চট্টগ্রামের রাউজানে ব্যাপক হারে গরু চুরি ঘটনা ঘটেছে। বিগত ৫ দিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৫ টি চুরির ঘটনায় প্রতিটি ৩টি করে মোট ১৫ টি গরু চুরি হয়েছে। এই চুরির ঘটনাগুলো ঘটেছে উপজেলার কদলপুর,বিনাজুরি, রাউজান সদর ও বাগোয়ান ইউনিয়নে। প্রতিটি চুরির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন রাউজান থানা ডিউটি অফিসাররা।
এছাড়াও বেশ কয়েটি স্থানে গরু চুরির খবর পাওয়া গেছে। এদিকে গরু চুরি বেড়ে যাওয়ায় খামারি, গৃহস্থ ও কৃষকেরা বেশ উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। অনেকেই জীবিকার একমাত্র সম্বল চুরি হয়ে যাওয়া পথে বসেছেন। চুরি ঠেকাতে অনেক এলাকায় রাত জেগে খামার ও গোয়ালঘর পাহারা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যেও চোরের দল একেক এলাকায় হানা দিচ্ছে। জানা যায়, উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝিপাড়া গ্রামের আইয়ুব মাস্টারের বাড়ির মৃত বজল আহমেদ ছেলে প্রবাস ফেরত মোরশেদ আহমেদ মামুন। প্রবাসের উপর্জন দিয়ে আগামী কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাড়ির পাশে গোয়ালঘরে ৭ টি গরু পালন করেন। রাত জেগে পাহারাও দেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) দিবাগত-রাতে গরু পাহারা দিয়ে ঘরে ঘুমাতে যায়। রাত ৩ টার দিকে তার চাচা গরু পাহারার উদ্দেশ্য ঘর হতে বের হওয়ার সময় দেখে বাইর থেকে দরজা আটকানো। তখন তিনি চিৎকার দিলে মামুনও দেখে তার ঘরের দরজা বাইর হতে আটকানো রয়েছে। পরে তার এক চাচাত ভাই এসে দরজা খুলে দেয়। তখন তিনি দেখেন তার গোয়ালঘরের বাচাই করা ৩টি বড় গরু নেই। পরে দেখেন একটি ট্রাক তার গরু নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে। তখন মোটর সাইকেল নিয়ে তিনি ট্রাকটিকে তাড়া করলেও নাগল পায় নি। পরে পাহাড়তলী চৌমুহনী ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়। ট্রাকটি গরু তিনটি নিয়ে কদলপুরের দিকে পালাচ্ছে।
তার আগেরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) দিবাগত রাতে ৩ টার দিকে কদলপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শমসেরপাড়া গ্রামের মৌলানা জহুরুল হকের বাড়ির মৃত আব্দুস ছালামের ছেলে গরীব কৃষক মো. আব্দুর সবুরের ঘরে তালা দিয়ে গোয়ালঘরের তালা ভেঙে ৩টি ষাঁড় চুরি করে নিয়ে যায়। ২২ ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার) দিবাগত রাতে রাউজান সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল আজিজ মুন্সির নতুন বাড়ির মৃত জালাল আহমেদের ছেলে মো. রিপনের গোয়ালঘর হতে ৩ টি গরু চুরি হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক খোকন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গত ২১ ফেব্রুয়ারী (বুধবার) রাতে ফের কদলপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওর্য়াডের খলিফাপাড়া গ্রামে হাজী আবদুল কুদ্দুসের গোয়ালঘরের তালা ভেঙে ৩টি গরু চুরি করে চোরের দল। একইদিন রাতে বিনাজুরী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নেপাল মহাজনের গোয়ালঘর ২টি গাভী ও একটি ষাঁড় চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। ইউপি সদস্য নেপাল মহাজন বলেন, পাশাপাশি ৫টি গোয়ালঘর রয়েছে। আমার এক প্রতিবেশীর গাভী বাচুর দিবে তাই ২১ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে ৪টার দিকে উঠে দেখেন আমার গোয়ালঘর খোলা। তিনি ডাক দিলে গিয়ে দেখি গোয়ালে ১টি গরুও নেই। এই ঘটনায় আমি থানা একটি অভিযোগ করেছি। ব্যাপক হারে গরু চুরির ঘটনায় আতঙ্কে আছেন ক্ষুদ্র কৃষক ও খামারিরা। পাহাড়তলী ইউনিয়নের খামারি জি.এম. মোস্তফা বলেন, আমাদের একেকটা গরুর দাম দুই হতে আড়াই লাখ টাকা। যদি চুরি হয় সব শেষ হয়ে যাবে। চুরি ঠেকাতে খামারে দুইজন পাহারাদার রেখেছি। কিন্তু বর্তমানে চোরের দল ট্রাক-পিকআপসহ দেশীয় ভারী অস্ত্র নিয়ে অনেকটা ডাকাতের মত হানা দেয়। এমতাবস্থায় গরু চুরি ঠেকাতে রাতের বেলায় গরু চলাচলের ক্ষেত্রে গরু আটক করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে সমন্বয় করে ছাড়তে হবে। রাত ১০ টার পর কোন ট্রাক, ডাম্প ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। এতে করে চুরি ঠেকানো সম্ভব হবে।
কদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, গরু চুরি রোধে গ্রাম পুলিশ ও গ্রামবাসীদের সমন্বয়ে পাহারা জোরদার করেছি। রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা গরু চুরিসহ সকলপ্রকার চুরি রোধে নিয়মিত টহল ছাড়াও ৪টি স্পেশাল টিম কাজ করছে। ইতোমধ্যে আমরা অভিযান চালিয়ে রাতের আঁধারে চলাচল করা কয়েকটি ড্রাম ট্রাক আটক করেছি। তবে, এখনও পর্যন্ত চুরিকৃত কোন উদ্ধার না হওয়ায় গৃহস্থদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। গৃহস্থ, খামারি, কৃষক সকলেই এই গরু চুরি ঠেকাতে থানা পুলিশের যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করেন।