বশির আলমামুন
গত দুই দিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় আকস্মিক বন্যা নেমে এসছে। ঝর ও বানের পানিতে প্লাবিত হয়েছে দুই জেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল । এ শঙ্কার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। একইসঙ্গে চকরিয়ার মাতামহুরী ও বান্দরবানে সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলেও জানিয়েছে সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বুধবার (২৮ জুলাই) দুপুরে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর অবস্থার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারত আবহাওয়া অধিদফতরের গাণিতিক মডেলের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অববাহিকা এবং দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকাগুলোতে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। ফলে এ সময় দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকার এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অববাহিকার নদীগুলোর পানি সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার কয়েক স্থানে আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মাতামুহুরী নদীর পানি বান্দরবানের লামা বাজারের বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় টেকনাফে ৩২৮, লামায় ১৩২, চট্টগ্রামে ৬৮, পটুয়াখালীতে ২৫২, কক্সবাজারে ১১৫, বরগুনায় ২৫০, নোয়াখালীতে ৫২, সাতক্ষীরায় ৭০ ও হরিদাশপুরে ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
এদিকে সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার তিন দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানি মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানি নদীর দুইকূল উপচিয়ে চকরিয়া পৌর এলাকাসহ গ্রামীন এলাকায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে ঢলের পানি। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে রাতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা। টানা বৃষ্টির কারনে পাহাড় ধসের আশঙ্কাও করা হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। এই রিপোর্ট লেখার সময় মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মাতামুহুরী নদীর পানি চকরিযার ১৫-২০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করছে বলে স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। তবে এখনো কোন বাড়িতে পানি উঠার খবর পাওয়া যায়নি। এভাবে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে পাহাড়ি পানি নেমে আসতে থাকলে মধ্যরাতের পর গ্রামীন সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়বে বেশ কিছূ গ্রামের লোক।
লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপিত রেজাউল করিম সেলিম বলেন, আমার এলাকায় এখনো বন্যার পানি প্রবেশ করে করেনি। রাতে মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মক্কি ইকবাল বলেন, মাতামুহুরী নদীর পানি ৫টি ওয়ার্ডের কিছুকিছু এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরো এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
চিরিংগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জসীম উদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যে আমার এলাকায় মাতামুহুরী নদীর পানি ডুকতে শুরু করেছে। যেহেতু আমার এলাকায় মৎস্য ঘের বেশি। যদি রাতে ঢলের পািন পুরোদমে ঢুকতে শুরু করে তবে মৎস্য ঘেরের ব্যপাক ক্ষতি হবে।
টানা তিনদিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে কোনাখালী ইউনিয়নের মধ্যম কোনাখালীর বাঁধটি ভেঙ্গে গেছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে রাতে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়া ছাড়া ও পাহাড় ধসের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন জন প্রতিনিধিরা।
জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে পৌরসভার ৫ টি ওয়ার্ডসহ ৮টি ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল প্রাবিত হয়েছে। এরমধ্যে সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, কোনাখালী ও ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। নতুন নতুন এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে বুধবার বিকাল ৫টার দিকে বন্যার পানি বাড়ার কারণে ১৫-২০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। ঘর বাড়িতে পানি প্রবেশ না করলেও অভ্যন্তরিণ রাস্তা গুলোতে ১ থেকে ২ ফুট পানির নিচে রয়েছে। ফলে যোগাযোগ ক্ষেত্রে মারাত্মক দূর্ভোগে পড়েছে এলাকাবাসী। পানিবন্দি হয়ে পড়বে বেশকিছু গ্রামের লোক। উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে বন্যার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় তারা বিভিন্ন ইউনিয়নের জন প্রতিনিধির মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছেন। ঢলের কারণে সমস্যা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, হালকাকারাসহ পৌরসভার ৯টি ওয়াডের ৫টি ওয়ার্ডে পানির প্রবেশ করেছে। বিশেষ করে ১নং ওয়ার্ডের কাজীরপাড়া এলাকার নদীর কিছু অংশ ভাঙ্গলেও সর্তক রয়েছি। বড়ধরণের ভাঙ্গন রোধে বালির বস্তা ফেলার কথা জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, টানা বৃষ্টি ও মাতামুহুরীর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন ইউনিয়নের জন প্রতিনিধির মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছি। এছাড়াও পাহাড়ে বসবাসরতদের সরিয়ে আনার জন্যও কাজ করছি।