বন্যার পানিতে ডুবে আছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। যে কারণে গত চার দিন ধরে চট্টগ্রামে আসছে না ভোগ্যপণ্যবাহী গাড়ি। এদিকে পণ্য সরবরাহ না থাকায় চট্টগ্রামের বড় বাজার খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীতে দেখা দিয়েছে পণ্যসংকট। আর এ অজুহাতে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, সবজি ও কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ব্যাপকহারে।
পাইকারি সবজি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চার দিন ধরে চট্টগ্রামে কোনো ধরনের সবজিবাহী পণ্য আসছে না। বন্যায় কবলিত হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফেনী ও কুমিল্লায় আটকে আছে চট্টগ্রামমুখী ৩২টি গাড়ি। আর এ কারণে চট্টগ্রামে সবজির বড় আড়ত রিয়াজউদ্দিন বাজারে কোনো ধরনের সবজি নেই। চট্টগ্রামের পটিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলা থেকে শসা, পটল এসেছে ছোট পিকআপে। আর সেগুলো বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে রোববার বিক্রি হয়েছে লাউ আর শসা। প্রতি কেজি লাউ ৪৫ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া আড়তে আর কোনো ধরনের সবজি নেই। তবে কিছু আড়তদারের কাছে আগের কয়েক বস্তা কাঁচা মরিচ ছিল। সেগুলো পাইকারিতে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। অথচ পাইকারিতে পাঁচ দিন আগেও কাঁচা মরিচের দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৮০ টাকায়।
রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক শিবলী বলেন, ‘তিন দিন ধরে কোনো সবজি নেই আমাদের আড়তে। কারণ বন্যার কারণে গাড়ি আসতে পারছে না। আমাদের অনেক গাড়ি আটকে আছে। সবজি পচনশীল। তাই গাড়িতে থাকা অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যাবে। আমরাও লোকসানে পড়ব। তবে আশপাশের উপজেলা থেকে একেবারে সীমিত পরিমাণে সবজি এসেছে। এটা চাহিদার তুলনায় কিছুই না।’
এদিকে স্থবিরতা নেমে এসেছে খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী বাজারে। সেখানেও দেখা দিয়েছে পণ্যসংকট। আর এ অজুহাতে সব ধরনের বস্তাপ্রতি চালে বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘গত তিন দিনে মাত্র একটা গাড়িতে চাল এসেছে। পুরো বাজারে চালের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। সরবরাহ বেড়ে গেলে তখন দাম কমে যাবে। তবে বেচাবিক্রিতেও ভাটা পড়েছে।
একই পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের চাল ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জে চায়না আদা ও রসুনের দাম খুব একটা বাড়েনি। বেশি বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দর। পাকিস্তানি পেঁয়াজের কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। অন্যদিকে এতদিন ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজের দাম এক লাফে গিয়ে ঠেকেছে ১১০ টাকায়। চায়না আদার কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২১০ ও চায়না রসুনের কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ‘আমাদের এখানে কয়েক দিন ধরে পণ্যবাহী গাড়ি আসতে পারছে না। অনেক গাড়ি রাস্তায় আটকে আছে। বাজারে পণ্যসংকট দেখা দিয়েছে। তাই দাম বেড়ে গেছে। তবে বেচাকেনাও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। কারণ আশপাশের উপজেলার খুচরা ব্যবসায়ীরা অনেকে আসতে পারছেন না।’
নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ‘সকালে কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখি কোনো ধরনের সবজি নেই। কাঁচা মরিচের কেজি ৮০০ টাকা। অবস্থা খুব একটা ভালো না। সবদিক দিয়ে আমরা সমস্যায় সময় পার করছি।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বন্যার কারণে গাড়ি চলতে পারছে না। সরবরাহ কমেছে, এটা ঠিক। তাই বলে এই অজুহাতে আগের কেনা পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হবে কেন। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের উচিত, ভোগ্যপণ্যের দাম না বাড়িয়ে মানবিক হওয়া।’
চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের সংকট : লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক