গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত। রেজি নং – ১৬৯

বিক্রিত “সুশীল”দের বিকৃতি,আইসিইউতে মানবতা, ও আমাদের “মুখোশধারী”দের কথা

আমাদের দেশে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে,অমুক করলে লীলাখেলা আর আমরা করলেই যতো দোষ।এই লেখনীতে পাঠক আপনাদের কিছু ফিলিস্তিন শিশুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ওঁদের অভিজ্ঞতা,বর্তমান অবস্থা ও গাজার চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করবো।তারপর আপনার বিবেকের কথা শুনতে চাইবো।
“মানবাধিকার” শব্দটি নিয়ে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি উচ্চকণ্ঠ পশ্চিমাদের লীলাখেলার সঙ্গে জ্বি হুজুর বলে সবসময় পদলেহনকারী আমাদের দেশীয় বিশিষ্টজনের অবস্থান,পৃথিবীতে “মুখোশের” ব্যবহার কোথায় কেমন আর বৈষম্যের শিকার স্বয়ং “মানবাধিকার” নিয়ে সময়ের কিছু কথা,যা না বললেই নয়।চলুন শুরু করি গাজার পাঁচজন শিশুর বাস্তবতার গল্প দিয়ে।
(এক)
শুরু করছি গাজার সুজাইয়ার এক শরনার্থী শিবিরে বাসকরা আট বছরের আব্দুল্লাহ জাবরকে দিয়ে।
“আমার প্রিয় ফুটবল খেলোয়াড় হলেন সুজাইয়া ফুটবল ক্লাবের আলা আত্তিয়া এবং ওমর খামিস।তারা অনেক গোল করে।আমরা যখন আমাদের বাড়িতে ফিরে যাব তখন আমি খেলব।কিন্তু আমার কাছে ফুটবল নেই।  আমি এখনও বড় হয়ে ফুটবল খেলোয়াড় হতে চাই।  আমি আমার স্কুল মিস করি”।জানিনা আমাদের স্কুলটি টিকে আছে কিনা?আমার পরিবারের দুইজন বাদে বাকি সবাই বোমায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ীর নীচে চাপা পড়ে মারা গেছে।আমি মরতে চাইনা।শরনার্থী শিবির থেকে বলছিলো আট বছরের আব্দুল্লাহ জাবর।
(দুই)
সুজাইয়ার আরেক আট বছরের শিশু সাঈদ আল আরির ইসরায়েলী হামলার সময়কার স্মৃতিচারন করে বলে,”মাগাজী শরণার্থী শিবিরে বাড়ির বাইরে চাচাতো ভাইয়ের সাথে রাস্তায় খেলছিলাম।ইসরায়েলি বিমান আমাদের উল্টোদিকের ভবনে বোমা বর্ষণ করেছে।  আমার মাথার খুলি ভেঙে গেছে।আমার মাথার চারপাশে সেলাই করা হয়েছে।একটি পা ভাঙা এবং একটি বড় ক্ষত যা ডাক্তাররা বলেছে যে আমার হাড়টি থেকে মাংস উঠে গিয়ে উন্মুক্ত হয়ে গেছে!
আমার মা আমাদের জন্য রাতের খাবার তৈরী করছিলেন যখন আমাদের পাশের বাড়ির প্রতিবেশীর বাড়ি লক্ষ্যবস্তু হয়।আমাদের বাড়ির দেয়াল আমাদের উপর এসে পড়ে।আমার পা এবং আমার হাত দুটি জায়গায় ভেঙে যায়।আমাদের বাড়ি নিশ্চিন্হ হয়ে গেছে।আমি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে অনেক পছন্দ করি,কিন্তু আমি একজন ডাক্তার হতে চাই।যাতে আমি বাচ্চাদের ভালো হতে সাহায্য করতে পারি।আমি আশা করি আমার মেডিকেল রেফারেল আমাকে মিশরে নয়তো সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠাবে।কারণ আমি মিশরে গাড়িতে ভ্রমণ করতে চাই না।আমি একটি বিমানে উঠতে চাই এবং যখন আমি আকাশে থাকবো তখন জানালা দিয়ে তাকাতে চাই।আমি সুস্থ হয়ে গাজায় ফিরে আসতে চাই।আর যুদ্ধ চাইনা,আমি বাঁচতে চাই”
(তিন)
“আমার প্রিয় খাবার হলো চিকেন উইংস।যুদ্ধ শেষ হবার পর আমি আমার পরিবারের সাথে একটি রেষ্টুরেন্টে যেতে চাই।”
এটা বলেই হাসপাতালের বেডে শুয়ে স্মৃতিচারন শুরু করে বারো বছর বয়সী মেয়ে মায়ার আবু সাদ।মায়ার বলে,”আমরা নিরাপদে থাকার জন্য আমাদের শাতীতের বাড়ী ছেড়ে নুসিরাতে দাদার বাড়ীতে চলে যাই।তখন আমি দোলনায় খেলা করছিলাম।আমার দাদা বললেন,আমাদের উঠানে গিয়ে রুটি সেঁকানো উচিত।হুট করেই ঠিক তখন একটি ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের বাড়িতে আঘাত হানে।এবং ভিতরে যাঁরা ছিলো যেমন আমার খালা তাগ্রিদ,চাচা সামেহ, চাচা মোহাম্মদ এবং আমার চাচাতো ভাই রিতালের সহ মোট ১১ জন নিহত হয়।আমার বোন সাবাহকেও দেদিন হত্যা করা হয়েছে।সে এত ছোট ছিল,মাত্র দুই বছর বয়স ছিলো সাবাহর।
