বছর পেরিয়ে আবারও শুরু হতে যাচ্ছে সনাতনীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এই উৎসব ঘিরে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এখন সাজ সাজ রব। তবে উৎসবের মাঝে রয়েছে শঙ্কাও।
এবার গতবারের চেয়ে পূজা কমেছে ৪টি। নগরের ১৬ থানার ৪১ ওয়ার্ডে প্রতিমা ও ঘট পূজা মিলে ২৯২ মণ্ডপে পূজা হবে— এমনটিই জানিয়েছে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ। যদিও গতবছর পরিষদের করা সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছিল ২৯৩টি পূজামণ্ডপের কথা। এর আগে ২০২২ সালে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ২৮২, ২০২১ সালে ২৭৬।
এদিকে নগরে পূজা কমে গেছে বলে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টটি গুজব বলে জানান মহানগর পূজা পরিষদ নেতারা।
নেতারা বলছেন, গতবারের ২৯৬ মণ্ডপের মধ্যে এবার চকবাজারে দুটি, পাঁচলাইশে একটি এবং অন্য একটি থানার একটিসহ মোট ৪টি পূজা হচ্ছে না। বাকি ২৯২ মণ্ডপেই পূজা হবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সব মণ্ডপকেই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন তাঁরা।
এদিকে ভয়-শঙ্কার মাঝেও প্রায় সব পূজামণ্ডপেই চলছে দেবী দুর্গাকে বরণের প্রস্তুতি। রঙ-তুলিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। মৃৎশিল্পীরা কারখানায় দিন-রাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন নির্দিষ্ট সময়ে পূজা কমিটিকে প্রতিমা বুঝিয়ে দিতে।
এদিকে নগরের বেশ কয়েকটি মৃৎ শিল্পালয় ঘুরে দেখা গেছে, কেউ রঙ-তুলি নিয়ে ব্যস্ত, কেউ ফোটাচ্ছেন চোখ, আবার কেউ ব্যস্ত পায়ে আলতা আর নখ রাঙাতে। এভাবেই নানা রঙে দৃষ্টিনন্দন সাজে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশকে। উৎসুক দর্শনার্থীদেরও ভিড় করতে দেখা গেছে এসব মৃৎ শিল্পালয়ে। ভিড় এড়াতে কয়েকটি স্থানে সংরক্ষিত করা হয়েছে প্রবেশ।
মৃৎশিল্পীরা জানান, এবার অর্ডার কমেছে এবং প্রতিমা কম তৈরি করেছেন। প্রতিবছর বৈশাখ থেকে শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রথমে খড় দিয়ে প্রতিমার কাঠামো তৈরি করে দেওয়া হয় মাটির প্রলেপ। তারপর শুকিয়ে করা হয় ফিনিশিং। এরপর দেওয়া হয় সাদা রঙ। সাদা রঙ শুকালে বিভিন্ন রঙে সাজিয়ে তোলা হয় প্রতিমা। ইতিমধ্যে প্রতিমার ৮০ ভাগ কাজ প্রায় শেষ।
নগরের সদরঘাটের স্বর্গীয় দুলাল পাল প্রতিমালয়ের স্বত্বাধিকারী সুজন পাল বলেন, এবার প্রতিমা অর্ডার কিছুটা কমেছে। গতবার প্রায় ৪০টির মতো প্রতিমার অর্ডার পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার ৩০টি প্রতিমা অর্ডার পেয়েছি। প্রায় কাজ শেষ এখন শুধু প্রতিমাকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে অর্ডার ডেলিভারি দিতে দিন-রাত কাজ চলছে।
নটরাজ শিল্পালয়ের স্বত্বাধিকারী মহাদেব পাল বলেন, দেশের অবস্থার বিবেচনায় এবার ১৮টি প্রতিমা তৈরি করেছি। সবগুলোই অর্ডার হয়েছে। তবে গতবার ২৫টি তৈরি করেছিলাম।
এছাড়া একই জায়গার লোকনাথ শিল্পালয়ে গতবার ৩১টি প্রতিমা তৈরি করা হলেও এবার ২২টি তৈরি করা হয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী।
এদিকে পূজায় শঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে মহানগর পূজা পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসবকে বাঙালির উৎসব হিসেবেই আমরা প্রতিবছর পালন করি। অন্তবর্তীকালীন সরকারের এই সময়ে সকল রাজনৈতিক দল যদি আন্তরিকতার সঙ্গে অসম্প্রদায়িক চেতনায় মিলেমিশে এই উৎসবকে সম্পন্ন করতে চাই তাহলে কোনো অপশক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ পাবে না।
তিনি বলেন, পূজায় ১৬ থানার পূজা কমিটিকে ১৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা মেনে রাত ১১টার মধ্যে পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে বলা হয়েছে। মণ্ডপে ডিজে গান না বাজাতে বলা হয়েছে। পূজায় নিরাপত্তায় প্রশাসনের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছি।
অপরদিকে মহানগর পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, একটি ইলেকট্রনিক সংবাদ মাধ্যমে সংবাদের সূত্র ধরে ফেসবুকে পূজামণ্ডপের সংখ্যা কমেছে বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তবে তারা আমাদের কাছ থেকে কোনোরকম বক্তব্য নেননি। মাত্র তিনটি থানা এলাকায় ৪টি মণ্ডপ কমেছে। বাকি ২৯২ মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে সব মণ্ডপকেই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছি। সেই অনুযায়ী আমরা ১৬ থানা এলাকার সকল পূজামণ্ডপের তালিকা প্রশাসনের কাছে দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, পঞ্জিকা অনুযায়ী আগামী গত ২ অক্টোবর (বুধবার) শুভ মহালয়া ছিল। মহালয়ার দিন থেকে শুরু হয় পূজার ক্ষণগণনা। ৮ অক্টোরব (মঙ্গলবার) মহাপঞ্চমী, ৯ অক্টোবর (বুধবার) ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ১৩ অক্টোবর (রোববার) বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় উৎসব।
শাস্ত্র অনুযায়ী দেবী দুর্গা এবার মর্তে আগমন করবেন দোলা বা পালকিতে। ফল মহামারী ও দুর্ভোগ। আর গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। ফল ছত্রভঙ্গ। অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা বাড়বে। উভয় ক্ষেত্রেই ফলাফল অশুভ।