মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া দেশটির সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য এবং শুল্ক কর্মকর্তাসহ ৩৩০ জনকে আগামীকাল ১৫ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার একটি জাহাজে করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।এ তথ্য জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী বুধবার বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন,বিজিবির তত্ত্বাবধানে কক্সবাজার জেলার ইনানীর নৌ জেটিঘাট দিয়ে বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যসহ মিয়ানমারের নাগরিকদের সকাল ৮টায় দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর আগে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন,শিগগিরই মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ফেরত পাঠানো হবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘর্ষ:- গত ২ ফেব্রুয়ারী রাত থেকে বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ চলছে।০৪ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাত ৩টা থেকে দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। ০৫ ফেব্রুয়ারী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী,অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। সংঘাতকালে মিয়ানমার সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য,শুল্ক কর্মকর্তাসহ ৩৩০ জন বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন।তারা বর্তমানে বিজিবির হেফাজতে আছে। উল্লেখ্য,জাতিগত সংখ্যালঘু রাখাইন আন্দোলনের প্রশিক্ষিত ও সুসজ্জিত সামরিক শাখা আরাকান আর্মি। তারা মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন চায়। আরাকান আর্মি সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীর একটি জোটের সদস্য।তারা সম্প্রতি মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি কৌশলগত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে।মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সঙ্গে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে একত্রে কাজ করে আরাকান আর্মি ।
এই জোট, ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর চীন সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে একটি সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে এই অভিযান মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জোটের বরাত দিয়ে অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) জানিয়েছে,তারা ২৫০টির বেশি সামরিক চৌকি, পাঁচটি সরকারি সীমান্ত ক্রসিং এবং চীন সীমান্তের কাছে একটি বড় শহরসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে নিয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অভিযান শুরু করে। যা ছিল আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ। তখন সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের ফলে, সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অন্তত ৭ লাখ ৪০ হাজার সদস্য সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। রাখাইনের পুরোনো নাম আরাকান।
(এএফপি ও ভয়েস অফ আমেরিকার গত কয়েকদিনের মিয়ানমার সংক্রান্ত প্রকাশিত খবর থেকে নেওয়া তথ্য)