আপনি যদি শিক্ষক হিসাবে ক্লাসরুমে সম্মান এবং মর্যাদা পেতে চান, তাহলে আপনাকে চীন, মালয়েশিয়া বা তাইওয়ানে যেতে হবে।
আন্তর্জাতিক এক সমীক্ষা বলছে, এই তিনটি দেশে শিক্ষকদের সর্বাধিক মর্যাদা দেওয়া হয়। ব্রিটেন-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইকোনোমকি এবং সোশ্যাল রিসার্চ ৩৫টি দেশে ৩৫,০০০ মানুষের ওপর এক গবেষণা চালিয়ে যে “শিক্ষক মর্যাদা সূচক” প্রকাশ করেছে, তাতে এই চিত্র বেরিয়ে এসেছে। ব্রিটেনে শিক্ষকের মর্যাদা সূচকের মাঝমাঝি জায়গায়। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং জার্মানির চেয়ে ওপরে। চীন তালিকার সবচেয়ে ওপরে। চীনের ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্বাস করে শিক্ষকদের সম্মান করতে হবে, যেখানে আন্তর্জাতিকভাবে এই গড় ৩৫ শতাংশ। ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকায় শিক্ষকদের সম্মান দেওয়ার ইস্যু ততটা গুরুত্ব পায়না যতটা পায় এশিয়ায়। বিশেষ করে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান বা মালয়েশিয়ায় শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা অনেক ওপরে। এবং আন্তর্জাতিকভাবে যে সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হয়, সেখানে এই দেশের ছাত্র-ছাত্রীরাই সবচেয়ে ভালো করছে। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে, মর্যাদা রয়েছে বলে ভালো শিক্ষক পাওয়া এবং ধরে রাখাও সহজ হয় এসব দেশ।
গবেষণায় দেখা গেছে, চীন, ভারত বা গানায় এখনও পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের শিক্ষক হতে উৎসাহিত করে। অন্যদিকে ইসরায়েল বা ব্রিটেনে বাবা-মায়েরা চাননা তাদের সন্তানরা শিক্ষকতায় ঢুকুক। ভার্কি ফাউন্ডেশন নামে যে দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি এই গবেষণায় পয়সা জুগিয়েছে, সেটির প্রতিষ্ঠাতা সানি ভার্কি বলেন, “এই গবেষণায় একটি প্রচলিত বিশ্বাস প্রমাণিত হলো যে যেসব সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা বেশি, সেখানে শিক্ষার্থীরা ভালো শিক্ষা পায়।” “কোনো সন্দেহ ছাড়াই আমরা এখন বলতে পারি, শিক্ষককে মর্যাদা করা কোনো নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটা কোনো দেশের শিক্ষার মানের জন্য জরুরী।” মানসম্মত শিক্ষার জন্য প্রয়োজন মানসম্মত দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক। তার জন্য প্রয়োজন শিক্ষকদের আর্থসামাজিক মানমর্যাদা সমুন্নত রাখা। যার দায়িত্ব বর্তায় রাষ্ট্রের উপর। জাতিকে মেধাবী করতে এবং দেশকে বিশ্ব দরবারে সুমহান মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা দিতে পারে একমাত্র শিক্ষায় উন্নত জনগোষ্ঠী। দেশপ্রেমিক সুনাগরিক তৈরীতে সুশিক্ষা যেমন নিশ্চিত হওয়া জরুরী ঠিক তেমনই প্রয়োজন সুশিক্ষকের। তার জন্য আমাদের প্রয়োজন শিক্ষকদের মান মর্যাদা সমুন্নত রাখা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র জন্ম হওয়ার এতো বছর পরও আমরা শিক্ষকদের মূল্যায়ণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে রাষ্ট্র পুরোপুরি ব্যর্থ। আমরা