বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
spot_img

তিন দেশে জাবেদ-রুখমিলার ৫৮০ এপার্টমেন্ট – আরো সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুদক টিম

অনলাইন ডেস্ক

সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত মোট ৫৮০টি এপার্টমেন্টের সন্ধান মিলেছে। আরো সম্পদের খোঁজে নেমেছে দুদক অনুসন্ধান টিম।

দুদকের একটি সূত্র জানায়,এসব সম্পদ ও পাচারকৃত টাকা অন্যত্র যাতে হস্তান্তর না হয়, সেজন্য দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ক্রোক ও অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর অনুসন্ধানে এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি এপার্টমেন্ট, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯ টি এপার্টমেন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের সম্পদের খোঁজে আরো অনুসন্ধান ও তথ্য চাওয়া হয়েছে অন্যান্য দেশে।

দুদক এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে করা একাউন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনবিহীন মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে টাকা পাচার,আয়কর নথিতে সম্পদের তথ্য গোপনসহ বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য পেয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রাথমিক তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাত্র ৯ বছরে মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ পাচার করে তিনি (জাবেদ) ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামান এসব স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট দেশের ল্যান্ড রেজিষ্ট্রি ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, জাবেদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের মাধ্যমে এপার্টমেন্টসহ অন্যান্য সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক। এসব টাকা বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন পুর্বানুমোদন নেই। আয়কর নথিতে বিদেশে সম্পদ অর্জনের কোন তথ্য নেই। জাবেদ ও তার স্ত্রী ছাড়াও পরিবারের অন্যান্য সদস্য কিংবা আত্নীয় স্বজনের নামে কোন সম্পদ আছে কিনা তাও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এরূপ কিছু পাওয়া গেলে তা তদন্তে অর্ন্তভুক্ত করা হবে।

দুদক ইতোমধ্যে মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে বিদেশে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের স্বার্থে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের নামে-বেনামে বিভিন্ন দেশে অর্জন করা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক বা অবরুদ্ধ করার আদেশ ও অনুমতি চেয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আবেদন (পারমিশন পিটিশন নং ৪৫৩/২০২৪) করেছে।

দুদক একই সময়ে সাইফুজ্জামান ও রুখমিলার নামে বা তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা ব্যাংক হিসাবের সুষ্টু তদন্তের স্বার্থে হিসাব অবরুদ্ধের আবেদন জানিয়েছে।

দুদক অনুসন্ধান টিমের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই তথ্য জানিয়ে বলেন,আমরা অগ্রসর হচ্ছি। দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য পাচ্ছি। আশা করছি,সবকিছু গুছিয়ে আইনের আওতায় আনতে পারবো।

দুর্নীতি দমন কমিশন সাবেক ভুমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের বিদেশে অবৈধভাবে অর্জন করা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি তদন্তের জন্য দুদকের উপ-পরিচালক রাম প্রসাদ মন্ডলকে টিম লিডার করে ৩ সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো: মাইনুদ্দিন ও উপ সহকারী পরিচালক মো: জুয়েল রানা। কমিশনের বিগত ১৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় সাইফুজ্জামান ও রুখমিলার বিদেশ অর্জিত স্থাবর অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধের জন্য আদালতের আদেশ প্রার্থনার অনুমতিও অনুমোদন দেয়া হয়।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, আদালত দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমতি দিয়ে স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের এইচ এম ল্যান্ড রেজিষ্ট্রি ডিপার্টমেন্ট  ইংল্যান্ড ও ওয়েলস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ল্যান্ড ডিপার্টমেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট রেজিষ্টার নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডা-কে অবহিত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আদেশ দিয়েছে।

এছাড়াও আদালত আরব আমিরাতের তিনটি ব্যাংক শাখায় খোলা ৪ টি একাউন্ট সহ অন্যান্য একাউন্টের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংকের মানিলন্ডারিং বিভাগ, বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট সহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করার জন্য দুদকের তদন্ত টিমকে নির্দেশ দিয়েছে।

