ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গুরুদায়িত্ব হাতে নেয়ার মাত্র ৪৪ দিন পরই পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন লিজ ট্রাস।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) ডাউনিং স্ট্রিট থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে ট্রাস বলেছেন, যে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কনজারভেটিভ পার্টি তাকে নির্বাচিত করেছিল তা তিনি দিতে পারেননি। তাই কনজারভেটিভ পার্টির নেতার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের বিষয়ে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসকে জানিয়েছেন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনাককে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে লিজ ট্রাস ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ট্রাস জানান, এখন নতুন একজন নেতা নির্বাচন করতে আগামী সপ্তাহের মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টির নির্বাচন হবে। একজন উত্তরসূরি বাছাই না হওয়া পর্যন্ত আমি প্রধানমন্ত্রী থাকব।
নিজ দলের চরম আস্থাহীনতা ও দেশের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গত জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন বরিস জনসন। ৬ সেপ্টেম্বর জনসনের স্থলাভিষিক্ত হন ট্রাস।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রাস ও তার ওই সময়ের অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়াটেং একটি নতুন ‘উন্নয়ন পরিকল্পনা’ ঘোষণা করেছিলেন। যাতে ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ কর ছাড়ের পাশাপাশি জাতীয় বিমা পরিকল্পনা ও স্ট্যাম্প শুল্কেও ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ব্যাপক সরকারি ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন করা এই পরিকল্পনা স্থবির অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে বলে তারা আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
কিন্তু পরিকল্পনাটি সরকারের ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করে, পাউন্ডের মান এবং সরকারি বন্ডের মূল্য কমিয়ে দেয়। এটি বিশ্ব বাজারকে এমন মাত্রায় ধাক্কা দেয় যে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বাজারকে চাঙ্গা করার জন্য ৬৫ বিলিয়ন পাউন্ডের (৭৩ বিলিয়ন ডলার) একটি কর্মসূচী নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়।
যা নিয়ে বাড়তে থাকা রাজনৈতিক চাপ সামাল দিতে ১৪ অক্টোবর কোয়াটেংকে বরখাস্ত করেন ট্রাস।
এরইমধ্যে ট্রাসের বিরুদ্ধে দলীয় এমপিদের বিদ্রোহের গুঞ্জন শোনা যেতে শুরু করে। বুধবার ট্রাসের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যানের পদত্যাগ সরকারের ভেতরের চরম বিশৃক্সখলার নগ্ন চিত্র সামনে নিয়ে আসছে।
ব্রাভারম্যান তার পদত্যাগ পত্রে সরাসরি ট্রাসের বিরুদ্ধে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। দলীয় বেশ কয়েকজন এমপি ট্রাসকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান।
বৃহস্পতিবার ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে জাতীর উদ্দেশে ভাষণ দিতে আসেন ট্রাস। সেখানে তিনি বলেন, তিনি রাজা চার্লসকে কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানের পদ থেকে তার সরে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি
দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় পদত্যাগ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ট্রাস হলেন যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে ক্ষমতায় থাকা সবচেয়ে কম সময়ের প্রধানমন্ত্রী।।
উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর সাধারণ ভোটারদের বদলে এবারের নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে বেছে নিয়েছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ১ লাখ ৬০ হাজার সদস্য। সবশেষ ১১ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর (এডওয়ার্ড হিথের পর থেকে) মধ্যে সাধারণ নির্বাচনে জয়ী না হয়েই ডাউনিং স্ট্রিটে প্রবেশ করা ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হন লিজ ট্রাস।
এর আগে লিজ দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন ৪৭ বছর বয়সী লিজ ট্রাস। তার বাবা ছিলেন গণিতের শিক্ষক এবং মা নার্স। ট্রাস অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।
লেখাপড়া শেষ করে কিছুদিন অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। এরপর নামেন রাজনীতিতে। ট্রাস প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন ২০১০ সালে। তিনি প্রাথমিকভাবে ব্রেক্সিট, অর্থাৎ যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন।
পরে ব্রেক্সিটের নায়ক হিসাবে আবির্ভূত হওয়া বরিস জনসনকে সমর্থন করেন ট্রাস। ব্রিটিশ মিডিয়া প্রায়ই লিজ ট্রাসকে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে তুলনা করে থাকে।
ইউডি