
জব্বারের বলিখেলা এলেই স্মৃতিপটে অনেক ছবিই ভেসে আসে। মেলা বলতে তখন এই জব্বারের বলিখেলাই ছিলো শুধু। বৈশাখ মাসের ১২তারিখ জব্বারের এই বলী খেলাকে ঘিরেই চট্টগ্রামে উৎসব চলতো।
যখন ছোট ছিলাম তখন উঠোনে মাদুর বিছায়ে খেলনা দিয়ে ঘর বানাতাম। ছোট ছোট মাটির হাঁড়িপাঁতিল দিয়ে সংসার গড়তাম। তখন কত সখই না ছিলো এ’সবে। কী বুঝতাম জানিনা। পরিপাটি করেই খেলাগুলো খেলতাম। একপাশে মেলা থেকে আনা খড়ম রাখা হতো। এখন আর খড়ম দেখতে পাই না। হাঁটার সময়ে খড়মের শব্দটা অদ্ভুত লাগতো।
বড় হতে হতে খেলার ধরণ পাল্টে গেলো।
তবে এই জব্বারের মেলা এলে শৈশব স্মৃতিতে ডুব দিই। মেলা চলাকালীন বউঝিয়েরা নাইওর আসতো বাড়িতে । ছোটদের ঈদের সেলামীর মতো বকশিস দিতো বড়রা। কাকডাকা ভোরে বউঝিয়েরা মেলায় যেতো দল বেঁধে। আমাদের বাড়ি থেকে মেলা খুব কাছেই। হেঁটেই যাওয়া হতো। দলবেঁধে সকলেই আনন্দ নিয়ে বছরের ডালাকুলা, বাঁশবেতের তৈজসপত্র, ফুলেরঝাড়ু সবার হাতে থাকতো, হাতপাখা, মাটির কালো কলসি, সরাই, মটকা এসব বাড়িতে হাজির হতো। সংসারের যাবতীয় সব জিনিস এই মেলায় পাওয়া যায়। সারাদিনই হৈ-হুল্লোড় হতো শহরের বাড়িগুলোতে। আড্ডা চলতো নাইওরিদের। এই মেলা ছিল শহরবাসীর উৎসব।
আমার দাদা মেলা থেকে ঝুড়িভর্তি করে মাটির খেলনাপাতি নিয়ে আসতো। দাদা,দাদি মিলে ভাগ করে দিতো সবাইকে।
চারিদিক থেকে টমটম গাড়ির শব্দে বড়দের ভাতঘুম ছুটে যেতো।
পাতাদিয়ে বানানো তালপাতার সেপাইটাকে নাড়তে খুব ভালো লাগতো আমার। যেমন ইচ্ছে তেমন করা যেতো। হাত একবার উপরে উঠছে তো আবার নিচেও নামছে। বেশ মজার খেলা ছিলো। কাঁঠের এক ধরনের গাড়ি তার মাথার উপর কাটের রঙিন নকশা করা চাকা ,গাড়ি চালালেই রঙিন চাকাটা ঘুড়তো। দেখতে দারুণ লাগতো। সুন্দর ছিলো সেই সময় ।
তখন স্বাধীনতার শব্দটার সাথে পরিচিত ছিলাম না। বুঝতাম না। সেই সময়টাই ইচ্ছের ডানা মেলে উড়েঘুরে বেড়াতে পারতাম যখন তখন। এখন কিন্তু বেশ বুঝতে পারি।
যেদিন ফ্রক ছেড়ে ওড়না পড়া শুরু করেছি সেদিন থেকে ডানায় একটা অদৃশ্য শেকল লাগিয়ে দেয়া হয়েছে বাড়ন্ত বয়সের সাথে সাথে। তারও আবার দায় বাড়ে, বাড়ে টানও। অথচ এখনো মন সেই বয়সে পড়ে থাকে যখন তখন।
বড়মন মাঝে মাঝে শিশুমন হতে চায় / আমরা কেউ কেউ বুঝি, কেউ খুঁজি তার ছাই।