বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে প্রভাব শালী মহল । এদিকে মাটি কাটা বন্ধ করতে প্রশাসন বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে জরিমানাসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। প্রশাসনের এসব অভিযান চলমান থাকা পরেও থামানো যাচ্ছে না জমির মাটি কাটা।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৩/৪ ফসলি উর্বর ফসলী জমির উপরিভাগের মাটি যন্ত্র দিয়ে কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাটি ব্যবসায়ীরা। আর্থিকভাবে সামন্য লাভের আশায় কৃষক তাদের জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। সম্প্রতি উপজেলার রাজানগর শিয়ালবুক্কা নামক স্থানে কৃষি জমির উপরি অংশটা কেটে ইট ভাটায় বিক্রির অপরাধে ৩ জনকে ৩ লক্ষ্য টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। এসব অভিযানের পরেও বিভিন্ন জায়গায় গণহারে কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ওইসব এলাকায় অন্তত একরের পর একর কৃষি জমি ৮ ফুট গভীর করে কাটা হয়েছে। মাটি কাটার কাজে তিনটি খননযন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। পূর্বে রাতের আধারে চুরি করে কাটাতো আর এখন জনসম্মুখে দিন দুপুরে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। ফসলি জমি থেকে পাশাপাশি ঠান্ডাছড়ি চা বাগানের পাহার কাটা কাজ শুরু করেছেন। এসব কাজে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ করেছে এলাকার সাধারণ মানুষ। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে রাতের আধারে কৃষি জমি থেকে কয়েকটি এসকেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে। একই অবস্থা দেখা গেছে কাপ্তাই সড়ক সংলগ্ন রাঙ্গুনিয়া কলেজ গেট এলাকায়। অনেকটা দিনদুপুরে ফসলি জমির টপসয়েল কেটে বহুতল ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা হলেও তা বন্ধে কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
একইভাবে উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের সোনারগাঁও এলাকায় স্থাপিত চারটি ইটভাটায় আশেপাশের ফসলি জমি থেকে ২০/৩০ ফুট গভীর করে দিনরাত মাটি কাটা হচ্ছে। এমনকি তাদের গভীর করে ফসলি জমি কেটে নেয়ার ফলে আশেপাশের বসতবাড়ি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয়রা প্রশাসনকে অভিযোগ দিলে কিছুদিন মাটিকাটা বন্ধ রাখা হলেও পরক্ষণেই তাদের এমন কার্যক্রম চলতে থাকে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ ।
এভাবেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকেও কৃষি জমির টপ সয়েল কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল, শিলকের তৈলাভাঙা, লালানগর বিল, লাইগ্যা বিল, রইস্যাবিলসহ উপজেলার অধিকাংশ জমিই উর্বর মাটি সমৃদ্ধ। এ সব জমিতে বছরে দুটি মৌসুমে ধান, সরিষা, শীতকালীন সবজির ব্যাপকভাবে উৎপাদন হয়। কিন্তু কিছু অসাধু মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এ সব জমির টপ সয়েল কিনে নিচ্ছেন। আবার অনেকেই জমির মালিকের সঙ্গে কথা না বলেই টপ সয়েল কেটে বসতঘরের মাটি ভরাটের কাজে ব্যবহার করছেন।
কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, “প্রাকৃতিকভাবে কৃষি জমিতে প্রতি ইঞ্চি টপসয়েল তৈরি হতে সময় লাগে ৫০ থেকে ১০০ বছরের উর্ধ্বে। তাই জমির টপসয়েল ব্যবহার করার কারণে কৃষিতে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এমনিতে নানা স্থাপনার কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমে আসছে। তার উপর এখন যেভাবে টপসয়েল কাটার হিড়িক চলছে তাতে উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাঙ্গুনিয়ার সহকারী কমিশনার ভূম বলেন, “জমির টপসয়েল কেটে নেওয়ার অপরাধে জরিমানা চলমান রয়েছে। তবে এই বিষয়ে বন্ধের প্রক্রিয়া চলছে।