সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলায় দুবাইয়ে পলাতক রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে সেখানকার পুলিশ আটক করেছে বলে খবর মিলেছে। গত সোমবার রাতে দুবাইয়ের একটি ফ্ল্যাট থেকে তাকে আটক করা হয়। ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির পরই দুবাই পুলিশের এনসিবি শাখা আরাভকে আটকের তৎপরতা শুরু করে। শেষ পর্যন্ত তাকে ধরার বিষয়টি পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ মন্তব্য করতে চাননি।
সূত্র জানায়, আরাভকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও পুলিশ সদর দপ্তরের একটি যৌথ দল দুবাই যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। আগামী দুয়েকদিনের মধ্যেই তারা দুবাই যেতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গত সপ্তাহে এক জাঁকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আরাভ জুয়েলাসের উদ্বোধন করার পর আলোচনায় আসে জুয়েলাসের মালিক আরাভ খান। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদন জগতের অনেক তারকাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দিয়েছিলেন আরাভ খান। তখনই তাকে পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার আসামি বলে শনাক্ত করে ফেলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।
গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যমতে, আরাভ জুয়েলার্স নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আরাভ খানের আসল নাম রবিউল ইসলাম। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তার বাড়ি। তিনি সোহাগ মোল্লা, হৃদয় শেখ, আপন এরকম কয়েকটি নামে পরিচিত। ২০১৮ সালের ৭ জুলাই ঢাকায় পুলিশের পরিদর্শক মামুন এমরান খান খুন হন। সেই খুনের আসামি হয়ে দেশ থেকে পালিয়েছিলেন রবিউল ওরফে আরাভ।
মামলা ও নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বিত্তশালীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়া একটি চক্রের কবলে পড়েন পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান। এরপর তাকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পেট্রোল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরের জঙ্গলে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, ওই খুনের ঘটনার পরে অন্য আসামিদের সঙ্গে আরাভকে আটক করেছিল ডিবি। ডিবির কার্যালয়ে দুদিন রাখার পর তাকে পুলিশের এক পদস্থ কর্তার অনুরোধে ছেড়ে দেয়া হয়। চার দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে দেশের একাধিক গণমাধ্যম এসব তথ্য প্রকাশ করছে।
এরপরই মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গত সোমবার এ বিষয়ে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, ‘আরাভ খানের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য ইন্টারপোলসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ শুরু করেছি। আমি কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছি, তার নামে আমরা যে চার্জশিট দিয়েছি, ওই নামে রেড নোটিশ জারির একটা বিষয় (আবেদন) দিয়েছি, এটা বোধহয় ইন্টারপোল গ্রহণ করেছে, এ রকম একটা খবর আমি পেয়েছি। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। কীভাবে কাজ করছি, সেটা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাচ্ছি না তদন্তের স্বার্থে।’
দুবাইতে আরাভ খানকে আটকের খবরের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখার এআইজি শরীফ মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি এআইজি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এআইজি মিডিয়া মনজুর হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা এখনো এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাইনি।’