চট্টগ্রামের রাউজানের কলেজছাত্র হৃদয়কে ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করেন উচিং থোয়াই মারমা। হৃদয়ের দুই পা চেপে ধরে জবাই করতে সহযোগিতা করেন ক্যাসাই অং চৌধুরী।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে হত্যার পর হৃদয়ের মরদেহ প্রথমে পাহাড়ের চূড়ায় কলা পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে দেয়। পরদিন সকালে আসামি উচিংথোয়াই মারমাসহ অন্য খুনিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে হত্যাকাণ্ডের আলামত ধ্বংস করার জন্য হৃদয়ের লাশের শরীর থেকে মাংস কেটে আলাদা করে ফেলে দেয় এবং হাড়গোড় গহীন পাহাড়ের জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে চলে আসে।
হৃদয়ে হত্যার মূলহোতা উচিংথোয়াই মারমা ও সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞেসাবাদে র্যাবের কাছে হত্যাকণ্ডের এমন লোমহর্ষক স্বীকারোক্তি দেন তারা।
রোববার (১ অক্টোবর) নগরীর চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম।
তিনি বলেন, পরিবারের বাড়তি আয়ের জন্য নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি নিহত কলেজছাত্র শিবলি সাদিক হৃদয় স্থানীয় রাউজান থানাধীন কদলপুর ইউপিস্থ সিকদার পাড়ার একটি মুরগির খামারে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতো। খামারের কাজ নিয়ে খামারে কর্মরত ৫/৭ জন অন্যান্য সহযোগী কর্মচারী বন্ধুদের সঙ্গে ভিকটিম হৃদয়ের বিভিন্ন সময় বাক-বিতণ্ডা হত। এ ব্যাপারে খামারের মালিকগণ তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিলেও তারা হৃদয়কে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আসামি উমংচিং মারমা গত ২৮ আগস্ট হৃদয়কে ফোন করে রাস্তায় আসতে বলে। তখন হৃদয় রাস্তায় আসলে আসামিরা জোর করে সিএনজিতে তুলে নেয়; এসময় নিহত হৃদয় চিৎকার করলে মুখে গামছা বেধে রাঙ্গুনিয়ার একটি উঁচু পাহাড়ের সেগুন বাগানে নিয়ে যায়।
পরে উমংচিং মারমার ব্যবহৃত ফোন হৃদয়কে দিয়ে তার বাবার নিকট ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে দর কষাকষির একপর্যায়ে অপহরণকারীরা ২ লাখ টাকার বিনিময়ে অপহৃত ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়। গত ১ সেপ্টেম্বর হৃদয়ের বাবা ও নানা মুক্তিপণের ২ লাখ টাকা বান্দরবানে গিয়ে অপহণকারীদের দিলেও তারা ছেলেকে ফেরত দেয়নি। এরপর ছেলেকে ফেরত না পেয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর হৃদয়ের মা বাদী হয়ে রাউজান থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে রাউজান থানা পুলিশ অপহরণের ঘটনায় সুইচিংমং মারমা ও অংথুইমং মারমা নামে দুজনকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার দুজন আসামি উমংচিং মারমার নেতৃত্বে অপহরণ, হত্যা, আলামত ধ্বংস করার জন্য লাশ গুম এবং মুক্তিপণ আদায় করে বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দেন। ঘটনাটি প্রথমে অপহরণ মামলা হলেও পরে আদালতে দেওয়া জবানবন্দী অনুযায়ী হৃদয়কে হত্যার বিষয়টি উদঘাটিত হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক অপহরণ মামলার ধারার সঙ্গে হত্যা মামলার ধারা সংযোজন করার জন্য আদালতে আবেদন করেন।
লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, অপহরণ ও হত্যা পরবর্তীতে লাশ বহু খন্ডিত করে গুমের মামলায় বাকি আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব ব্যাপক গোয়েন্দা নজরধারী, ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। এ পর্যায়ে হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান ও হৃদয়কে নৃশংসভাবে জবাইকারী উচিংথোয়াই মারমাকে (২৩) পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত শনিবার বিকেলে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের হত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ক্যাসাই অং চৌধুরীকে (৩৬) একই দিন কর্ণফুলীর নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি বলন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রথমে অপহরণ, পরে হত্যা ও লাশ গুমের নৃশংস ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন।