বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের শেখ হাসিনা প্রশ্নে ভাবনা যেমনই থাকুক,দেশের গণমাধ্যম তাঁর ভারতে অবস্থানের সময়কাল নিয়ে যে শিরোনামই করুক,বাস্তবতা হলো,শেখ হাসিনাকে ভারতে রাখার প্রশ্নে সে দেশের রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে বিরল ঐক্যমত্যের নজির স্থাপিত হয়েছে।
ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও স্মার্ট বাংলাদেশ নিউজ অনলাইনের পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদকের তিনজন স্বনামধন্য ভারতীয় সাংবাদিকের সঙ্গে ফোনালাপের মাধ্যমে এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। শুধু তাই নয়,সম্প্রতি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র এর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার একটি ভারতীয় টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পূর্বে কিভাবে তাঁর ভারতে সেফ এন্ট্রি আয়োজন হয়েছিলো,কখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাবেন,সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কি ও কতোটা ভূমিকা ছিলো,সেইসব অজানা অনেক কথা বলেছেন। একইসাথে ‘সবকিছু বলার সময় এখনো আসেনি, আপাততঃ যতোটা বলেছি সেটুকুই থাক’ বলে নেপথ্যে আরও চমক জাগানিয়া গল্প যে লুকিয়ে আছে সেই ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন র এর সেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের সিনিয়র সাংবাদিক শরন ভেংকটেশ ফোনালাপে গত ৬ সেপ্টেম্বর দিবাগত মধ্যরাতে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে বলেন,আপনাদের(বাংলাদেশের) মিডিয়া যে খবর প্রকাশ করছে (এবাউট ইয়োরস প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা’স ষ্টেয়িং ইন ইন্ডিয়া)আপনাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে থাকা নিয়ে,তাঁর সবটাই অনুমান নির্ভর ও অসত্য।তিনি বেশ সতর্কভাবে শেখ হাসিনাকে ‘ইয়োরস প্রাইম মিনিস্টার’ সম্বোধন করে কথাটি বললে এই প্রতিবেদক তাঁর ভুল ধরিয়ে দিতে এক্স শব্দটি বললে,শরন ভেংকটেশ দৃঢ়ভাবে বললেন, ‘ইট’স ইয়োর ওপিনিয়ন,নট মাই অর আস’। তাঁর কথাটি বেশ ইঙ্গিতপূর্ন মনে হওয়ায় তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়,আপনারা কি তাহলে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর সমমর্যাদায় রেখেছেন?সরাসরি তিনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলেন, আপনারা(বাংলাদেশি মিডিয়া) একটা বিষয় প্রতিষ্ঠিত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন,তাহলো শেখ হাসিনা পতিত স্বৈরাচার। তিনি রেফারেন্স হিসেবে বাংলাদেশের শীর্ষ একটি দৈনিকে সম্প্রতি প্রকাশিত দুটো নিবন্ধের কথা উল্লেখ করেন একদম প্রকাশের তারিখ,পৃষ্ঠা নম্বর সহ।তিনি বলেন,ভারতের কোন ব্যক্তি,গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল কিন্তু তাঁকে(শেখ হাসিনা) ঠিক উল্টো দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে।
তাঁকে একজন সফল রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে সম্মান করে।আর জাতি হিসেবে আপনারা যে কেমন সেটা তো ১৯৭৫ সালেই প্রমান করেছিলেন। ভারতের নতুন প্রজন্ম আপনাদের একই রুপে আবিস্কার করলো ২০২৪ এর ৫ আগষ্টে।শুধু ভারত কেনো,সারা পৃথিবীই আপনাদের সম্পর্কে জেনেছে।মিঃ ভেকটেশ আরও কিছু বলেছেন ফোনালাপে বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে,সেসব আলোচনা ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাকলো।তিনি বাংলাদেশি গণমাধ্যমকে ভয়কে জয় করে সঠিক তথ্য প্রকাশ করার কথা বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থেই। গতকাল ৭ সেপ্টেম্বর এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় হিন্দুস্তান টাইমসের আসাম প্রতিনিধি প্রসেনজিত দেব -এর সঙ্গে।তিনি জানালেন, ভারতীয় নাগরিক সমাজ,সুশীল সমাজ,গণমাধ্যম তথা এককথায় শিক্ষিত শ্রেণির দৃষ্টিতে শেখ হাসিনা একজন দূর্ভাগ্যের শিকার হওয়া সফল ও বাংলাদেশের জন্য সঠিক নেতা ছিলেন।তিনি ভারতে বেশ সম্মানিত।ভারতীয় গণমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে ইতিবাচক কলাম ছাপা হচ্ছে হামেশাই শীর্ষ প্রিন্ট মিডিয়ায়। একইসাথে শেখ হাসিনাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় ভারতে রাখার উপর জোর দিয়ে লিখছেন,টক শো তে বলছেন বহু বিশিষ্ট ভারতীয় ব্যক্তি।প্রসেনজিত দেব নিয়মিত বাংলাদেশি মিডিয়ায় চোখ রাখেন জানিয়ে বললেন,দুঃখিত দাদা,বলতেই হচ্ছে আপনাদের মিডিয়ার সাম্প্রতিক ভূমিকা একইসাথে দুঃখ ও লজ্জাজনক! কলকাতার সাংবাদিক ও জনপ্রিয় ইউটিউবার তরুণ ঘোষ জানালেন,ভারতীয়রা বিভিন্ন জাতি শ্রেণিতে বিভক্ত হলেও জাতীয় ইস্যুতে সকলে এক হওয়ার বহু নজির আছে অতীতে।কিন্তু শেখ হাসিনা ইস্যুতে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্যমত্য সৃষ্টি হয়েছে তা অতীতের সকল নজির ছাড়িয়ে গেছে। জাতীয় পর্যায়ের দলগুলোই নয়,আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোও এই বিষয়েএকমত যে, শেখ হাসিনা প্রয়োজনে আজীবন ভারতে থাকবেন।সরকার যেনো তাঁর যথাযথ নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে সদা সচেষ্ট থাকে।
কথা প্রসঙ্গে তরুণ ঘোষ জানালেন,রাহুল গান্ধী তিনদিন আগে শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে হয়তো তাঁকে কিছুটা অসুস্থ দেখেছেন।সাক্ষাৎ শেষে বেড়িয়ে তিনি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ করে শেখ হাসিনাকে ভারতের স্পেশাল হসপিটালে শেখ হাসিনার মেডিক্যাল চেকআপ করার ব্যবস্থা করতে বললে সরকার সাথে সাথেই সবকিছুর ব্যবস্থা করেছে। তিনি টিপ্পনীর ঢংয়ে (পেশাদারী নয় ব্যক্তিগত সম্পর্কের দাবীতেই)বলেন,আপনারা না জানলেও ভারতীয়রা গুণীর কদর করতে জানে!