ফটিকছড়িতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে এক শিশু নিহত ও দুইজন নিঁখোজ রয়েছে। উদ্বেগ উৎকন্ঠা শংকার মধ্যে দিয়ে দিন রজনী পার করছেন এলাকাবাসী। বিশষে করে শুক্রবার দিন গত রাতটি ছিল বন্যার ভয়াবহ রূপ। উপজেলা জুড়ে বন্যা দুর্গত মানুষের বাঁচার আকুতি,হাহাকার,আতংকে নির্ঘুম ভয়াল রজনীর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তবে স্থানীয় ও উপজেলার বাহিরের স্বেস্চ্ছসেবী ও মানবিক সংগঠন গুলোর ঝাঁপিয়ে পরা ছিল চোখে পড়ার মতো। এখনো সে ধারা অব্যাহত রয়েছে।
উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ উপজেলা প্রশাসন,আইন শৃংঙ্কলা বাহিণীর পাশাপাশি এসব সংগঠন ও সেচ্ছাসেবীদের ভূমিকা ছিল যথেষ্ট। যার কারনে মানুষের জান মালের অনেক ক্ষতি রোধ করা গেছে বলে সচেতন মহল মন্তব্য প্রকাশ করেন। বুধবার থেকে ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলার বাগানবাজার,দাঁতমারা ইউনিয়নসহ ফটিকছড়ি পৌরসভা,নাজিরহাট পৌরসভা,সুন্দরপুর,পাইন্দং ,হারুয়ালছড়ি,সুয়াবিল,নারায়ণহাট, ভূজপুর বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এছাড়া লেলাং,সমিতিরহাট,রোসাংগিরী,জাপতনগর,বক্তপুর,নানুপুর,ধর্মপুরসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বন্যার সৃষ্টি হয়। অনেক পরিবারকে সেনাবাহিনী,বিজিবি ও সেচ্ছাসেবক কর্মীরা উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসে। এখনো পানি বন্দি হয়ে রয়েছে শত শত পরিবার। শত শত বাড়ি ঘর এখনো পানির নিচে। খাবার,ঔষদ ও পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে এসব এলাকায়। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম আধ্যাত্বিক কেন্দ্র মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফসহ আশে পাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চট্টগ্রাম-খাগগছড়ি সড়ক, গহিরা-হেয়াকো সড়ক, নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়ক, কাটিরহাট-সমিতিরহাট-আজাদীবাজার,সমিতিরহাট-নানুপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানিতে ডুবে আছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এসব সড়কের বিভিন্ন স্থানে।
এছাড়া বিভিন্ন গ্রামীন সড়ক পানিতে ডুবে এবং পানির স্রোতে ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।হালদার উপর নির্মিত নারায়নহাটের কাঠের ব্রীজটি পানির স্রোতে ভেসে গেছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন হাটবাজারে বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বন্ধ রয়েছে ব্যবসা বাণিজ্য। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে নিঁখোজ হওয়ার একদিন পর সামি (১২) নামে এক শিশুর লাশ পাওয়া গেছে। নিহত সামি দাঁতমারা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড সাদিনগরের ভাড়াটিয়া হামিদের পুত্র বলে জানা যায়। জানা যায়,সামি সহ তিন শিশু বন্যার পানিতে নিম্নবর্তী সড়ক দিয়ে পার হওয়ার সময় তলিয়ে গেলে বাকি দুই শিশুকে স্থানীয়রা উদ্ধার করলেও সামি নামে শিশুটি নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তী নিঁখোজ হওয়ার দূরবর্তী স্থানে তার লাশ দেখতে পাই স্থানীয়রা। বাজার পরিচালানা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইমরান বলেন, আমরা স্থানীয় লোকদিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি শিশুটিকে পাওয়া যায়নি,পরদিন তার লাশ পাওয়া যায়। এদিকে ছেলেকে উদ্ধার করতে গিয়ে বাবা ডুবে গিয়ে নিঁখোজের ঘটনা ঘটেছে ভূজপুরের কবিরা পাড়া এলাকায়। ছেলেটি বিদ্যুতের খুঁটি আগলে ধরে প্রাণে বাঁচে। পরে স্থানীয়রা ছেলেটিকে উদ্ধার করে। তবে রজি আহমদ নামের নিখোঁজ ব্যক্তিটি ও নারায়ণহাট ইউনিয়ন এর মির্জারহাটের হালদার কূলে বন্যায় আটকে পড়া মানুষের বাঁচতে গিয়ে পানিতে ভেসে যাওয়া ইমরানকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায় নি। সে ইদিলপুর এলাকার তাজুল ইসলামের পুত্র এবং রজি আহমদ ভূজপুরের ৭ নং ওয়ার্ডের সুলতান আহমদের ছেলে। সুন্দরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল আজম বলেন,আমার ইউনিয়নে বন্যা ভয়াবহ রূপ নেয়। গতকাল থেকে বিভিন্ন সেচ্ছাসেবকদের সাথে নিয়ে আমাদের উদ্ধার অভিযান চলছে। নারায়ন হাট ইউনিয়নের কাউসার সিকদার জানান,নারায়ণহাটের বন্যা পরিস্হিতি খুবই খারাপ।আশে পাশের গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি-ঘরে এখনো পানি। সুয়াবিল এলাকার মোহাম্মদ সেলিম জানান সুয়াবিলে বন্যা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। হালদার পাড় ভেঙ্গে আমাদের গ্রামসহ আশেপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়। রোসাংগরি এলাকার মোহাম্মদ ইউনুচ বলেন,নির্ঘুম রাত কাঠিয়েছি। এলাকার অনেক ঘরে পানি ডুকেছে। ধর্মপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ সরওয়ার বলেন সর্তা নদীর বাঁধ উপচে বিভিন্ন বাড়ি ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। নাজিরহাট এলাকার মোহাম্মদ আলমগীর বলেন,আমাদের এলাকায় হালদা নদীর বাঁধ উপচে পানি আসে। দেখতে দেখতে পানি বেড়ে গিয় শত শত ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করে।
এদিকে পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত একর চাষের জমি,পুকুর,মাছের প্রজেক্ট,পোল্ট্রী ফার্ম। উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন,উপজেলা চাষাবাদদের ব্যপক ক্ষতি হয়েছ। পানি সরে গেলে ক্ষতির পরিমান নিরুপণ সম্ভব হবে। উপজেলায় দুই পৌরসভাসহ প্রায় ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ৫০ মেট্রিক টন চাল ও চার লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নিয়ন্ত্রন কক্ষে দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প অফিসার আবুল হোসেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে বন্যা, জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধ্বস পরিস্থিতির জন্য খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।বন্যা কবলিত এলাকাবাসীর নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক গঠিত হয়েছে ২০ টি ইউনিয়ন মেডিকেল টীম ও ৫ টি সদর মেডিকেল টিম। নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্তৃক টীম গঠন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,ফটিকছড়ি উপজেলার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়েছে।বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় ফটিকছড়ি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। রাতে আসা সেচ্ছাসেবক ও বোট দিয়ে বিপুল সংখ্যক দূর্গতদের উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন,অনেকেই শুকনো খাবার বিতরণ করতে চাচ্ছেন, বিক্ষিপ্তভাবে বিতরণ না করে উপজেলা প্রশাসন এর সহযোগিতা নিতে পারেন। উপজেলা প্রশাসন এর নিকট শুকনো খাবার বা ত্রান পৌছে দিলে আমরা দূর্গত এলাকার মাত্রা অনুসারে শুকনো খাবারগুলি পৌঁছে দিতে পারি। তিনি আরো বলেন,ফটিকছড়ির মানুষের জন্য সারাদেশের অভাবনীয় এই ভালোবাসা অতুলনীয়।