সিন্ডিকেট কারসাজিতে চট্টগ্রামে সর্ব নিম্নদরে কোরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি: সংগ্রহ দুই লাখ

  |  রবিবার, জুলাই ২৫, ২০২১ |  ৪:২৯ পূর্বাহ্ণ
       

বশির আলমামুন
প্রশাসনের যথাযথ তদারকির না থাকায় এবং সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে বড় ধরনের দর পতন ঘটেছে। বড় গরু হলেও শেষ পর্যন্ত গরুর চামড়া প্রতি পিস মাত্র ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও ছাগলের চামড়া ছিল একেবারে মূল্যহীন। বুধবার (২১ জুলাই) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরে ও জেলার রাস্তার পাশে পড়ে ছিল শত শত পিস অবিক্রিত কোরবানির পশুর চামড়া। অবশ্য শুরুর দিকে গরুর চামড়া ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ এবং ছাগলের চামড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে চামড়ার দাম ততই নিম্নমুখী হয়েছে। শেষে ক্রেতা না পেয়ে গরুর চামড়া ১২০ থেকে ১০০ এবং ছাগলের চামড়া বিনামূল্যে দিতে বাধ্য হন বিক্রেতারা।
চামড়ার দরের এই পতনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে গ্রামের পাড়া ও শহরের মহল্লা থেকে চামড়া কেনা তরুণদের। মূলত সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দুষছেন তারা। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরাই প্রকৃত আড়তদারদের চামড়া কিনতে মাঠে নামতে দেয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
এবার ঈদুল আজহায় চট্টগ্রামে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ৩ লাখ। এখনও সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি বলে জানান আড়তদাররা। তারা বলছেন, কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেছেন। অনেকে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করে রেখেছেন পরে বিক্রির আশায়। দেশে যদিও চামড়ার বাজার ভালো এবং চাহিদাও আছে, কিন্তু চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে এমন অনিয়ম চোখে পড়ে সবার। অনেকেই এজন্য কর্তৃপক্ষকে দুষছেন। তাদের মতে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে না পারলে এই অনিয়ম দূর হবে না।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে এখনও আসছে কোরবানির পশুর চামড়া। চামড়া সংরক্ষণের জন্য আতুরার ডিপু এলাকায় এবং আগ্রাবাদের চৌমুহনী এলাকায় দুটি আড়তে ব্যস্ত সময় পার করছেন আড়তদার ও শ্রমিকরা।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, আড়তে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারও (২২ জুলাই) অনেকে কোরবান দিয়েছেন। তাই আরও কিছু চামড়া আসতে পারে। অনেকে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করে রেখেছেন, কিন্তু আড়তে পাঠাননি। বিভিন্ন উপজেলা থেকে এখনও চামড়া আসছে। দুয়েকদিন পর ঢাকায় ট্যানারিগুলোতে চামড়া পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
আতুরার ডিপোর আড়ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাটহাজারী–মুরাদপুর সড়কে চামড়ার স্তুপ। আড়তে চামড়া পরিষ্কার করে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখছেন শ্রমিকরা। আড়তদাররা ব্যস্ত চামড়া কেনায়।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির অধীনে ১১২ জন আড়তদার ছাড়াও প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ী চামড়া সংরক্ষণ কাজে জড়িত। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়া কিনতে হবে ৩৩ টাকা থেকে ৩৭ টাকায়। যা গতবছর ২৮ থেকে ৩২ টাকা ছিল। এছাড়া লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা, আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতবছর খাসির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ১০ থেকে ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার।
মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ন্যায্য দামে আড়তদারের কাছে তারা চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। আগ্রাবাদের ব্যবসায়ী মায়মুন হাসান বলেন, ৩০০ টাকায় চামড়া কিনে বিক্রি করতে হয়েছে ২৭০ টাকায়।
তবে আড়তদারদের দাবি, তারা বড় চামড়া কিনছেন ৪০০-৫০০ টাকা, ছোট চামড়া ২০০-৩০০ টাকায়। প্রতি ফুট চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ১০-১২ টাকা এবং সঙ্গে আছে পরিবহন খরচ। শ্রমিকদের দিতে হয় বাড়তি টাকা। এই হিসেব না করে বেশি দামে চামড়া কিনলে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেই।
গত দুই বছরে চট্টগ্রামের কয়েকজন আড়তদারের প্রায় ২৫ কোটি টাকা ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে আটকা পড়েছে বলে জানিয়েছেন কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির এক নেতা। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত ট্যানারি না থাকায় ঢাকার ট্যানারি মালিকরা তাদের ইচ্ছেমতো দর নির্ধারণ করে দেয়। দুই বছর আগে কোরবানির চামড়া বিক্রির সব টাকা এখনও পাননি অনেক আড়তদার।
চট্টগ্রামে ২২টি ট্যানারির মধ্যে এখন টিকে আছে রিফ লেদার। এবছর ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ বর্গফুট চামড়া কোরবানি কেন্দ্রিক জবাই করা পশু থেকে সংগ্রহ করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় বিভাগের পরিচালক মোখলেছুর রহমান।
তিনি বলেন, প্রতিবছরই আমাদের একটি লক্ষ্যমাত্রা থাকে। সে অনুযায়ী আমরা চামড়া সংগ্রহ করে থাকি। চট্টগ্রামে একমাত্র ট্যানারি হিসেবে আমরা এখনও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। গত কয়েকবছর ধরে বিপুল পরিমাণ চামড়া নষ্ট হচ্ছে, তা রোধ করা জরুরি।