খুব বেশী মনোযোগী হয়ে উঠেছি ইট পাথরের উন্নয়নে। যা ক্ষণস্থায়ী। নিত্যকে ফেলে আমরা বাস করছি অনিত্যের সংসারে। যা জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা, সরকারি থেকে বেসরকারি রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। যা নিরসন হওয়া জরুরী। বৈষম্যের চিত্রটা যদি একটু পরখ করি তাহলে সহজেই অনুমান করা যাবে দেশে শিক্ষকদের মান ও আর্থসামাজিক মর্যাদা কোন্ পর্যায়ে উন্নীত। প্রাথমিক পর্যায়ে সহকারী শিক্ষকরা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর মর্যাদা পান। শুধু প্রধান শিক্ষকের পদ দ্বিতীয় শ্রেণির। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে অনেকে জাতীয় বেতন স্কেলের শুধু মূল বেতন পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, সৌদি আরবসহ বেশ কিছু দেশের শিক্ষকরা অনেক বেশি বেতন পান। বাংলাদেশি টাকার হিসাবে তাদের মাসিক বেতন গড়ে আট লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা, যা বাংলাদেশের একজন শিক্ষকের কয়েক বছরের বেতনের সমান। প্রতিবেশী দেশ ভারতের শিক্ষকরাও বাংলাদেশের শিক্ষকদের চেয়ে বেশি বেতন পান। এখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন শুরু ১১ হাজার ও এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষকদের বেতন যেখানে ১২ হাজার ৫ শত টাকায় শুরু, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষকদের বেতন শুরু হয় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা থেকে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি তথ্যে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রারম্ভিক মাসিক বেতন শুরু ১১ হাজার টাকা থেকে আর ভারতে ৩৫ হাজার টাকা, পাকিস্তানে ৩০ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কায় ২৭ হাজার টাকা, নেপালে ৩৫ হাজার টাকা, ভুটানে ৩৩ হাজার টাকা ও মালদ্বীপে ৬৩ হাজার টাকা। মাধ্যমিকে বাংলাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা, ভারতে ৪০ হাজার টাকা, পাকিস্তানে ৩০ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কায় ৩২ হাজার টাকা, নেপালে ৩৫ হাজার টাকা, ভুটানে ৩৯ হাজার টাকা ও মালদ্বীপে ৯০ হাজার টাকা। আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষার প্রায় ৯৭ শতাংশ বেসরকারি। মূলত এগুলো এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে কর্মরত পাঁচ লাখেরও অধিক শিক্ষক-কর্মচারী। সরকার সহকারী শিক্ষকদের একাদশ গ্রেডের সমপরিমাণ মূল বেতন দেয়। সেখানে তাদের ১২ হাজার ৫ শত টাকা স্কেলে বেতন শুরু হয়। এর বাইরে তারা বাড়িভাড়া বাবদ মাসে এক হাজার টাকা ও চিকিৎসা ভাতা বাবদ মাসে ৫০০ টাকা পান। সেই হিসাবে শুরুতে একজন শিক্ষক সরকারি ভাতা ১৪ হাজার টাকা পান। এর বাইরে যেসব স্কুলের আয় আছে, তারা ফান্ড থেকেও কিছু টাকা শিক্ষকদের দেয়। তবে সব স্কুল তা দিতে পারে না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা উৎসব ভাতা পান মূল বেতনের ২৫ শতাংশ। তবে স্কুলের কর্মচারীরা উৎসব ভাতা পান মূল বেতনের ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া তারা সরকারি কর্মচারীদের মতো বৈশাখী ভাতা পান। তবে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যারা সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে যোগ দেন, তারা শুরুতেই দশম গ্রেডে ২৬ হাজার টাকা বেতন পান। এর বাইরে তারা সন্তানদের পড়ালেখার জন্য ভাতা পান। পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতাসহ নানা ধরনের সুবিধা পান।
তবে সরকারি বা এমপিওভুক্ত উভয় ধরনের স্কুলেই শিক্ষকরা উচ্চতর গ্রেড বিএড সম্পন্ন হলে আলাদা ইনক্রিমেন্ট পান, তাদের বেতনও কিছুটা বাড়ে। কিন্তু সারা দেশে প্রায় ৩২ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও সেখানে মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি স্কুলের সংখ্যা মাত্র ৭০০-র কাছাকাছি। সরকারি এবং বেসরকারি অর্থাৎ এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেতনের যে বৈষম্য যা দীর্ঘ সময় ধরে পরিবর্তন করতে পারল না স্বাধীন দেশের সরকার সমূহ। অথচ উভয়ক্ষেত্রে একই পাঠক্রম পাঠ্যসূচী বিদ্যমান। দেশকে যে উন্নত করব তা কীভাবে সম্ভব এমনতরো বৈষম্য রেখে! দেশের সিংহভাগ শিক্ষকের আর্থসামাজিক দুরাবস্থা দূরীভূত না করে কখনো সম্ভব নয় কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো! নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ, বিবেক আর পেশাগত আচরণের বেড়াজালে বন্দি শিক্ষকদের চাহিদা, আবেগ, ভালবাসা – ভাললাগা, পেটে ক্ষুধা, পকেট খালি, সব – সময় অভাব – অনটন, উঠতে – বসতে, চলতে – ফিরতে নিত্যদিনের টানাপোড়েন এত কিছুর পরও ভাল থাকার অভিনয় করতে করতেই একজন শিক্ষকের জীবনের সব শেষ হয়ে যায়। তবু নিয়ম মেনে বিদ্যালয়ে যথাসময়ে যাওয়া, রুটিন ক্লাস, প্রক্সি ক্লাস, স্টাফ মিটিং, শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ, অভিভাবকদের সাথে সব আলাপ সেরে ক্লান্তদেহে বাড়িতে ফিরে আসার পর বাড়ির গিন্নীর খাবার পরিবেশনের পরিবর্তে এটা নেই, ওটা আননি কেন? কিসের মাস্টারি করো? মেয়েটার এটা চাই, ছেলেটার ওটা চাই, ছেলে – মেয়েদের কোচিং – বিদ্যালয় খরচ, অমুক বাড়ির দাওয়াত, এরুপ ফর্দ হাজির। কষ্টেশিষ্টে খুব গুরুত্বপূর্ণ ২/৩ টি দাবি পূরণ করলেই পকেট খালি। বাকীদিনগুলো হয় মহাজনদের নিকট থেকে সুদে টাকা নিয়ে অথবা ধার দেনা করে চলতে হয়। এইভাবে হাজার হাজার টাকা ঋণ করে ঐ শিক্ষক মানসিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যায়। একটা পর্যায়ে পাঠদানের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন একসময়ের স্বনামধন্য শিক্ষকটিও। এরপরে শুরু হয় ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক ও শিক্ষার্থী কর্তৃক ঐ শিক্ষককে অবহেলা। এভাবে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় একসময়ের তুখোড় একজন শিক্ষকের জীবন। আর্থিক সংকট কেড়ে নিয়ে যায় তার আদর্শ, মেধা, সৃজনশীলতা। নষ্ট করে দেয় একটা সমাজের তুখোড় জ্ঞানভান্ডারকে, একটা পরিবারকে। এটাই বাস্তবতা। এটাই আজকের জাতির বিবেকদের প্রকৃত অবস্থা।