এ পর্যন্ত পাওয়া বিভিন্ন দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে,সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ইসলামী ব্যাংক ও  ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক আরব আমিরাত শাখা ও টিডি ব্যাংক, ইউএসএ রয়েছে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’র (বাসস) হাতে আসা তথ্যে দেখা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি বাংলাদেশী ব্যাংকসহ তিনটি ব্যাংক শাখায় ৪টি ব্যাংক একাউন্টের সন্ধান পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে বাংলাদেশী জনতা ব্যাংক পিএলসি আরব আমিরাত শাখাও রয়েছে। অপর দুটি ব্যাংক হচ্ছে দুবাই ইসলামিক ব্যাংক ও ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংক। সায়ফুজ্জামান চৌধুরীর নামে খোলা এই ৪ টি ব্যাংক এর তথ্যে দেখা গেছে, দুবাই ইসলামিক ব্যাংকে একাউন্ট খোলা হয়েছে ৮ জানুয়ারী ২০১৫ সালে। একাউন্ট নং- ০৬৫৫৮০০৭২৯০৬৩০১। এই একাউন্টে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৯৫ দিরহাম জমা হয়েছে । বর্তমানে জমা রয়েছে ৪২ হাজার ১৫ দিরহাম। ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংকে দুটি একাউন্ট খালা হয়েছে। এর একটি একাউন্ট নং হচ্ছে  ১৬১১০০৩৯৩৪৩৫৮০১০ । এই একাউন্ট খোলা হয়েছে ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ সালে। এই একাউন্টে জমা হয়েছে ৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৪৬ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১২ কোটি টাকা। উত্তোলন হয়েছে ৯ লাখ ৮১ হাজার ৪৮৬ মার্কিন ডলার। ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংকে উপরোক্ত একাউন্ট খোলার ৭ মাস পর একই ব্যাংকে আরো একটি একাউন্ট খোলা হয়। একই ব্যাংকের অপর একাউন্ট নং হচ্ছে  ১৬৫১০০৩৯৩৪৩৫৮০২৫। এই একাউন্ট খোলা হয়েছে ২৪ আগস্ট ২০১৭ সালে।  এই একাউন্টে জমা হয়েছে ৩২ লাখ ৭০ হাজার ৯৭৯ দিরহাম। বর্তমানে জমা রয়েছে ৩৪ হাজার ৭৯৪ দিরহাম। জনতা ব্যাংক আরব আমিরাত শাখায় ৩ আগস্ট ২০২৩ সালে খোলা একাউন্ট নাম্বার হচ্ছে  ধব১৭০৩১৯৩৩১০০১০১০০০২৫৯৯। এই একাউন্টে জমা হয়েছে ৪৯ লাখ ৫১ হাজার ৩৭৭ দিরহাম। উত্তোলন হয়েছে ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৮৮ দিরহাম। বর্তমানে একাউন্টের স্থিতি হচ্ছে ৪ হাজার ৭৮৯ দিরহাম।

এছাড়া আমেরিকান টিডি ব্যাংকে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন ‘জেডটিএস প্রপার্টিজ এলএলসি’ নামে খোলা বেনিফিশিয়ারী একাউন্টে (নং-৪৩৭২২৯৫৮১০) ২০২১ সালের ২ এপ্রিল থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ৪ মাসে ২০০,২০৬.৭২ মার্কিন ডলার জমা হয়েছে। এসব ডলার ট্রান্সফার হয়েছে হংকং এন্ড সাংহাই ব্যাংকিংয়ে খোলা ক্যাপিটেল ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম লিমিেিটড এবং ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংকে খোলা সাইফুজ্জামান চৌধুরীর একাউন্ট থেকে।

তথ্যে দেখা যায়, ২৯ জুলাই ২০২১ সালে একই দিনে হংকং সাংহাই ব্যাংকিং এর ক্যাপিটাল ওয়ার্ল্ড ও ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংকের সাইফুজ্জামানের একাউন্ট থেকে আমেরিকান টিডি ব্যাংকে স্থানান্তর হয়েছে ৫০,৯১০.১৮ মার্কিন ডলার। এর তিন দিন আগে ২৬ জুলাই ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংক থেকে স্থানান্তর হয়েছে ৮৯৬০.০০ মার্কিন ডলার। সাংহাই হংকং ব্যাংকিং এর একাউন্ট থেকে ২০২১ সালের ১ জুলাই ৩৪,৬৫০.৮৭ মার্কিন ডলার, ১৯ এপ্রিল ৪৮,৮৫১.৯৫ মার্কিন ডলার এবং ২ এপ্রিল ৫৬৮৩.৭২ মার্কিন ডলার টিডি ব্যাংকে স্থানান্তর হয়েছে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং রুখমিলা জামানের নামে প্রতিষ্ঠিত ১০ টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ৮ টি এবং তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের নামে ২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

