গতকাল রবিার দিনব্যাপী বড় দিনের উৎসবে মেতেছে বান্দরবানের লামা উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি পল্লীর খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীরা। পাপমুক্তি, মঙ্গল ও করুণা কামনা এবং বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়েছে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন। গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বিরাজ করেছে সাজ সাজ রব। একই সাথে বর্ণিল রংয়ে সাজানো হয় পল্লীর র্গীজাগুলো। ২৫ ডিসেম্বর রবিবার বড়দিন হলেও, মূলত এর আগের দিন শনিবার রাতে স্ব স্ব গীর্জায় প্রার্থনার মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হয় এ উৎসবের। এ রাতে বাড়ী বাড়ী চলে র্কীর্তন। বড়দিনের সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে গীর্জায় চলে পুজারীদের বিশেষ প্রার্থনা পর্ব। যথাযথভাবে দিনটি পালনের জন্য গীর্জাগুলোতে সরকারীভাবে আর্থিক অনুদানও প্রদান করে উপজেলা প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লামা উপজেলায় গজালিয়া ইউনিয়নের মানিকজন ত্রিপুরা পাড়া ও আকিরাম ত্রিপুরা পাড়া, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কাঁঠালছড়া ত্রিপুরা পাড়া ও গুলিস্তান মিশন পাড়া, ফাইতং ইউনিয়নের কামাইজ্জারঝিরি ও বমুবিলছড়িসহ ৭৫টি খ্রীষ্ট ধর্মীয় গীর্জা রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় এসব গীর্জায় উপাসনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হওয়া উপাসনা চলে রবিবার দিনগত গভীর রাত পর্যন্ত। এদিনের শুরুতেই বিশেষ প্রার্থনায় মঙ্গলবাণী পাঠের মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধি এবং জগতের সব মানুষের মঙ্গল কামনা করা হয়। এরপর একে অন্যের ঘরে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খ্রিস্ট ধর্মালম্বীরা। পাড়ার ঘরে ঘরে রান্না করা হয় সুস্বাদু খাবার। সন্ধ্যায় চার্চে আবারো উপাসনার জন্য স্ব স্ব গীর্জায় জড়ো হয় খ্রীষ্ট ধর্মালম্বীরা। সবশেষে রাতে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাপ্তি হবে বড় দিনের। এ অনুষ্ঠানে খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহনকারী ত্রিপুরাদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী নাচ-গানের আয়োজন করা হয়। খ্রীষ্টান কবরস্থানগুলোতে মোমবাতি প্রজ্বলণ করেন স্বজনরা। কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানান একে অপরকে। বড়দিন উপলক্ষে আগের দিন শিশুরা পায় বিশেষ উপহার।
রবিবার সকালে গজালিয়া ইউনিয়নের মানিকজন ত্রিপুরা পাড়ার সাধু পিতরের ক্যাথলিক গীর্জায় গিয়ে দেখা যায়, বর্নিল সাজে সাজানো হয়েছে গীর্জার ভিতর-বাহির। সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি, রয়েছে প্রতিকী গোশালা। দূর-দূরান্ত থেকে খ্রীষ্ট ধর্মালম্বী প্রায় দেড় শতাধিক সব বয়সী নারী-পুরুষ সকালে গীর্জায় উপস্থিত হয়ে প্রার্থণায় অংশ গ্রহন করে। এ উপলক্ষে পাড়ায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, নির্বাহী অফিসার মো. মোস্তফা জাবেদ কায়সার।
এ গীর্জায় প্রার্থনায় অংশগ্রহনকারী খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সজরাম ত্রিপুরা বলেন, বড়দিন সবার জন্যই আনন্দের একটি দিন। যিশুর কাছে সব মানুষের জন্য শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করেছি। তিনি আরও বলেন, যিশুখ্রিষ্ট এদিন জগতে আসার মধ্য দিয়ে ২৫ ডিসেম্বরকে মহৎ করেছেন বা ‘বড়’ করেছেন। ‘বড়দিন’ তাই বিশ্বাস-ভালোবাসা ও ক্ষমার চেতনায় ‘বড়’ হওয়ার দিন বলে মনে করা হয়। বড়দিন উপলক্ষে উপজেলার সবক’টি খ্রীষ্টান পল্লীর সর্বস্থরের মানুষ ভাবগর্ম্বীর চেতনায় পালন করে। আকিরাম ত্রিপুরা পাড়া গীর্জার পালক জানান, এদিন বেথলেহেমের এক গোশালায় মাতা মেরির গর্ভ হতে ভূমিষ্ট হন যিশুখ্রিস্ট। পৃথিবীবাসীর জন্য শান্তির বাণী নিয়ে আসেন তিনি। যিশুর আগমনে পাপমুক্ত হয় বিশ্বের মানুষ। সব ধরনের পাপ-তাপ জরা থেকে বিশ্ববাসী যেন শান্তিতে থাকে, সেজন্য প্রার্থনা করা হয়েছে।
এদিকে, বমু বিলছড়ি ব্যপ্টিষ্ট্স চার্চে’র পরিচালক সুভাষ ত্রিপুরা বলেন, ২০১৫ বছর আগে ২৫ ডিসেম্বর বেথলেহেমের গোয়ালঘরে যিশু খ্রিষ্টের জন্ম। জন্মের দিনটিকে বড়দিন হিসেবে উপলক্ষ করে বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়। একইভাবে বমুবিলছড়ি ব্যাপ্টিষ্টস চার্চে প্রতিবছর ব্যাপক আয়োজনে নানা অনুষ্টানের মাধ্যমে বড়দিন পালন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, উৎসবের আমেজে বড়দিন পালনের জন্য উপজেলার খ্রীষ্টান পল্লী গুলোতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর বাড়ানো হয়েছিল। এতে পুজারীরা নিবিঘেœ দিবসটি পালন করেছেন। কোন ধরনের অপ্রিতীকর ঘটনা ঘটেনি।