আমি হয়তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। যখন আমি জেগে উঠলাম,আমি নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম।ডাক্তাররা আমার লম্বা চুল কেটে ফেললেন এবং আমি খুব বিরক্ত ছিলাম।তারা ভেবেছিল আমি মারা যাবো।কিন্তু আমার হৃদয় স্পন্দিত হতে থাকল।  তাঁরা আমার উপর চার ঘন্টা ধরে অপারেশন করে বলেছিল যে আমার অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছে প্রচুর পরিমানে, মাথার খুলি একদিকে ভেঙ্গে গেছে, পেলভিস এবং দুটি পা ও ভেঙ্গে গেছে।নিষ্পাপ দর্শন মেয়ে মায়ার জানায়,আমার হাতে এবং পেটে সেলাই আছে এবং আমার পায়ে টাইটানিয়াম অংশ রয়েছে।আমি একজন শিক্ষক হতে চাই।আমার প্রিয় বিষয় ইংরেজি।”
(চার)
সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলো উত্তর গাজার সাত বছর বয়সী মেয়ে হায়াত মিকবিল।ছোট্ট মিকবিল বলতে শুরু করে,”আমরা নুসিরাতে আমার দাদার বাড়িতে ছিলাম। ইসরায়েলিরা আমাদের বোমা মেরে মুসাকা খাচ্ছিল।ঐ শব্দটা ভীতিকর ছিল।আমার মা, দাদা, চাচা মোস্তফা, সামেহ ও তাইসির,তার স্ত্রী এবং আমার চাচাতো ভাই হামুদ ও উদয় সবাইকে হত্যা করা হয়। মা বাইরে ছিলেন।আমার পায়ে আঘাত লেগেছে।দুজনের উপরেই বাড়ী ভেঙে পড়েছিলো।আমার বাবা এবং খালা আমার যত্ন নিচ্ছেন।আমি জানালার নিচে বসে ক্ষেপণাস্ত্রটি পড়ে থাকতে দেখলাম।আমরা ভেবেছিলাম এটি আমাদের বাড়ির পিছনের দিকে যাচ্ছে।আমার মনে আছে, একজন লোক আমাকে পাথরের নিচ থেকে উদ্ধার করেছিল।আমার পা আটকে গেল।ছোট্ট হায়াত মিকবিল বলে উঠলো,বড় হয়ে আমি একজন ডেন্টিস্ট হতে চাই।যাতে আমি আমার বাবার দাঁত ঠিক করতে পারি।আমি আমার পুতুলের সাথে আঁকতে এবং খেলতে পছন্দ করি।আমি যুদ্ধ ঘৃনা করি”।
(পাঁচ)
বরেজ শরনার্থী শিবিরে থাকা দশ বছরের ইসা ইয়াহিয়াজানায়,”আমি আমার ক্লাসে প্রথম ছিলাম।তিন বছর ধরে আমি প্রথম স্থানে ছিলাম।নুসিরাতে আমাদের প্রতিবেশীর বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। সেই হামলায় আমাদের বাড়ির দেয়াল ভেঙে পড়েছিল।  আমরা ধ্বংসস্তূপের নিচে ছিলাম।আমার দাদা আমাকে টেনে বের করেছিলেন।আমার পেটে শ্রাপনেল ছিল এবং আমি ১০ দিন কিছু খেতে পারিনি।আমার পায়ে ৫০টির বেশি সেলাই আছে।আমার দাদী ও চাচাতো ভাইকে হত্যা করা হয়েছে।আমি লেখাপড়া করতে অনেক ভালোবাসি।আমি একজন ডাক্তার হতে চাই।আর  আমার প্রিয় বিষয় হলো গণিতiআমার রোজ মনেহয় কাল ঘুম থেকে উঠে দেখবো,যুদ্ধ থেমে গেছে,সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে গেছে”।
(খেয়াল করে দেখুন,এমন বিভীষিকার মাঝে বসবাস করেও গাজা বা ফিলিস্তিন শিশুরা স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দেয়নি।ওঁরা সবাই স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরেই বুঝিবা ঐ নরক যন্ত্রণাকে সহ্য করে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করছে)
কি বলছে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা:-
ইতিমধ্যে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও বর্বরতার শততম দিন পেড়িয়ে গেছে গত জানুয়ারী।কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা আরও কয়েকটি সংস্থার সংগৃহিত তথ্য নিয়ে একশো দিনের একটি চিত্র তুলে ধরেছে গত জানুয়ারী।ঐ প্রতিবেদন বলছে,ইসরায়েল কেবল নিরপরাধ মানুষকেই নির্বিচারে হত্যা করছেনা,করছে আরও অনেক কিছু।যা রীতিমতো লজ্জায় ফেলে দিয়েছে পুরো মানব সভ্যতাকে।আমরা “সভ্য” জাতি এটা কেবলই একটা গায়ের জোরে প্রতিষ্ঠা করে দেওয়া বাক্য মাত্র!
শিশুদের নিয়ে জাতিসংঘ বলেছে,গাজা হলো এই পৃথিবীতে শিশুদের জন্য সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা।কারণ ইসরাইলের সামরিক বাহিনী এ অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণ করে হাজার হাজার শিশুকে হতাহত করছে।রোগীর চাপে পিষ্ট হাসপাতালগুলোর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আরও হাজার হাজার শিশু সংক্রামক রোগে ভুগছে এবং খাবার,পানি ও ওষুধের অভাবে দুর্দশায় আছে।
ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এলডার জেনেভায় গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেন,আমি এ বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ।যারা ক্ষমতায় আছেন,তারা লাখ লাখ শিশুর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দুঃস্বপ্নের সঙ্গে তুলনীয় মানবিক সংকটকে উপেক্ষা করছেন।
সম্প্রতি গাজায় ২ সপ্তাহের সফর শেষে ফিরে এসে এলডার জানান,আমি ক্ষুব্ধ কারণ ইতোমধ্যে এক বা একাধিক অঙ্গ হারিয়েছে,এমন শিশুরাও চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাসের হাসপাতালে বোমা হামলায় নিহত হচ্ছে। আমি ক্ষুব্ধ কারণ কোথাও না কোথাও লুকিয়ে থাকার প্রচেষ্টায় আরও অনেক শিশু প্রতিদিন তাদের অঙ্গ হারাচ্ছে।আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ,কারণ অসংখ্য শিশু এমন কী তাদের নিহত মা,বাবা ও পরিবারের সদস্যদের জন্য শোক প্রকাশ করার সুযোগও পাচ্ছে না,ব্যথাতুর কন্ঠে  বলেন তিনি।
এলডার বলেছেন,দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে অবস্থিত আল নাসের হাসপাতাল গত ৪৮ ঘণ্টায় ২ বার কামান হামলার শিকার হয়।তিনি আরও উল্লেখ করেন, হাসপাতালগুলোতে অসংখ্য গুরুতর আহত শিশু ও নিরাপদ আশ্রয় প্রত্যাশী হাজার হাজার নারী-শিশু অবস্থান করছে।
তিনি বলেন,তাহলে শিশুরা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা কোথায় যাবে?প্রশ্ন করেন তিনি।তারা হাসপাতালে নিরাপদ নয়।তারা আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদ নয়।এবং অবশ্যই,তারা তথাকথিত নিরাপদ জোনেও নিরাপদ নয়।এরচেয়ে বেদনাদায়ক আর কি হতে পারে?
এলডার বলেন,পৃথিবীর কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে গাজার শিশুদের বাস্তবতা দেখে তা সহ্য করা সম্ভব না।
ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের গাজার শিশুদের নিয়ে করা একটি প্রতিবেদন অনুসারে গত ৭অক্টোবর থেকে পনেরো হাজারের  বেশি শিশু নিহত হয়েছে বা ধ্বংসস্তূপের নিচে হারিয়ে গেছে এবং মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৪ হাজার শিশু বাবা- মায়ের একজনকে বা উভয়কে হারিয়েছে এবং প্রায় ১৮ হাজার শিশু আহত হয়েছে যাঁদের বেশকিছু সংখ্যায় গুরুতর আহত অবস্থায় রয়েছে।
গাজার ২৩ মিলিয়ন মানুষের প্রায় অর্ধেক তথা ৪৭% শতাংশ  ১৮ বছরের কম বয়সী।তাঁদের বেশিরভাগই তাদের স্বল্প জীবনে অন্তত চারটি ইসরায়েলি আক্রমণের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছে।
উপকূলীয় ছিটমহলে ইসরায়েল কর্তৃক আরোপিত অবরোধের কারণে, শিশুরাও অনাহারের সম্ভাবনার সম্মুখীন হচ্ছে,বিশেষ করে উত্তর গাজায়।যেখানে তারা দিনে গড়ে এক বেলা খাবার খায়।অধিকন্তু বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব,জনাকীর্ণ অবস্থা এবং জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলিতে স্যানিটেশনের অভাব।যেখানে অনেক বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় খুঁজছে,সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবের দিকে পরিচালিত করেছে,যাঁর জন্য শিশুরা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের হিসাব মতে, গত শতাধিক দিনে দিনে ১৪০০০ জনের বেশি শিশু সহ ইসরায়েলি হামলায় ২৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।এর অর্থ হল প্রতি ১০ মিনিটে একজন ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে!বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গাজার পরিস্থিতিকে”মানবতার সবচেয়ে অন্ধকার সময়” হিসাবে অভিহিত করেছে।
