চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানের লিচুবাগান এলাকার প্রথম শ্রেণির ছাত্রী মারজানা হক বর্ষাকে (৭) ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় লক্ষণ দাশ (৩০) নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে লোহাগাড়ার উত্তর পদুয়া ৩ নম্বর ওয়ার্ড মনি মিস্ত্রির বাড়ির ফেলোরাম দাশের ছেলে। তিনি নগরের জামালখান গোপাল মুহুরী গলি এ কে এম জামাল উদ্দিনের বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় শ্যামল স্টোর নামক দোকানের গোডাউনে বসবাস করতেন। তিনি মুদি দোকানটির কর্মচারী বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, লক্ষণ মুদি দোকানটির মালিক। বর্ষাকে ধর্ষণের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখে মুখ ও নাক চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে স্বীতারোক্তি দিয়েছে গ্রেফতার কৃত লক্ষণ। হত্যার পরে দোকানের গোডাউনে রাখা টিসিবির সীলযুক্ত প্লাস্টিকের বস্তার ভিতরে বর্ষার মরদেহ ঢুকিয়ে বাইরে এনে গোডাউনের ডান পাশে নালায় ফেলে দেয় হত্যাকারী লক্ষণ দাশ। শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে এই তথ্য দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
উপ পুলিশ কমিশনার মো.মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, লক্ষণ দাশ বর্ষাকে বিভিন্ন সময়ে দোকান থেকে চিপস, চকলেট দিত। ঘটনার দিন বিকেলে ১শ টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে দোকানের গোডাউনে নিয়ে যায়। সেখানে মুখ ও নাক চেপে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ বস্তায় ভরে নালায় ফেলে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর বর্ষার কাপড়চোপড় পেঁয়াজের খোসার বস্তার ভিতর খোসাসহ ঢুকিয়ে বস্তাটি একই জায়গায় নালায় ফেলে দেয়। আরও কিছুক্ষণ পর বর্ষার ব্যবহৃত স্যান্ডেলটি নিয়ে নালায় ফেলে দেয়। তিনি আরও বলেন, মরদেহ নালায় পাওয়ার পর যখন বস্তা কেটে বের করা হয় তখন আমাদের নজরে আসে- বস্তায় টিসিবির সীল আছে। সেই সূত্র ধরে টিসিবির সীলযুক্ত বস্তায় মালামাল বিক্রয়ের দোকান ও আশপাশের বিভিন্ন রেস্তেুারাঁর গোডাউনে টিসিবির সীলযুক্ত বস্তা খুঁজতে থাকি। একপর্যায়ে শ্যামল স্টোর দোকানের গোডাউন চেক করার সময় একটি খালি টিসিবির সীলযুক্ত বস্তা খুঁজে পাওয়া যায়। দোকানের মালিক ও কোন কোন কর্মচারী সেখানে কাজ করে, তাদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করি। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়। টিসিবির সীলযুক্ত বস্তা ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় আসামি লক্ষণ দাশকে শনাক্ত করি। এরপর জামালখান এলাকার শ্যামল স্টোর নামক দোকানের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়িত আসামি লক্ষণ দাশকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়।
মারজানা হক বর্ষা (৭) চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি থানার টামটা এলাকার আব্দুল হকের মেয়ে। সে কুসুমকুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ও নগরের জামালখান লিচুবাগান সিকদার হোটেলের পাশের বিল্ডিংয়ে পরিবারের সাথে বসবাস করতো।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, গ্রেফতার লক্ষণ দাশকে আদালতে পাঠানো হবে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) মারজানা হক বর্ষা বাসা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিপস কেনার জন্য গলির মুখে দোকানে যায়। ৩০ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পরও বাসায় ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। পরদিন বর্ষার বোন সালেহা আক্তার রুবি থানায় নিখোঁজ জিডি করেন। বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে বেলাল হোসেন নামে একজন বস্তাবন্দি মরদেহ দেখতে পেয়ে থানায় সংবাদ দেয়। বিকেলে সিকদার হোটেলের পেছনের নালা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় বর্ষার মরদেহ পাওয়া যায়