সাইফুজ্জামানের নামে প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে জেডটিএস প্রপার্টিজ লিঃ, (লাইসেন্স নং- ১০০১০৬০৮, তাং- ১৭-০২-২০১৬),  জেবা ট্রেডিং এফজেডই,( লাইসেন্স নং ৫০১১৫৬৭, তাং ১৮-২-২০১৫ইং), নিউ ভেনচার (লন্ডন) লিঃ, (লাইসেন্স নং ০৭৩১২২৫৭, তাং- ৩১-০৭-২০১০),  সাদাকাত প্রপার্টিজ লিঃ (লাইসেন্স নং-১৩৫২৫১০৭ তাং- ২২-০৭-২০২১) জেবা প্রপার্টিজ লিঃ ( লাইসেন্স নং- ১৩৪৬৭১৭২ তাং-২১-০৬-২০২১), আরামিট প্রপার্টিজ লিঃ (লাইসেন্স নং-১২৫৮৯৮৬৯ তাং ০৬-০৫-২০২০) জারিয়া প্রপার্টিজ লিঃ (লাইসেন্স নং- ১৩৪৬৭৫৩২ তাং ২১-০৬-২০২১), জেডটিজেড প্রপার্টি ভেনচার্স লিঃ (লাইসেন্স নং- ১২৭০১১৮ তাং- ৩০-০৭-২০২০) রুখমিলা জামানের নামে দুটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রুখমিলা প্রপার্টিজ লিঃ (লাইসেন্স নং- ১২০৮৯৫৬৪, তাং- ০৬-০৭-২০১৯) এবং আর এফ এক্যুইজিশনস লিঃ (লাইসেন্স নং- ১৫৮১৯৫৮৯ তাং-০৪-০৭-২০২৪)।

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ভূমি মন্ত্রী থাকার সময় মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করে বিদেশে বিত্ত বৈভব অর্জনের ও অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে সাবেক ভুমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী (জাবেদ) ও  তার স্ত্রী রুখমিলা জামান।

চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ও শেখ মুজিবর রহমানের ঘনিষ্ট রাজনৈতিক সহকর্মী আকতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পুত্র সাইফুজ্জামান চৌধুরী। যিনি পরিবার ও নিজ নির্বাচনী এলাকায় জাবেদ নামে বহুল পরিচিত। জাবেদ ব্যবসায়ী পিতার হাত ধরে ব্যবসায় মনোনিবেশ করে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা নির্বাচিত হয়ে পরিচিতি লাভ করেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। পিতার অবর্তমানে ছিলেন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান। পিতা আকতারুজ্জামান চৌধুরী মৃত্যুবরণ করলে পিতার শূন্য আসনে দলীয় মনোনয়ন দেন ফুফু শেখ হাসিনা।

শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহচর আকতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। শেখ হাসিনা আখতারুজ্জামানকে ‘বাবু ভাই’ বলে সম্বোধন করতেন। সেই হিসাবে শেখ হাসিনা হয়ে উঠেন সাইফুজ্জামানের ফুফু। এই ফুফু-ভাতিজার সম্পর্কের রসায়ন আনুকুল্য পায় চট্টগ্রামের সংসদীয় আসন ১৪ আনোয়ারা আসনে। চট্টগ্রামের আনোয়ারা সংসদীয় আসনে ঝানু রাজনীতিকদের হারিয়ে প্রথমবারের মতো মুজিব কোট গায়ে তুলে দলীয় কাজে নেমে পড়েন পিতার উত্তরাধিকার হিসাবে। জয়ও ছিনিয়ে নেন। পরবর্তীতে সাইফুজ্জামান জাবেদ প্রথমে ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং পরে ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এরপর অবৈধ টাকার ভাগ্যে আকাশে উড়তে থাকে জাবেদ। ভূমি মন্ত্রী হয়ে ভূমির লোভে পড়েন জাবেদ। ডানা মেলেন বিদেশের মাটিতে। ভূমি ও এপার্টমেন্ট অর্জনের লোভ দেশের মাটি ছাড়িয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন লুক্রেটিভ (পছন্দনীয়) জায়গায় নোঙ্গর করে। ভূমি প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর জাবেদ ইউসিবি পিএলসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং তার স্ত্রী রুখমিলা জামান ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে স্বামীর স্থলাভিষিক্ত হন।

