদের পরিবর্তন করতেই হবে, এমন কোনো সূত্র নেই। তবে বাস্তবতার কারণে কেউ ইমেজ হারিয়ে ফেললে অথবা শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়লে অথবা দলের বৃহত্তর স্বার্থে নেতৃত্ব পরিবর্তন করা হয়, হচ্ছে। অনেক সম্মেলনে নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়েছে। অনেক জায়গায় হয়নি।
তিনি আরও বলেন, দল শুধু সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রিক নয়। অন্যান্য পদে পরিবর্তন হয়। অন্যান্য পদগুলো নেতা তৈরির একেকটি পিলার।
এ নিয়ে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু জাহির এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন ও বৃহৎ গণতান্ত্রিক সংগঠন। নতুন ও পুরাতনের সমন্বয়ে দল পরিচালিত হয়। দলে অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের মতো বয়সের কোনো বিধিনিষেধ নাই। নতুন নেতৃত্ব যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি অভিজ্ঞদেরও প্রয়োজন আছে। কোথাও যদি দীর্ঘদিনের সক্রিয় এবং সিনিয়র নেতার ওপর স্থানীয় নেতাকর্মীরা আস্থা রাখেন, আর নেতৃত্বে তাকে রেখে দেওয়া হয়, তাহলে কোনো ক্ষতি নেই। বরং নতুন-পুরাতনের মিলনে দল আরও শক্তিশালী হবে বলে আমার বিশ্বাস, মন্তব্য করেন তিনি।