দীর্ঘদিন ধরে যে দোকানে চাকরি করে আসছেন রঞ্জিত বিশ্বাস সেই দোকানের মালিকের সাথে প্রতারণা করে দোকানের ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স বানিয়ে নিজে মালিক বনে যান। তারপর বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকার দোকানের বকেয়া চেক হাতিয়ে নিতেন। গত কয়েক মাসে রঞ্জিত দাশ অন্তত ১০ লাখ টাকার চেক নিজের একাউন্টে জমা করেছেন।পরে মালিক পক্ষ ব্যাংকে তাদের হিসাব পরীক্ষা করতে রঞ্জিতের এই প্রতারণা ধরা পড়ে। মালিকপক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করলে সোমবার ২৪ অক্টোবর ডবলমরিং থানা পুলিশ রঞ্জিত দাশকে গ্রেফতার করেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানায়, গ্রামের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার দক্ষিণ মোহাম্মদপুর এলাকার হরিপদ দাশের পুত্র রঞ্জিত দাশ (৫০) নগরীর দেওয়ানহাট এলাকায় এফ.টি ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি মোটরপার্টসের দোকানে চাকরী নেয়। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বস্থতার সাথে কমিশন ভিত্তিক কাজ করায় দোকানের দু্ই মালিক আব্দুর রহিম ও মোহাম্মদ ফারুকের মন জয় করে নেন।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি দোকান কর্ম এফ.টি ইঞ্জিনিয়ারিং এর মালিক সেজে দোকানের কর্মচারী রঞ্চিত দাশ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় ট্রেড লাইসেন্স বানিয়ে নেয়। ঈদগাহ বউবাজার ঠিকানা দেখিয়ে ঐ ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে প্রতিষ্ঠানের নামে ইউনিয়ন ব্যাংক ঈদগাহ বউ বাজার শাখায় একটি হিসাব খুলেন তিনি। এতে কেডিএস গ্রুপ, বিএসআরএম, আরমিট গ্রুপ, টি.কে গ্রুপসহ নামকরা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের দেয়া বড় অংকের চেকগুলো সংগ্রহ করে তার একাউন্টে জমা করে নেন।
এরমধ্যে গত ৭ অক্টোবর মোটা অংকের কয়েকটি চেক জমা না হওয়ার বিষয়টি খোঁজ নিলে ইউনিয়ন ব্যাংক ঈদগাহ বউ বাজার শাখায় প্রায় ১০ লাখ টাকা নগদায়ন হওয়ার তথ্য পায় মালিক পক্ষ। এ সূত্র ধরে ব্যাংকে যোগাযোগ করা হলে ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স বানিয়ে ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
এ ঘটনায় নগরীর রবিবার ২৩ অক্টোবর নগরীর ডবল মুরিং মডেল থানায় দোকানের মালিক মোহাম্মদ রহিম উদ্দীন বাদী হয়ে দোকানের কর্মচারী রঞ্জিত দাশসহ কয়েকজন সহযোগির বিরুদ্ধে মামলা করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
সোমবার আদালতে প্রেরণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী রহিম উদ্দীন জানান, সিটি কর্পোরশেন কিভাবে কোন ধরণের তদন্ত ছাড়া কাগজ পত্র না দেখে দোকানের কর্মচারীর নামে লাইসেন্স দিল, রঞ্জিতের অপরাধের সাথে সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স শাখার লোকজন সরসারি জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরশন লাইসেন্সের দায়িত্ব থাকা পরিদর্শক জিএম কামাল উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মানুষকে সেবা দিতে গিয়ে সব কিছু দেখে দেখে তদন্ত করা সম্ভব না। টাকার বিনিময়ে কাগজ পত্র না দেখে লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেনি। সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের জন্য কেউ অভিযোগ করলে সাথে সাথে বাতিল হয়ে যাবে। কর কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলমের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ঘটনার পর থেকে মোবাইল বন্ধ, অফিসেও আসেনি বলে খবর পাওয়া গেছে।
রঞ্জিত দাশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে ডবলমুরিং থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আজিজুল হক জানান, সিটি কর্পোরেশনের দেয়া ট্রেড লাইসেন্সে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের স্বাক্ষর রয়েছে। কর কর্মকর্তা মো. শাহ আলম, লাইসেন্স পরিদর্শক জিএম কামাল উদ্দীন তারাও জড়িত। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে অপরাধে সহযোগিতা করে আসছে। টাকার বিনিময়ে সিটি কর্পোরেশনে শক্তিশালী একটি প্রতারক সিন্ডিকেট রয়েছে তারা ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স বাণিজ্যর সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত।
ইউডি