নগরীর সৌন্দর্য্য হানি করে এমন ব্যানার,ফেস্টুন, স্টিকারের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে নিজের ব্যানার নিজেই ছিঁড়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
আজ বুধবার বিকেলে নগর ভবনের সম্মুখ থেকে মেয়রকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টানানো ব্যানার ও পোস্টার নিজ হাতে খোলেন তিনি। এ সময় সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমীকে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে সড়ক, অলি-গলিতে যত ব্যানার,পোস্টার,ফেস্টুন রয়েছে তা দ্রুততার সাথে অপসারণ করার নির্দেশনা দেন তিনি।
মেয়র বলেন,‘আমি বলেছি আপনারা কেউ ব্যানার পোস্টার লাগাবেন না। এই শহরকে সুন্দর রাখুন,পরিষ্কার রাখুন। নালার মধ্যে কাগজ, বোতল, প্লাস্টিক, পলিথিন কিছুই ফেলবেন না। আপনার শহরকে আপনার পরিষ্কার রাখতে হবে।’
শাহাদাত বলেন, ‘আমি মেয়র নির্বাচিত হয়েছি, এজন্য আপনারা আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আপনাদের ইমোশনকে আমি সম্মান জানাচ্ছি, আপনারা আমাকে ভালোবাসেন।
আপনাদের এ ভালোবাসার দাম কতটুকু আমি দিতে পারবো জানি না। কিন্তু এর প্রেক্ষিতে আপনারা যে ব্যানার পোস্টার লাগিয়েছেন এখন থেকে সেটা খুলে ফেলবেন। আমি সাতদিন আগেও বলেছি। কিন্তু এর মধ্যে আমি প্রত্যেকটা জায়গায় দেখেছি এখনও ব্যানার রয়ে গেছে, পোস্টার রয়ে গেছে। ওই ব্যানার-পোস্টার সব খুলে ফেলবেন। পাশাপাশি অন্যান্য ব্যানার ও পোস্টার যেগুলো আছে অন্য কারো নামে সেগুলো আপনারা পরিষ্কার করে ফেলবেন। সবাই মিলে এই শহরকে পরিষ্কার রাখতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই।
আমি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাকে এক সপ্তাহ আগে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছি। এখন উনাকে বলছি, সমস্ত ব্যানার পোস্টার শুধু এখানে নয়, চট্টগ্রাম শহরে যত ব্যানার পোস্টার সবগুলো ক্লিয়ার হয়ে যাক।’
এদিকে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের চলমান ‘এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজে গুণগত মান ঠিক না থাকলে বিল না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এছাড়া, প্রকল্পের কাজে কেউ অবৈধ লেন-দেন করলে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে বুধবার দুপুরে নগর ভবনের কনফারেন্স রুমে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের সাথে বৈঠকে এ মন্তব্য করেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
বৈঠকে মেয়র বলেন,‘এই শহর আমার আপনার সবার। এখানকার রাস্তা দিয়ে আমার পরে আমার ছেলে-মেয়েরা হাঁটবে, আত্মীয়-স্বজন হাঁটবে, নেক্সট জেনারেশন এ পথ দিয়ে হাঁটবে।
তাই কাজের কোয়ালিটি শতভাগ ঠিক রাখতে হবে। এমনভাবে রাস্তা করতে হবে যাতে বছরের পর বছর উদাহরণ হিসেবে সবাই বলতে পারে, এই রাস্তাটা অমুক প্রতিষ্ঠান করেছে।’
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, ‘ইমিডিয়েটলি সমস্ত প্রকল্প ভিজিট করে রাস্তার মালামাল ও কোয়ালিটি টেস্ট করে জানাবেন। যারা ভালো কাজ করেছেন তাদের বিল দিয়ে দেয়া হবে। আর যারা খারাপ কাজ করবে তাদের পানিশমেন্টের আওতায় আনা হবে। এখানে আমি ছাড় দিতে রাজি নই। জনগণের টাকা নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলেছে তাদেরকে কিন্তু আমরা পানিশমেন্টের আওতায় আনব। কাজেই আপনারা কোয়ালিটির দিকে নজর দিয়ে সুন্দরভাবে কাজ করুন। আজ থেকে কাজ শুরু করেন, কাজ বন্ধ রাখবেন না।’
নগরীর প্রয়োজনীয় স্থানগুলোতে ফুটওভার ব্রিজ হচ্ছে না অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, আপনারা ফুটওভার ব্রিজের কথা বলছেন। ফুটওভার ব্রিজের বাস্তবতা নিরীক্ষা করে ১৭ টা ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে দেওয়া হবে এবং সব কাজ দ্রুত শেষ আমি কিছু দৃশ্যমান রেজাল্ট জনগণকে দেখাতে চাই।
ঠিকাদাররা কাজ করার ক্ষেত্রে পূর্বের কাউন্সিলররা ঘুষ নিতেন এবং ঘুষ না দিলে মেয়র-কাউন্সিলর মিলে কাজে বাধা সৃষ্টি করতেন অভিযোগ করলে মেয়র বলেন, ‘আপনারা ঘুষ হিসেবে কাউকে টাকা দেবেন না। আপনারা বললেন, কোনো কোনো কাউন্সিলর আগে আপনাদের কাছ থেকে ৮, ১০, ১৫ লাখ করে টাকা নিয়েছে। এটার তালিকা দিন। কোনো কর্মকর্তা আপনাদের কাছে টাকা ডিমান্ড করলে সরাসরি আমাকে জানাবেন, তাকেও পানিশমেন্টের আওতায় আনবো। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
সভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় ‘এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের পিডি মো. আনিসুর রহমানসহ প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।