শিক্ষক সম্মেলনে দাওয়াতি পন্ডিতেরা এসে শিক্ষকদের উপদেশ দিতে শুরু করেন। এটা মহান পেশা, জমিদারদের শখের পেশা। যারা এসব উপদেশ বাণী শুনান তাদের বলি, আগে মোট জনসংখ্যার ৫-৬% মানুষ লেখাপড়া করত। যারা শিক্ষকতা করত তারা জমিদার পরিবারের। শখের বশে সময় কাটাতে এখানে আসত। কিন্তু আজ শিক্ষাটা শখের বস্তু নয়, এটা একটা শিশুর বাধ্যতামূলক কাজ এবং মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। এখন শখ নয় সারাদেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণ করছে ৬-৭ লক্ষ শিক্ষক। প্রতিদিন একজন শিক্ষক গড়ে ৬৫০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা একটা বিশাল শ্রম। এই শ্রমটি সাধারণ শ্রমিক বা সমালোচনাকারী পন্ডিত বা এসিতে বসা জ্ঞানপাপীরা শিক্ষকদের এই শ্রমকে মূল্যায়ণ করার ক্ষমতা রাখেন কি? অথচ অমানুষিক খাটুনি খাটার পর একজন শিক্ষককে নামেমাত্র অনুদান তুলে দেওয়া হয় মাস গেলে। অথচ স্থানীয়, জাতীয়সহ প্রায় গুরুত্বপূর্ণ কাজে সরকারকে সাহায্য করেন আমাদের শিক্ষক সমাজ। কথায় আছে, পেটে খেলে পিঠে সয়। আপনি পরিশ্রম করাবেন কিন্তু পারিশ্রমিক দিবেননা ঠিকমত, এটা কেমন কথা। এর নাম জুলুম।শিক্ষকদের জুলুম করবেন আবার তাদের নিকট থেকে ১০০% ফলাফল আশা করবেন এটা কেমন কথা? আমরা আপনাদের কতটুকু বাধ্য শ্রমিক ভাবুন? প্রত্যেক বেসরকারি শিক্ষকের মনে অসন্তোষ থাকলেও তারা আপনাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেনা, কারণ তারা বিশ্বাস করে আপনারা তাদের মনের আশা পূরণ করবেন। শিক্ষকরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করলে সমস্ত কিছু বাতাসের মতো উড়ে যাবে একসেকেন্ডেই।
তবে শিক্ষকরা তো লাঠিয়াল হতে চাইনা। শিক্ষকরা হতে চাই প্রকৃত শিক্ষক। জাতি যাদের দিকে চেয়ে আছে তাদের সন্তানদের পরিপূর্ণ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে, আদর্শ মানুষ হিসেবে তাদের সন্তানদের গড়ে তুলতে, সুস্থ নাগরিক হিসেবে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে – সেই শিক্ষকরা কেন লাঠি নিয়ে নামতে হবে রাস্তায়, কেন কাদঁতে হবে রাজপথে পড়ে, কেন পুলিশের সাথে মারামারি করতে যাবে জাতির বিবেকরা? আর যদি রাজপথে যেতেই হয় তখন এ লজ্জা হবে কার? শিক্ষকদের, না সরকারের?কত অসহায় আমাদের এই শিক্ষক সমাজ ! যারা এই শিক্ষকদের কল্যাণে ঐসব দামী চেয়ারে বসে কোর্মা – পোলাও খায় আর শিক্ষকদের দাবীর বিরুদ্ধে সরকারকে বুঝাই তাদের বুঝা উচিত আমরাই তাদের যত্ন করে পড়াশোনা করিয়ে ঐখানে পাঠিয়েছি। তাদের কৃতজ্ঞতাবোধ জাগ্রত হউক, শিক্ষক ও গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার চেতনার চৈতন্য ঘটুক। নির্ভার এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে শিক্ষক সমাজ সৃজনে মননে অনুশীলন অনুধ্যানে নিজেকে আরো দক্ষ ও যোগ্য করে আগামীর বিশ্বের সাথে সমমর্যাদায় উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য বৈষম্যের অর্গল ভেঙে সমতার পথে এগিয়ে নিয়ে লক্ষ লক্ষ শিক্ষকের মনস্কামনা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এগিয়ে আসবেন এই কামনা। এবং বিশ্ব শিক্ষক দিবসের এই প্রত্যাশা।