আনন্দঘন ও প্রাণবন্ত পরিবেশে গৌরবের ৬৫ বছর উদযাপন উপলক্ষে পরস্পর প্রীতিসম্ভাষণ বিনিময়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো চট্টগ্রাম লেডিস ক্লাবের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ২০২৪। এতে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জেসমিন আক্তার বলেছেন, দিনের মতো সমাজকে আলোকিত করতে সন্ধ্যায় সলতে জ্বালানোর কাজটি করছেন সমাজের কিছু অগ্রসর নারী। যারা সংসার চক্রে আবদ্ধ না থেকে ঘরের বাইরে এসে অনগ্রসর মানবজগতকে, সমাজকে নানামুখী কল্যাণে আলোকিত করছেন। নিজেদের যোগ্যতা, পারদর্শিতা দেখিয়ে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সমাজ উন্নয়ন ও মানবকল্যাণে গৌরবময় ভূমিকা রাখছেন। চট্টগ্রাম লেডিস ক্লাবের এ সব নারী অসহায় দুখি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেও নিঃস্বার্থ নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তারা একে অপরের সুখে-দুঃখে সমখুশী-সমব্যথী। তারা সমাজসেবার ফাঁকে ফাঁকে বিনোদন করে থাকেন।
তিনি গতকাল ৯ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় লেডিস ক্লাবের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম লেডিস ক্লাবের নারীরা নারী জাগরণ ও নারীসমাজকে সচেতন করার পাশাপাশি সুস্থ, সুন্দর, সাহিত্য-সংস্কৃতির মাধ্যমে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মানবসেবা ও জনকল্যাণ কাজের মধ্য দিয়ে নিজেরা অনেকের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছেন। এদের মধ্যে অহংকার করার মতো অনেক ব্যক্তিত্ব আছেন যারা নতুন প্রজন্মের কাছে আইকনিক, অনুসরণীয় ও প্রেরণাদায়ী। আগামীতেও এ ক্লাবের সদস্যরা দেশ ও জাতির উন্নয়নে, মানবকল্যাণে, নারী জাগরণে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবেন- এ প্রত্যাশা করা যায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্লাব সভানেত্রী খালেদা আউয়াল। বক্তব্য রাখেন ক্লাব উপদেষ্টা সাবেক যুগ্ম সচিব ড. জয়নাব বেগম। তিনি লেডিস ক্লাবের নারীদের তারুণ্যে উদ্দীপ্ত এক ঝাঁক নারী আখ্যায়িত করে বলেন, এরা বয়স্ক হলেও এদের মধ্যে অবাক করা সততা, নিষ্ঠা, কর্মস্পৃহা ও প্রচুর প্রাণশক্তি রয়েছে। সমাজের এমন কোন দিক নেই এরা বিচরণ করেননি। সদর্পে সমাজে বিশাল অবদান রেখে চলেছে এসব নারী। এরা একতাবদ্ধ হয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে রীতিমতো দুঃসাহসিক কাজও করে থাকেন। আমরা আশাবাদী এরা অনবদ্য কর্মচাঞ্চল্যে শেকড় থেকে শিখরে উঠে যাবেন।
সংক্ষিপ্ত ক্লাব পরিচিতি তুলে ধরেন ক্লাবের সাবেক সভানেত্রী জিনাত আজম। ত্রি-বার্ষিক প্রতিবেদন ও লেডিস ক্লাব বালিকা সদন প্রতিবেদন পাঠ করেন ক্লাব সম্পাদিকা বোরহানা কবির। স্বাগত বক্তব্য দেন ক্লাবের সহ সভানেত্রী পারভিন জালাল। ক্লাব সদস্যা কবি মর্জিনা আখতারের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাবেক রোটারী গভর্নর এম এ আউয়াল, কবি-সাংবাদিক রাশেদ রউফ, কাজী রুনু বিলকিস।
সংবাদিক রাশেদ রউফ বলেন, ৬৫ বছর পথচলা অত্যন্ত আনন্দের, গৌরবের। লেডিস ক্লাবের এ অগ্রযাত্রা রীতিমত বিস্ময়কর। সুন্দর, সুস্থ ও অসাম্প্রদায়িক দেশকে এগিয়ে নিতে নারীদের এ সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
শুরুতেই পবিত্র কোরান তেলাওয়াত করেন ক্লাব সদস্যা রোকেয়া আহমেদ। অনুষ্ঠানে দুই দশক ধরে ক্লাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৪ জন সদস্যাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননাপ্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন প্রধান অতিথি জেসমিন আক্তার।
দ্বিতীয় পর্বে ক্লাব সদস্যা রুহী মোস্তফা ও আক্তার বানু ফ্যান্সীর সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কোরাস সংগীতে অংশ নেন সালমা রহমান, নাজনীন আরা শান্তা, পারভিন জালাল, খন্দকার ইসমত আরা, শাহানা আক্তার জাহান, রেহেনা আক্তার জাহান, মর্জিনা আখতার, সুলতানা নূরজাহান, নাসরিন সরোয়ার মেঘলা, ডা. হাফসা সালেহ, মিনু আলম, লায়লা ইব্রাহিম বানু, ফারহানা হক, আশরাফুন্নেসা।
একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন রুহী মোস্তফা, সালমা রহমান, নাজনীন আরা শান্তা, শাহানা আক্তার জাহান, রেহানা আক্তার জাহান। দ্বৈত সংগীত পরিবেশন করেন মিসেস ও মিস্টার সেলিনা আখতার। কবিতা আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী আয়েশা হক শিমু ও ক্লাব সদস্যা নাছিমা শওকত। নৃত্যশিল্পী সোমা বোসের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যম একাডেমির শিল্পীরা। কৌতুক নাটিকা উপস্থাপন করেন ক্লাব সদস্যা যথাক্রমে আক্তার বানু ফেন্সী ও আশরাফুন্নেসা। সবশেষে অনুষ্ঠিত হয় র্যাফেল ড্র।
নারী জাগরণ ও মানবকল্যাণে ভূমিকা রাখছে চট্টগ্রাম লেডিস ক্লাব
অনলাইন ডেস্ক