বাসস’র হাতে আসা দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়,বিশ্বের আলোচিত স্থান সংযুক্ত আরব আমিরাতের বুর্জ খলিফায় এপার্টমেন্টের সংখ্যা ১৫টি। এর মধ্যে সিটি সেন্টার রেসিডেন্সেই আছে ৮টি। যার ৭টি ক্রয় ও রেজিষ্ট্রি হয়েছে ২২ জুন ২০২২ সালে। মে’এইজেম দ্যা ফাস্ট ( গব’ধরংবস ঃযব ভরৎংঃ) আলদালুস-এ ৪১ টি এপার্টমেন্ট। এর মধ্যে ৩৩ টি রেজিষ্ট্রি হয়েছে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে। নাদ আল সাবা এলাকার দ্যা পুলু রেসিডেন্সে- এ২ ভবনে ৩১ টি এপার্টমেন্ট রেজিষ্ট্রি হয়েছে ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। জাবল আলী এরিয়ার প্রিমিয়াম রেসিডেন্সে ২০টি এপার্টমেন্ট। এর ১৭টি রেজিষ্ট্রি হয়েছে ২৭ জানুয়ারি ২০২২। গালফ কমার্শিয়াল এর পেনিনসুলা ও আরবান ওয়েসিসে ২০টি এপার্টমেন্ট, সানরাইজ লিজেন্ডে ১৫ এপার্টমেন্ট এছাড়াও বার্শা সাউথ এর এসমানা ওয়েভস, হিমালয় টাওয়ার, মিউডন ভিউজসহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় ২২৮ টি এপার্টমেন্ট রয়েছে।

যুক্তরাজ্যে লন্ডন শহর আশপাশের বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় ৩৪৩ টি এপার্টমেন্টের অবস্থান শনাক্ত হয়েছে।এরমধ্যে জেডটিএস প্রপাটিস লিমিটেডের নামে ২৭৬টি, নিউ ভেঞ্চার (লন্ডন)লিমিটেড-২৩টি, জেবা প্রপাটিস এর ১টি,সাদাকাত প্রপ্রাটিস লিমিটেড ৮টি এবং আরামিট প্রপাটিসের নামে ৩৫টি এপার্টমেন্ট রয়েছে। এপার্টমেন্ট এলাকা গুলোর মধ্যে সেলফোর্ড, ১৮ ডকস্ট্রিট, ৭৮ স্টক রোড়, হেম্পডেন রো, আর্নিস্টন ওয়ে, আলবার্ট এমবেকমেন্ট, ডেটফোর্ড-কেন্ট, গ্রীনউইচ, সিটি নর্থ ইস্ট টাওয়ার, করসিকন স্কয়ার,গিলিংহাম, ওয়েলিংটন লিভারপুল, মিসিগান,এভারফিল্ডি ভিলেজ অন্যতম।

আমেরিকার ৯টি এপার্টমেন্টের মধ্যে ৮টি নিউইয়র্কে এবং ১টির অবস্থান ফ্লোরিডায়। নিউইয়র্কের ৭ এপার্টমেন্টের ঠিকানাগুলো হচ্ছে ৩০, ২৯নং স্ট্রিট রোড, ৫৯১, ৩নং এভিনিউ, ১০ মেলকম এক্স বুলভার্ড এবং ৯নং এভেনিউ, পোর্ট ইম্পেরিয়াল, নিউইয়র্ক। ফ্লোরিডার এপার্টমেন্ট ঠিকানা হচ্ছে ৩৮নং টেরেস রোড়, ওকালা ফ্লোরিডা-৩৪৪২০।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড.কাজী আকতার হামিদ এ প্রসঙ্গে বলেন,অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইন ২০১২ এর সেকশন ৮ এ বলা হয়েছে, অপরাধ অনুসন্ধান তদন্তে অন্য দেশকে অনুরোধ জানাতে পারবে। যদি দু’দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি নাও থাকে,তবু বিচারিক ও অন্যান্য কার্যধারা বিষয়ে কোন বিদেশী রাষ্ট্র কর্তৃক সহায়তা যাচনা করা হইলে এবং উক্ত অপরাধে ওই দেশের আইনে অপরাধ শাস্তিযোগ্য হইলে উক্ত বিষয়ে সর্বোত্তম পারস্পরিক সহযোগিতা দিতে হবে।

