এ এক অভাবনীয় দৃশ্য ছিলো।কিছুদিন আগেও যাঁরা প্রেসিডেন্ট আসাদকে কসাই বলে অবিহিত করতেন সেই তাঁরাই আজ উষ্ণ অভ্যর্থনা ও পরম আন্তরিকতায় তাঁকে বরণ করে নিলেন আরব লীগে।ব্যক্তিগতভাবে বুকে জড়িয়ে নিলেন। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস), যিনি সৌদি আরবের প্রকৃত শাসক, বৈঠক শুরুর আগে তাদের আনুষ্ঠানিক ছবি তোলার আগে আল-আসাদকে দেখেই তাঁকে জড়িয়ে ধরেন।কিছুদিন আগেও এমন দৃশ্য কল্পনার অতীত ছিলো।
প্রধান হলে প্রবেশ করার সময়,আল-আসাদ মিশরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি সহ অন্যান্যদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।উপস্থিত সকল আরব রাষ্ট্র প্রধানই বেশ আন্তরিক ও উচ্ছ্বসিত ছিলেন এসময়। আলজেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী আয়মান বেনাবদেররহমানে শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় বলেছেন,আমি জোরে জোরে সিরিয়াকে তথা আমাদের ভাইদের তার আসনে ফিরে আসায় স্বাগত জানাতে চাই। ২০১১সালে সরকার বিরোধী বিক্ষোভের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউনের জন্য তার দেশ তথা সিরিয়াকে আরব লীগের সদস্যপদের উপর স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছিল।দীর্ঘ এক যুগ পর সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাসার আল আসাদ আজই প্রথম আঞ্চলিক ব্লকের এই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন।
সৌদি আরবের বন্দর শহর জেদ্দায় আজ আরব লীগের এই শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। আরব লীগে আসাদ তথা সিরিয়াকে ফিরিয়ে নেওয়া বিশ্ব রাজনীতির চলমান প্রেক্ষাপটে বিশেষ ইঙ্গিতবাহী বলে মন্তব্য আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের।বিশ্লেষকরা বলেছেন যে ২২ সদস্যের আরব লীগে সিরিয়ার পুনরায় যোগদান একটি শক্তিশালী সংকেত যে, আল-আসাদের বিচ্ছিন্নতা শেষ হচ্ছে।আঞ্চলিক রাষ্ট্রনেতারা তার সরকারের বেঁচে থাকার বাস্তবতাকে স্বীকার করে পশ্চিমাদের বিশেষ বার্তা দিলেন। যদিও কিছু আরব রাষ্ট্র আল-আসাদের বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটাতে আন্তরিক ভাবে সচেষ্ট ছিলোএবং এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।অন্য কয়েকটি আরব দেশ সিরিয়ার সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধান ছাড়াই সম্পূর্ণ স্বাভাবিককরণের বিরোধিতা করেছে এবং তাঁরা চেয়েছিলো সিরিয়ার প্রত্যাবর্তনের জন্য কিছু শর্ত দেওয়া হোক।
যদিও আপাততঃ কোন শর্তারোপের খবর পাওয়া যায়নি। আসাদ তার বক্তৃতায় বলেন যে এই শীর্ষ সম্মেলনটি আরব অঞ্চলজুড়ে সংকট মোকাবেলার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ।আশা করি যে এটি আমাদের মধ্যে সংহতি, আমাদের অঞ্চলে শান্তি, যুদ্ধ ও ধ্বংসের পরিবর্তে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য আরব পদক্ষেপের একটি নতুন পর্বের সূচনা করবে। আসলে গত কয়েকদিনের মধ্যে আরব অঞ্চলের রাজনীতিতে এমন অভাবনীয় কিছু ঘটেছে যা বিশ্বকে তাঁদের দিকে তাকাতে বাধ্য করেছে।বলাই বাহুল্য এই সবকিছুর নেতৃত্ব দিচ্ছে তেল পাওয়ার হাউস সৌদি আরব।একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত হয়ে তাঁরা অনেক চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নিতো।আজ তাঁরা সেই প্রভাব কাটিয়ে উঠে আরব বিশ্বে কূটনৈতিক নেতৃত্ব দিচ্ছে।ইরানের সাথে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে, সিরিয়াকে আবার আরবলীগে স্বাগত জানিয়েছে এবং সুদান সংঘাত থামাতে সফল মধ্যস্থতা করেছে। সূত্র:-রয়টার্স ও আল জাজিরা