নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারে ঘুমন্ত স্ত্রী ও ৬ বছরের সৎ কন্যাকে এসিড মেরে ঝলসে দেয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান আসামী খোকনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১১।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২৩ জুন তারিখ রাত অনুমান ২০.২০ টার সময় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ঘুমন্ত মা ও শিশুর উপর এসিড নিক্ষেপের মতো একটি নৃশংস ঘটনা ঘটে। যা নারায়ণগঞ্জ সহ সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। উক্ত ঘটনার এজাহার বিশ্লেষণে জানা যায় যে, ভিকটিম মোর্শেদার (২২) ১ম স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার পর তার কন্যা সন্তান অপর ভিকটিম মারিয়া (৬) সহ মোর্শেদার মায়ের বাড়িতে বসবাস করত।
গত ৫ মাস পূর্বে মোর্শেদার সাথে অত্র মামলার প্রধান অভিযুক্ত খোকন (৫৫), পিতা- মৃত আনসর আলী, সাং- গায়েনপাড়া, গোপালদী পৌরসভা, থানা- আড়াইহাজার, জেলা- নারায়াণগঞ্জ এর ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে হয়।
উল্লেখ্য যে, গ্রেপ্তার আসামীর এটি তৃতীয় বিয়ে। বিয়ের পর থেকে শিশু মারিয়াকে তার নানির বাড়িতে রেখে আসার জন্য চাপ দেয় মোর্শেদার স্বামী। এতে রাজি না হওয়ায় মোর্শেদার স্বামী তাকে প্রায়ই নির্যাতন করত। এরই জের ধরে বিয়ের ৩ মাস পর স্বামী খোকন (৫৫) মোর্শেদাকে মারপিট করে তার মায়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
মায়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার পর থেকে মোর্শেদা তার সন্তান মারিয়া সহ তার মায়ের বাড়িতে বসবাস করত। গত ২৩ জুন রাতে মোর্শেদা তার সন্তান মারিয়া সহ নিজ শয়ণকক্ষে শুয়ে থাকাবস্থায় গ্রেফতারকৃত আসামী খোকন (৫৫) তার সঙ্গীয় অজ্ঞাতনামা আরও ৩/৪ জন আসামীকে নিয়ে তার স্ত্রী ও শিশু মারিয়ার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে ভিকটিমদ্বয়ের মুখমন্ডল বিকৃত করার হীন উদ্দেশ্যে উক্ত তারিখ রাত অনুমান ২০.২০ ঘটিকার সময় ভিকটিমদ্বয়ের শয়ণকক্ষের খোলা জানালার নিকট উপস্থিত হয়। তখন তাদের উপস্থিতির শব্দে ভিকটিম মোর্শেদা জানালার দিকে তাকিয়ে ঘরের বৈদ্যুতিক আলোতে গ্রেফতারকৃত আসামী সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন আসামীদের দেখে চিৎকার দিলে, গ্রেফতারকৃত আসামী খোকন তার হাতে থাকা সিরিঞ্জ দিয়ে জানালার পাশ হতে ভিকটিম মোর্শেদার ডান পায়ের উরুতে ও ভিকটিম এর কন্যা সন্তান মারিয়ার মুখে নৃশংসভাবে এসিড নিক্ষেপ করে ঝলসে দেয়। তখন তাদের আর্ত-চিৎকারে মোর্শেদার মা সহ আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে, মোর্শেদা জানায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী খোকন (৫৫) তার সঙ্গীয় অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন আসামীদের সহায়তায় তাদেরকে এসিড নিক্ষেপ করেছে। উক্ত বিষয়ে অবগত হয়ে ভিকটিমদ্বয়ের পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় তাদেরকে জখমপ্রাপ্ত অবস্থায় আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করলে ভিকটিমদ্বয়কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। বর্তমানে তারা উক্ত হাসপাতালে আশংকাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছ। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে ভিকটিমের মা সাহেদা বেগম (৬৫) বাদী হয়ে গত ০৪ জুলাই ২০২৩ তারিখে এসিড অপরাধ দমন আইন ২০০২ এর ৫(ক)/৫(খ)/৭ ধারায় আড়াইহাজার থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন।
পাশবিক এই ঘটনা সংক্রান্তে র্যাব-১১, সদর কোম্পানি এর গোয়েন্দা টীম যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে ছায়া তদন্ত শুরু করে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পলাতক প্রধান আসামী খোকনকে সনাক্ত ও তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে অদ্য বুধবার দিবাগত রাত ২.৩০ টায় সময় কুমিল্লা জেলার তিতাস থানাধীন রায়পুর পুরান বাতাকান্দি এলাকা হতে আসামী’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেপ্তার আসামী’কে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।