ড. আকতার হামিদ বলেন, উক্ত আইনের সেকশন-৯ এ বলা হয়েছে, যেসব দেশের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে সেসব দেশের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষকে রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী অনুরোধ করতে পারবে। যদি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি না থাকে সেক্ষেত্রে ডিপ্লোমেটিক চ্যানেলে এই অনুরোধ করা যেতে পারে।

তিনি বলেন,মানিলন্ডারিং সব দেশেই অপরাধ। এক্ষেত্রে সম্পদ ক্রোক বা অবরুদ্ধ করতে হলে সংঘটিত অপরাধ সে দেশের আইনে যদি অবৈধ হয়, যদি সম্পদের আয়ের উৎস ও লিগ্যাল ফান্ড যথাযথভাবে দেখাতে না পারে তাহলে ওই দেশের আইন অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা যায়। আদালতের রায়ের সার্টিফাইড কপি এনে বাংলাদেশের আদালতে তা এক্সিকিউট (তামিল) করার আবেদন করা যায়। এক্ষেত্রে সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তৎপর হতে হবে।

বিদেশে অর্জিত সম্পদ ও মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যরিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল জানান, মানিলন্ডারিং বা অর্থ পাচার সারা বিশ্বের একটি সমস্যা। সারা বিশ্বের রাষ্ট্র কাঠামোতে মানিলন্ডারিং ফৌজদারী অপরাধ। প্রত্যেক দেশ এই অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে। তাদের নিজেদের আভ্যন্তরীণ আইনী কাঠামোতেও এর প্রয়োগ রয়েছে। অথচ আর্ন্তজাতিকভাবে একটি দেশের সাথে অপর দেশের মানিলন্ডারিং অনুৎসাহিত করতে আইনের বলিষ্ট প্রয়োগ নেই। ফলে পাচার করা টাকা ফেরৎ আনতে অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়।

ব্যারিস্টার কাজল বলেন, যেসব দেশের সাথে বাংলাদেশ সরকারের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি আছে, তাদের অনুরোধ করলে রেজাল্ট আসতে পারে। চুক্তির বাইরেও পারস্পরিক আস্থা ও সম্পর্কের উপর অনেক সমস্যার সমাধান নির্ভর করে। তবে তা নির্ভর করবে উভয় দেশের সরকারের সদিচ্ছার উপর। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রনালয়কে এর পেছনে সময় দিতে হবে। যে সব দেশে টাকা পাচার কিংবা সম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে তা আইনের মধ্য দিয়েই দুদেশের সরকারী উদ্দ্যেগে ফেরানো সম্ভব। এতে অর্থ পাচার রোধে দু দেশই বেনিফিশিয়ারি হবে।

এই বিভাগের সব খবর

হত্যাচেষ্টা মামলায় সালমান-পলক চার দিনের রিমান্ডে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. শামীমকে হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক...

৬ কোটি টাকার গাড়ি উপহার পেলেন মাধুরী

বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত। বরাবরই গাড়ির শখ রয়েছে মাধুরীর। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি গাড়ির কালেকশন রাখতে পছন্দ করেন তিনি। এবার বছরের শুরুতেই বড় উপহার...

টিউলিপের স্থলে নিয়োগ পেলেন এমা রেনল্ডস

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার মঙ্গলবার টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের পর তার স্থলে নতুন অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে এমা রেনল্ডসকে নিয়োগ দিয়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত...

সর্বশেষ

হত্যাচেষ্টা মামলায় সালমান-পলক চার দিনের রিমান্ডে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. শামীমকে...

৬ কোটি টাকার গাড়ি উপহার পেলেন মাধুরী

বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত। বরাবরই গাড়ির শখ রয়েছে...

টিউলিপের স্থলে নিয়োগ পেলেন এমা রেনল্ডস

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার মঙ্গলবার টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের পর...

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়াসহ সবাইকে খালাস

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা বাড়িয়ে হাইকোর্টের দেয়া ১০...

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সেই মতিউর ও তার স্ত্রী গ্রেপ্তার

বহুল আলোচিত ছাগলকাণ্ডে জড়িত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক...

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ‘স্যালভেজ কর্মশালা ২০২৫’ অনুষ্ঠিত

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ (বানৌজা) নির্ভীক ঘাঁটিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর...