গতকাল ১ জন সহ বিগত ছয় মাসে তিন জন সাপে কাঁটা রোগীর জীবন বাঁচলো শিমুল চৌধুরীর দেওয়া আ্যান্টিভেনমে।সন্দ্বীপের জন্মলগ্ন থেকে শতশত সাপে কাঁটা রোগীর জীবনহানী ঘটতো বিনা চিকিৎসায় বা ওঝা বৈদ্যর কাছে অবৈজ্ঞানিক ভূয়া চিকিৎসা সেবা নিয়ে। সন্দ্বীপের কোন হসপিটালে আ্যান্টিভেনম ছিলোনা বা থাকলেও তা সেম্পল হিসাবে থাকতো, যা কারো শরীরে প্রয়োগ করা হতোনা বলে মেয়াদ উত্তীর্ন হয়ে যেতো ।তাই আান্টিভেনম দেওয়ার জন্য উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম নিতে নিতে পথেই মৃত্যু অনিবার্য ছিলো সাপে কাটা রোগীর।সন্দ্বীপে আইসিইউ না থাকা এবং বিষযের তীব্রতা নির্নয়ের যন্ত্রের অভাবের অজুহাতে কোন সাপে কাঁটা রুগীকে চিকিৎসা করা হতোনা।
বিগত কয়েক বছর ধরে সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন নামে একটি সংগঠন সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ সোচ্চার হলে বিষয়টি দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মানবিক ও সাদা মনের মানুষ মনিরুজ্জামান চৌধুরী প্রকাশ শিমুল চৌধুরীর। তাই গত অক্টোবর মাসে তিনি নিজ খরচে সাপে কাঁটা রোগীর চিকিৎসার জন্য সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা গাছুয়া হসপিটালে অনেক গুলো আ্যান্টিভেনম, একটি ফ্রিজ ও অক্সিজেন সিলিন্ডার অনুদান হিসাবে প্রদান সহ অনেক চিকিৎসা সামগ্রী উপহার দেন। এছাড়াও সাপে কাটা রোগীকে নগদ ৫ হাজার টাকা করে প্রদানেরও ঘোষনা দেন। এর পরই সন্দ্বীপের ইতিহাসে নজীর স্থাপন করে ইতিহাসের অংশ হয়ে যান তিনি।কারন গত ছয়মাসে ৩ জন সাপে কাঁটা রোগীর জীবন বাঁচলো তার এই মহতী উদ্যোগে। এজন্য,সন্দ্বীপ বাসী আজীবন এই মহান মানুষটির কাছে ঋনী হয়ে গেলো, সাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও। কারন এতো স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বা সিভিল সার্জন সহ সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ও শত শত বছর ধরে এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নিতে পারেনি। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন এই শিমুল চৌধুরী। সর্বশেষ গত ১৯ এপ্রিল মুছাপুরের ৬ নং ওয়ার্ডের আকলিমা বেগম সুস্থ হয়ে উঠেছে তার দেওয়া এন্টিভেনমে।এর আগে বেঁচে গেলো সন্তোষপুর ৩ নং ওয়ার্ডের ৩ বছরের বাচ্চা সাইমা ও কালাপানিয়া ইউনিয়নের একজন।না হয় তারা নিশ্চিত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তো তারা।
তিনি এন্টিভেনম দেওয়ার পর চট্টগ্রামে আইসিউতে রোগীকে নেওয়ার জন্য দিচ্ছেন প্রতিরোগীকে ৫ হাজার টাকা করে।যদিও সকল রোগীকে আইসিইউ সেবা নিতে হয়না। মানবতাবাদী এই মানুষটি, সন্দ্বীপের দুঃর্দশা গ্রস্থ,অসহায,প্রতিবন্ধী মানুষকে সহযোগিতা সহ শিক্ষা, সংস্কৃতি ক্রীড়া অঙ্গনে অনেক অবদার রেখে শ্রেষ্ঠ মানবিক মানুষ হিসাবে প্রায় ২০টির অধিক সামাজিক সংগঠন থেকে সন্মাননা প্রাপ্ত হয়েছেন। এ ব্যাপারে শিমুল চৌধুরী বলেন আমি অত্যান্ত গর্বিত ও আনন্দিত যে আমার এই সামান্য সহযোগিতা এখন আর সাপে কাটা রোগী মারা যাচ্ছেনা। যার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্রেক্নের যারা আমাকে সহযোগিতা করছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। গাছুয়া হসপিটালের আবাসিক নির্বাহী কর্মকর্তা ডাঃ আরমান হোসেন তার দেওয়া স্বাক্ষাৎকারে বলেন সাপে কাটা রোগী নিয়ে ওঝা, বৈদ্যের কাছে যাওয়া মোটেই উচিত নয়। সাপের বিষক্রিয়া হউক বা না হউক আপনারা হসপিটালে নিয়ে আসবেন,এখন থেকে নিশ্চিত চিকিৎসা পাবেন।যেটার জন্য আমরাও শিমুল চৌধুরীর নিকট কৃতজ্ঞ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে অ্যান্টিভেনম বা “অ্যান্টিভেনিন” হলো এক ধরনের অ্যান্টিবডি পণ্য, যা একটি নির্দিষ্ট বিষের টক্সিন নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম । সাপের কামড় বা দংশনের পরে, দ্রুত অ্যান্টিভেনাম ইনজেকশন দিলে, অ্যান্টিভেনমের অ্যান্টিবডিগুলি বিষকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় । যার ফলে আক্রান্ত ব্যাক্তির জীবন বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেঁচে যায় ।