প্রায় চার হাজারের বেশী লোক নিখোঁজ হয়ে আছে এবং তাঁদের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নীচে মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।এবং ৫০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।যাঁদের শতকরা আশি শতাংশঃ মহিলা এবং শিশু।
জাতিসংঘের মহাসচিব ৩১শে অক্টোবর গাজাকে “শিশুদের কবরস্থান” আর অন্য সবার জন্য একটি “জীবন্ত নরক” হিসেবে বর্ননা করলেও ইসরায়েলি  আক্রমণাত্মক হামলা এবং স্থল আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে।
শততম দিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন যা বলছে:-
নিহতের সংখ্যা:-
ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন ২৪ হাজার ৫৫ জন।ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গাজায়ই নিহত হয়েছেন ২৩ হাজার ৭০৮ জন।বাকি ৩৪৭ জন নিহত হয়েছেন অধিকৃত পশ্চিম তীরে।
আহতের সংখ্যা:
হাজার ৪২০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।আহতদের মধ্যে ৬৪ হাজার পাঁচজন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।আহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গাজায় আহত হয়েছেন ৬০ হাজার পাঁচজন।বাকি চার হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন পশ্চিম তীরে।
বাস্তুচ্যুতি:-
গাজায় বসবাসরত ২৩ লাখের মধ্যে ১৮ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যত হয়েছেন।উত্তর গাজা ও দক্ষিণ গাজার সীমান্ত এলাকা থেকেই প্রায় দুই লাখ ৪৯ হাজার ২৬৩ জন ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করেছে ইসরায়েল। শুধু তাই না পশ্চিম তীরে এক হাজার ২০৮ জনকে বাস্তুচ্যুত করেছে দখলদাররা
স্থাপনা ও ঐতিহ্য ধ্বংস:-
বিমান হামলা চালিয়ে ৪৫ থেকে ৫৬ শতাংশ আবাসিক ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনীরা। আবাসিক ভবন ধ্বংস করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। হাসপাতালগুলোও ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি হানাদার বাহিনী।
গাজার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ, গির্জা ও জাদুঘর ধ্বংস করেছে ইসরায়েল।এসব কিছু ধ্বংস করে চোখের সামনে থেকে মানবতার স্মৃতি মুছে ফেলছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী।গাজার ১৪২টি মসজিদ ধ্বংস করেছে তাঁরা।এদের মধ্যে রয়েছে বৃহত্তম ও প্রাচীনতম ওমরি মসজিদ।গাজায় অবস্থিত তিনটি চার্চ ধ্বংস করেছে ইসরায়েলিরা।দুই হাজার বছরের পুরোনো সেন্ট পরফিরাস চার্চ ধ্বংস করেছে তারা।পঞ্চম শতাব্দীতে তৈরি এ চার্চে আশ্রয় নিয়েছিলেন শত শত খ্রিষ্টান ফিলিস্তিনি নাগরিক।শুধু তাই না ইসরায়েলি আগ্রাসনে ধ্বংস হয়ে গেছে বিশ্বের তৃতীয় প্রাচীন রোমান কবরস্থান ও জাদুঘর কাসার আল বাশা।
লজ্জিত মানব সভ্যতা:-
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ভয়াবহতা দেখে ফরাসি ইতিহাসবিদ জাঁ-পিয়ের ফিলিউয়ের বলেন,গাজায় শতাব্দীর পর শতাব্দী যুদ্ধ হয়েছে।কিন্তু চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের মতো নয়।এবারের হামলায় গাজার ভিটে-মাটি ও হাজার বছরের ইতিহাস ধূলিসাৎ করে দিয়েছে ইসরায়েল।গাজার ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে ধ্বংসাক্তক ও রক্তক্ষয়ী ইসরায়েলি আগ্রাসন।যা দেখে আজ লজ্জিত পুরো মানব সভ্যতা।
এইসকল বাংলাদেশীদের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন প্রশ্নে ভূমিকা:
আমি মূলতঃ আমাদের দেশের কিছু তথাকথিত সুশীল,রাজনৈতিক দল,নেতৃবৃন্দের মুখোশ খুলে তাঁদের আসল রুপটি দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্যই কলম ধরেছি।।গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে পুরো পৃথিবীর সকল  শান্তিকামী মানুষ ওঁদের নারকীয় বর্বরতার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন।দিন যতোই গড়িয়েছে,প্রতিবাদ মিছিল দীর্ঘ হয়েছে।এক্ষেত্রে আশ্চর্য ব্যতিক্রম ছিলেন,আজও আছেন বাংলাদেশের সুশীল লেবাসধারী কিছু বিশিষ্টজন!আমি বরাবরই এঁদের সম্পর্কে লিখি।
এই লোকগুলো দেশের প্রয়োজনের সময় নিরবতা পালন করেন,ভোটের মৌসুম এলেই সরব হয়ে দেশের পাঁচ নম্বর সমস্যাকে এক নম্বর বানিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টার মাধ্যমে গায়েবী প্রাপ্তীকে হালাল করার মিশনে মেতে ওঠেন।যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁদের ব্যর্থতাই দেখে আসছি আমরা বিগত এক দশক ধরে।
কথায় কথায় দেশে মানবাধিকার গেলো বলে চেঁচানো সুশীল নামধারীরা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লংঘিত হওয়া গাজা নিয়ে আজো একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি।কেনো করেননি?উত্তরটা সহজ।
আমেরিকার বিরাগভাজন হবার ভয়ে।ভিসা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে যাওয়ার ভয়ে!একটি দেশের সুশীল সমাজ যদি”স্বার্থবন্দী” হয়ে পড়েন,তাহলে ঐ দেশের সবচেয়ে বড় দূর্ভাগ্যই হলো ঐসকল “সুশীলরা”।
একই ভাবে দেশের বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক দল ও তাঁদের মিত্রদের কেউ একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি আমেরিকা গোস্বা হবে সেই ভয়ে।তাঁদের দুই তিনজন তো মোসাদের পদলেহনকারী ও সুবিধাভোগী হিসেবে ইতিমধ্যে প্রমানীত।সবচাইতে আশ্চর্যের ও বেদনাদায়ক হলো,আমেরিকা ও ইসরায়েলের এই সকল ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে গিয়ে শামিল হয়েছেন দেশের একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল! যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য আজো দেশের মানুষের কাছে।
গাজায় ইসরায়েলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে যে দলটিকে মানুষ অগ্রভাগে আশা করেছিলো,নিয়তির কি নির্মম পরিহাস,আজ হীণ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লোভে তাঁরাও ইহুদিদের মিত্র!যদিও তাঁদের এই মিত্রতা দলটির রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রতীয়মান হয়ে গেছে কর্মি সমর্থকদের নিকট ইতিমধ্যে।কেননা তাঁদের সকল প্রচেষ্টা আজ কার্যতঃ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
আমাদের দেশের সিংহভাগ মিডিয়াও এই বিষটিকে বেশ চতুরতার সাথে এড়িয়ে গেছে রহস্যজনক কারণে।কিন্তু সবাইতো আর এক হয়না।আমি সকল সুশীলকে অভিযুক্ত করছিনা,সকল মিডিয়াকেও না।
সময়ের বাস্তবতা হলো পৃথিবী জুড়ে ” মুখোশের” ব্যবহার বেড়ে গেছে বহুগুণে।কেউ বাদ নেই আজ সেই তালিকায়।রাজনীতিবিদ,সুশীল,পেশাজীবি,মিডিয়া কেউ বাদ নেই।আপনার আমার বোঝার উপায় নেই কে মুখোশধারী আর কে আসল রুপে?
নিয়তির নির্মম পরিহাস হলো,আজ বৈষম্যের শিকার স্বয়ং “মানবাধিকার”।তাঁদের ও আমাদের জন্য এখন মানবাধিকার মানে আলাদা।আমরা মোড়লদের নিকট সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই অসহায়।তাই আসুন আমরা
মহান আল্লাহ তায়ালা/গড/সৃষ্টিকর্তায় প্রার্থনা করি, গাজার নারী শিশু ও সাধারণ মানুষকে হায়েনাদের কবল থেকে তিনি মুক্ত করুন।ব্যথিত চিত্তে বা বিক্ষুব্ধ হৃদয়ে এছাড়া আর কিইবা করতে পারি আমরা?
লেখক:- সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

