দেশের একমাত্র পুরান জাহাজ ভাঙা শিল্পের গোড়াপত্তন হয় ১৯৬০ এর দশকে। যখন একটি গ্রিক জাহাজ ‘এমডি আলপাইন’ একটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের পর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বঙ্গোপসাগরের তীরে আটকা পড়ে ঘূর্ণিঝড়ে। পরে জাহাজটি ফিরিয়ে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় চিটাগং স্টিল হাউজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান জাহাজটি ভাঙার কাজ শুরু করে। তখন থেকেই সীতাকুণ্ডে জাহাজ ভাঙা শিল্পের কার্যক্রম শুরু হয় বাংলাদেশের জন্য এটি আজ একটি বড় ও লাভজনক শিল্পে পরিণত হয়েছে।
দেশে জাহাজ ভাঙা শিল্পে প্রায় ৬০-৭০ হাজার লোক সরাসরি কর্মরত। আরো ৩০ লাখ পরোক্ষভাবে এ ব্যবসায় জড়িত। জাহাজের আকারের ওপর ভিত্তি করে ৩০০ থেকে ১০০০ লোক অস্থায়ী ভিত্তিতে একটি জাহাজ ভেঙে ফেলার জন্য নিযুক্ত করা হয় এবং আরো অনেককে জাহাজ থেকে সব ধরনের উপকরণ পুনর্ব্যবহারের জন্য ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত হয়। চট্টগ্রামের উত্তর উপকূলে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইকেলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) তথ্যমতে প্রায় ১৫৮টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড রয়েছে, এর মধ্যে ৩০-৪০টি সারা বছর সক্রিয় থাকে। বর্তমান ভাটিয়ারী, মাদাম বিবির হাট, সােনাইছড়ি, জােড়ামতল ও কুমিরা পর্যন্ত। ডলার সংকট ও এলসি জটিলতার কারণে গত কয়েক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সীতাকুণ্ডের শিপব্রকিং ইয়ার্ড়।
বাংলাদশ শিপ ব্রকার্স অ্যান্ড রিসাইকলার্স এসোসিয়েশন এর তথ্য মতে গত ২০২১ সালে প্রথম আট মাস ২০০টি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয়েছে। যার ওজন উনিশ লক্ষ সায়ত্রিশ হাজার পাঁচ শত তের টন। ২০২২ সালে প্রথম আট মাস অর্ধেকে নেমে ১০৩ টি জাহাজ আমদানি হয়েছে। যার ওজন আট লক্ষ চত্রিশ হাজার চারশত ছাপ্পান টন। গড়ে বছরে ২০০টি স্ক্র্যাপ জাহাজ ভাঙ্গা হয় শিপ ব্রকিং ইয়ার্ডে। বর্তমানে জাহাজ আমদানি নেমে এসেছে শুন্যের কোটায়। বছরে এই শিল্প থেকে লেনদেন হয় ১৫ হাজার কােটি টাকা। তবে এখনকার দৃশ্য পট ভিন্ন। চলছে শুনসান নিরবতা এই শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে।
দেশের লােহা জাতীয় শিল্পের কাঁচামাল ৫০ শতাংশ যােগান দাতা এই শিপ ব্রকিং ইয়ার্ড। ব্যবসায়ীরা জানান, ডলার সংকট ও এলসি জটিলতার কারণে গত কয়েক মাস ধরে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি বন্ধ বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইকেলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) এর সভাপতি এম এ তাহের বলেন, আমরা টিকে থাকতে পারবো কিনা জানিনা । ব্যাংক দিয়ে লেনদেন। আমরা ব্যাংক থেকে লােন নিয়ে এলসি করতে হয়। ব্যাংকতো এলসি দিতে পারছেনা। ব্যাংকে ডলার নাই । এখনতো খারাপের দিকে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সব ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে ইয়ার্ডের শ্রমিকরা বলেছেন, গত দু-তিন মাসে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি কমে যাওয়ায় অনেক ইয়ার্ডে বেতন ভাতা নিয়ে বড় সংকট তৈরি হচ্ছে। জাহাজ আমদানি কমে যাওয়ায় অনেক ইয়ার্ড এখন বন্ধের পথে।
ইমা