শামীম ওসমান মানে দলীয় নেতাকর্মী সমর্থকদের কাছে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা।যাঁর ডাকে পুরো নারায়ণগন্জ জেলার নেতাকর্মী সমর্থকরা নিজেদের তাগিদে চলে আসেন সমাবেশে।তাইতো শামীম ওসমান এর সমাবেশ হয়ে ওঠে লাখো মানুষের সমুদ্র।আজ ১৬ ই সেপ্টেম্বর শনিবার আরেকবার সেই জনসমুদ্র দেখলো নারায়ণগঞ্জবাসী ও পুরো বাংলাদেশ। “বীর বাঙালী ঐক্য গড়ো,বাংলাদেশ রক্ষা করো” শ্লোগানকে থিম করে আয়োজিত আজকের জনসভাকে ঘিরে বেশ ক’দিন ধরেই আলোচনা চলছিলো বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

শহরের ২নং রেলগেইটস্থ জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত আজকের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।জেলার প্রায় সকল শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উপস্থিত থাকলেও প্রধান অতিথি ও সভায় সভাপতিত্ব করা শামীম ওসমান ছাড়া বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল হাই,সাধারণ সম্পাদক
আবু হাসনাত শহিদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু চন্দন শীল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজের বক্তৃতায় সরকারের নানাবিধ অর্জনের কথা ও ষ্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহনের আহবান জানান।বিশাল জনসমুদ্র দেখে তিনি শামীম ওসমান এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। সাধারনতঃ প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষ হলেই সভাস্থল ফাঁকা হতে শুরু করে।কিন্তু আজকের সমাবেশে ছিলো আশ্চর্য ব্যতিক্রম।উপস্থিত নেতাকর্মী সমর্থকরা তাঁদের প্রিয় নেতার বক্তব্য শুনতে উদগ্রীব ছিলেন।সন্চালক এহসানুল হক নিপু শামীম ওসমান এর নাম ঘোষনা করতেই স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো জনসমুদ্র।সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য ছিলো। নিজের স্বভাব সূলভ বক্তব্যে শামীম ওসমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, মাননীয় স্বরাষ্টমন্ত্রী, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে ওঁরা (বিএনপি) হুঙ্কার দেয়। আর সহ্য করবো না।প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের পদ ছেড়ে দিবো।দলের কোন পেস্টে থাকবো না।আমাদেরকে তাঁরা গালি দেন,যারা আমাদের মেরেছেন,গত ১৪ বছরে তাদের গায়ে ফুলের টোকা দেই নাই।কিন্তু শেখ হাসিনাকে নিয়ে,জাতির পিতাকে নিয়ে যে অশ্লীল ভাষায় নারায়ণগঞ্জে গালি দিচ্ছে,আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।সবচেয়ে সভ্য কথা যেটা বলে ওঁরা সেটাও জঘন্য।প্রেসক্লাবের সামনে ওঁরা বলে,হরে কৃষ্ণ হরে রাম,শেখ হাসিনার বাপের নাম।বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান যার নামে আল্লাহর একটা নামের রহমান আছে।একদিকে মুসলমানের মনে আঘাত করলো অন্যদিকে হিন্দুদের ভগবান হচ্ছে হরে কৃষ্ণ। ওরা কত বড় সাম্প্রদায়িক।এক সঙ্গে দুটি ধর্মকে গালি দিলো।তিনি বলেন,এনাফ ইজ এনাফ।আজ থেকে কেউ বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের মাটিতে কেউ কটুক্তি করার ধৃষ্টতা দেখালে তাঁর দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। শামীম ওসমান বলেন, আমাদেরকে মারলে কারো কাছে বিচার দিবো না। আমাদের পুলিশ দরকার নাই। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে আমাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে কিছু মোশতাক আছে। তারা যদি ভাবেন ভালো থাকবেন, সুখে থাকবেন, আওয়ামীললীগ ক্ষমতায় আসবে কি না। আজকে আমার ভাইয়ের (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) দোয়ায় বলতে চাই। আমি থাকবো কি থাকবো না। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই হবেন ইনশাআল্লাহ। শামীম ওসমান বিরোধী দলের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের মতো শ্লোগান দেন, ভদ্রভাবে রাজনীতি করতে চান করেন। কিন্তু আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে বলছি, আজকের পর থেকে যদি জাতির পিতা কিংবা জাতির পিতার কণ্যাকে নিয়ে কোন অশ্লীল গালি দিয়ে শ্লোগান দেয়া হয়। আমরা কি ছেড়ে দিবো। তখন সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীরা চিৎকার করে বলেন না। তখন শামীম ওসমান বলেন, জনগনের কথা আমাদের শুনতে হবে। জনগন যদি হুকুম দেয় তাহলে আমরা দেখাবো। আমরা কারো সঙ্গে খেলবো না। আমরা ওই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক শক্তি, স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, ধংসের পরিবর্তে উন্নয়নের শক্তি, আমরা এই শক্তি তোমাদের চ্যালেঞ্জ করছি। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা যাবো। কোথায় কখন খেলবো, টাইম দাও। খেলা হবে, ইনশাআল্লাহ। এসময় নেতাকর্মীদের শামীম ওসমান বলে আমরা কি জিতবো। তখন দুই হাত তুলে নেতাকর্মীরা বলেন জিতবো। যখন ডাক দিবো রাস্তায় নামবেন তো। নেতাকর্মীরা হাত তুলে বলেন নামবো। তখন স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীকে শামীম ওসমান বলেন, ভাই আমি থাকবো কি থাকবো না জানি না। আপনি নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মাথায় ছায়া হবে থাকবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাত তুলে সম্মতি দেন। বিকাল তিনটায় সমাবেশ শুরুর সময় ঘোষণা করা হলেও দুইটার পর থেকে একের পর এক বিশাল মিছিল নিয়ে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে নেতাকর্মী সমর্থকরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে শুরু করেন।তিনটার ভেতর ২নং রেলগেইট থেকে চাষাঢ়ামূখী বিবি রোডের কানায় কানায় ভরে ওঠে মানুষে।এমনকি সভা শেষের দিকেও বিশাল মিছিল নিয়ে আসতে দেখা যায়।