এই বিভাগের সব খবর

বিশ্বমানের পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলাই আমার প্রধান লক্ষ্য : সিডিএ’র চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ বলেছেন, চট্টগ্রামকে বাসোপযোগী এবং বিশ্বমানের পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলাই আমার প্রধান লক্ষ্য। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি...

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও বৈশ্বিক অভিবাসন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আইওএম’র কার্যকর ভূমিকা আশা করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২৪ প্রকাশ করেছে। ২০০০ সাল থেকে দ্বিবার্ষিকভাবে প্রকাশ হয়ে আসা এই আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন এবারই প্রথম তাদের সদর...

মহামারী মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও সাড়াদানে উচ্চ-পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অপরিহার্য : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা স্থাপন, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা পদক্ষেপে আস্থা তৈরি এবং চুড়ান্ত পর্যায়ে জীবন বাঁচাতে মহামারী মোকাবেলায় প্রস্তুতি এবং সাড়া প্রদানের জন্য উচ্চ...

সর্বশেষ

বিশ্বমানের পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলাই আমার প্রধান লক্ষ্য : সিডিএ’র চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ...

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও বৈশ্বিক অভিবাসন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আইওএম’র কার্যকর ভূমিকা আশা করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২৪ প্রকাশ...

মহামারী মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও সাড়াদানে উচ্চ-পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অপরিহার্য : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা স্থাপন, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা পদক্ষেপে...

উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিবেচনা করুন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে দেশের...

২ ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় বাংলাদেশের

দুই ম্যাচ হাতে রেখেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিত...

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবক্ষেত্রে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে :ওমর হাজ্জাজ

দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি ও কাস্টম,...