মানবতা মরে যায়নি এখনো বেঁচে আছে।সুন্দর মন মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ এখনো আছে। সাম্য শান্তির মহৎ উদ্দেশ্য সম্পন্ন মানুষগুলোর কার্যক্রম এখনো থেমে যায়নি। বারবার তা প্রমাণ হয়। বাংলাদেশে সম্প্রতি সৃষ্টি হওয়া ভয়াবহ বন্যায় আবারো প্রমাণ মিলছে। সত্যি কারের মানুষের মানুষ্যত্ব এখনো আছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের বাঁচার আকুতি,হাহাকার,আতংকে নির্ঘুম ভয়াল পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এ সময় সেচ্ছাসেবী ও মানবিক সংগঠন গুলোর ঝাঁপিয়ে পরা ছিল চোখে পড়ার মতো। উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ প্রশাসন,আইন শৃংঙ্কলা বাহিণীর পাশাপাশি এসব সংগঠন ও সেচ্ছাসেবীদের ভূমিকা ছিল যথেষ্ট। যার কারনে মানুষের জান মালের অনেক ক্ষতি রোধ করা গেছে। চিকিৎসা সেবা,রাস্তাঘাট সংস্কারসহ পুনর্বাসন কার্যক্রম ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ভালবাসার উপহার নিয়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাড়িয়েছে শিশুরাও। ইসরাত জাহান মারিয়া,বয়স পাঁচ বছর। নিজের জমানো টাকার ব্যাংকটি দিয়ে দিল বন্যাদুর্গত মানুষদের ভালবাসার উপহার দেওয়ার জন্য। মারিয়া বলে,এ টাকা দিয়ে যারা কষ্টে আছে তারা খাবার খাবে ও ঘর বানাবে। আমি খুশি মনে দিলাম। এভাবে অনেক শিশু তাদের জমানো টাকা বন্যাদুর্গতদের জন্য তুলে দিচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা,বিভিন্ন পাড়া মহল্লার তরুনরা,বিভিন্ন ক্লাব সংগঠনের সদস্যরা বন্যা দুর্গতদের জন্য মসজিদে মসজিদে,হাটবাজারে দোকানে দোকনে,স্টেশনে গাড়ি গাড়ি গিয়ে টাকা তুলে বন্যা দুর্গতদের যসহযোগীতা করছে। ভালবাসার উপহার ত্রাণের প্যাকেট নিয়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাড়িয়েছে তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়ার দল। অথচ তারাও দশ জনের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে।
হাটেবাজারে আমরা তাদের দেখে নানান জনে নানা খারাপ মন্তব্যও করে। এ দুভোর্গে তারাও মানুষজনের পাশে দাড়িয়ে মানবতার পরিচয় দিয়েছে। তারা শিখিয়ে দিল পরিচয় বা সমাজে অবস্থান বড় কথা নয় মানুষের বিপদে মানুষকে দাড়াতে হবে। এটাই মানবতা। নয়নমণি নামে এক হিজড়া বলেন, আমরাও মানুষ। মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাড়াবনা তা কি হয়। তিনি বলেন,আমরাও দশ জনের থেকে টাকা পয়সা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। বন্যা দুর্গতদের কেউ ভিখারি নয় পরিস্থিতির স্বীকার। মানু্ষের এ বিপদে মানবতার খাতিরে আমাদের সাধ্যনুযায়ী সমান্য কিছু করা। তিন বলেন,মানুষের হাতে কিছু দিয়ে ছবি তোলা, বলে বেড়ানো আমার পছন্দনা। সাংকাদিকরা যেহেতু জানতে চাইছেন তাই এ তথ্যগুলো ও ছবিগুলো দেওয়া। কি সুন্দর চিন্তা ধারা। সাধারনতা কমিউনিটি সেন্টারে বিবাহ মেজবান বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে এ দুর্দিনে অনেকের কমিউনিটি সেন্টার,অনেকের বহুতল ভবন,অনেকের গাড়ি,অনেকের বোট নৌকা,সেচ্চাসেবক ও বন্যাদুর্গতরা ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দেন। বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) গণত্রাণ সংগ্রহ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এখানেও দেখা যায় সব শ্রেণী মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া। যার যার সাধ্যনুযায়ী দু হাত ভরে দিচ্ছেন অসহায়দের জন্য। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের ছুটে আসার মাধ্যে দিয়ে সহযোগীতার হিড়িক পরে। এক শিশু ওমরা করতে যাওয়ার জমানে টাকা,এক মহিলার ব্যবহৃত স্বর্নের কানের দুল এমনকি ভিক্ষুকরাও বন্যাদুর্গতদের জন্য টাকা দিতে দেখা যায়। এক কথায় বন্যা দুর্গতদের পাশে দাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন সামাজিক,রাজনৈতিক,ধর্মীয় ও মানবিক সংগঠন এবং সেচ্চাসেবক,ব্যক্তিবর্গ নজির সৃষ্টি করেছেন। বন্যায় পানিবন্দীদের উদ্ধারেরর পর ত্রাণ বিতরণ,চিকিৎসাসেব,রাস্তাঘাট সংস্কার,ঘর নির্মাণসহ পুনর্বাসন কার্যক্রম করে চলছেন এসব মানবতাবাদী সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ। মানবিক সংগঠন ও সেচ্ছাসেবীবৃন্দ যারা সহায়তা করছেন এবং যারা সেবা নিচ্ছেন তারা কেউ ধর্ম,জাত,আক্বিদা,ত্বরিকা,রাজনৈতিক মতাদর্শ দেখছেননা।এটাই সাম্য,ধর্ম ও মানুষ্যত্ব। এটাই প্রাণের বাংলাদেশ।
এ বন্যায় এক মানবিক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। এভাবে আমরা সকলে হাতে হাত রেখে স্বপ্নের দেশটাকে গড়ে তুলব। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ মানবতার দৃষ্টান্ত হোক এটাই কাম্য।